ছৌ-এর তালিমে সামিল ভাগ্যবতীরা
দু-হাত মাটিতে রেখে ওরা শরীরটা ছুঁড়ে দিচ্ছে শূন্যে। চরকির মতো একপাক ঘুরে ফের এসে পড়ছে মাটিতে। একে বলে ‘উলফা’। পুরুলিয়ার ছৌ নাচের এই কসরত রপ্ত করছিল মৌসুমী চৌধুরী, সরলা মুড়া, ভাগ্যবতী মাহাতো, নীলি মাহাতোরা। আর সেই ছন্দে তৈরি হচ্ছিল ইতিহাস।
পুরুলিয়ার ছৌ নাচে প্রধান রস হল বীররস। এতদিন সেখানে দেখা যেত পুরুষ শিল্পীদেরই। এই প্রথম পুরুলিয়াতে ছৌ নাচতে আসছে মেয়েরাও। বলরামপুরের জগন্নাথ চৌধুরী মেয়েদের ছৌ-এর মঞ্চে নিয়ে এসেছেন। বলরামপুরের প্রত্যন্ত মালডি গ্রামে, কুমারী নদী-লাগোয়া মাঠে জগন্নাথবাবুর নাচের আখড়া। মহড়া চলে প্রতিদিনই। সেখানে শ’খানেক কচিকাঁচাদের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিচ্ছে মেয়েরাও।
জগন্নাথবাবু ইতিমধ্যেই ব্যতিক্রমী বলে নজর টেনেছেন। ছৌ-এর আঙ্গিকে তৈরি করেছেন ম্যাকবেথ। রবীন্দ্রনাথের কালমৃগয়া, চিত্রাঙ্গদাকেও রূপ দিয়েছেন ছৌ-এর পালায়। দেশে-বিদেশে স্বীকৃতি পেয়েছে তাঁর সৃষ্টি। এ বার মেয়েদের দলে টেনে আর এক নজির গড়লেন তিনি। জগন্নাথবাবু বলেন, “ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের ছৌতে মেয়েরা নাচে, তবে ওটা প্রেমরসের নাচ। পুরুলিয়ার বীররস মেয়েদের পক্ষে কিছুটা কঠিন।”

বলরামপুরে চলছে মেয়েদের নাচের মহড়া। ছবি: সুজিত মাহাতো।
মেয়েদের নাচ করা এখনও গ্রামসমাজে খুব সহজে গ্রহণ করা হয় না। বাধা কাটাতে জগন্নাথবাবু নিজের দুই কিশোরী কন্যাকে নিয়ে নাচের মহড়া শুরু করেছিলেন। এখন পাশে পেয়েছেন গ্রামের আরও দশজনকে। ছেলেদের সঙ্গেই তাঁরাও একই ভাবে নাচের কৌশল শিখছে, জানালেন তিনি। মেয়েদের এমন ভাবে শিল্পী করে তোলার পিছনে রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বাংলা নাটক ডট কম’-এর অবদান, বলেন জগন্নাথবাবু। “আমরা ম্যাকবেথ বা কালমৃগয়া করেছি তাঁদেরই সহায়তায়। এই কর্মশালাতেও সহায়তা করছে এই সংস্থা।” তাঁর কথায়, বিভিন্ন দেশ ঘুরে দেখলাম শিল্পের একটা বড় জায়গা দখল করে রয়েছে মেয়েরা। আমাদের এই শিল্পে মেয়েরা পিছিয়ে থাকবে কেন? সেই ভাবনা থেকেই আমাদের এই উদ্যোগ।”
জেলার ছৌ গবেষক সুনীল মাহাতোর কথায়, “এটা অবশ্যই ইতিবাচক। একটা শিল্পের সংস্কার হচ্ছে বলতে পারেন। ছৌ মূলত তিনটি ধারাতেই দর্শকদের কাছে পরিচিত, সরাইকেলা, ময়ূরভঞ্জ আর পুরুলিয়া। ময়ূরভঞ্জের ছৌ নাচে মেয়েরা অংশ নিলেও তাঁরা মুখোশ পরেন না। সেই নাচ বীররসের মতো এতটা কঠিন নয়। পুরুলিয়ার বীররসের নাচই সবচেয়ে সমাদৃত দর্শকদের কাছে। এই নাচে যদি মেয়েরা আসে, দর্শকেরা অন্য ধারার শিল্পের আস্বাদন পাবেন।” ছৌ নাচে মেয়েরা এলে সেটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। “মেয়েরা জিমন্যাস্টিকে সফল হচ্ছে, ছৌ নাচেও হবে,” বলেন তিনি।
কী বলছে মেয়েরা? শ্যামলী চৌধুরী, শিখা মাহাতোদের কথায়, “প্রতিদিন নদীর পাড়ে বালিতে অভ্যাস করি। অন্য নাচে যদি মেয়েরা নাচতে পারে, আমরা পারব না কেন?” বাংলা নাটক ডট কমের সুমন দাস বললেন, “মেয়েরা তো অর্ধেক আকাশ। মেয়েরা এলে এই শিল্পটাই সমৃদ্ধ হবে। মেয়েদেরও নতুন নতুন জায়গা ঘোরা হবে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গী তৈরি হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.