পরীক্ষামূলক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও রঘুনাথপুরের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে জলের সংস্থান নিয়ে চিন্তায় ডিভিসি। ফের বাধা পেয়ে সপ্তাহ দুয়েক ধরে ‘ওয়াটার করিডরে’র শেষদিকের কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে ডিভিসি। এই পরিস্থিতিতে ওই ইউনিটটি আপাতত বসিয়ে রাখার কথা ভাবছেন কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার দেবাশিস মিত্র বলেন, “জলের সংস্থান না হলে ইউনিট থেকে বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা সম্ভব নয়। তাই পরীক্ষামূলক উৎপাদন করে ইউনিটটি বন্ধ করে রাখা ছাড়া উপায় নেই।” তিনি জানান, জেলার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো থেকে ডিভিসি-র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তিনি সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
জমি নিয়ে আন্দোলনকারীদের বাধায় বার বার পাঞ্চেত জলাধার থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় জল নিয়ে আসার (ওয়াটার করিডর) কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে ওয়াটার করিডরের কাজ শুরু হয়। সেই কাজ দ্রুত গতিতেই এগোচ্ছিল। সম্প্রতি একটি ইউনিটে পরীক্ষামূলক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে। ডিভিসি সূত্রের খবর, ঠিক হয়েছে মার্চ মাসের শেষদিকে পুরোমাত্রায় পরীক্ষামূলক ভাবে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। ভাবা হয়েছিল, সেই সময়ের মধ্যে জল নিয়ে আসার কাজ শেষ হয়ে গেলে কিছু দিনের মধ্যেই ওই ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হবে। কিন্তু উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জলের সংস্থান নিয়ে অনিশ্চতা দেখা দেওয়ায় পরীক্ষামূলক ভাবে উৎপাদন করেই ইউনিটটি বসিয়ে রাখার কথা ভাবছে ডিভিসি।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়ে এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজ চলছে। সেই সঙ্গে ওয়াটার করিডর ও ছাইপুকুর-সহ আরও কিছু কাজ চলছে। কিন্তু জমিদাতাদের নানা দাবি নিয়ে আন্দোলনে কাজ বার বার আটকেছে। ডিসেম্বর মাসের শেষদিক থেকে.মূলত জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো ও পুলিশ প্রশাসনের সক্রিয় হস্তক্ষেপে দীর্ঘসময় ধরে বন্ধ থাকা ওয়াটার করিডর ও ছাইপুকুরের কাজ শুরু হয়। তিন সপ্তাহের মধ্যেই ওয়াটার করিডরের ১০ কিলোমিটার মধ্যে প্রায় আট কিলোমিটারের মাটি কাটা ও পাইপ পাতার কাজ শেষ হয়ে যায়। চলতি মাসের প্রথম থেকে প্রকল্পে ট্রাকের মাধ্যমে কয়লা আসার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি একটি ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদনের প্রথম ধাপ হিসাবে ‘স্ট্রিম ব্লোয়িং’ (স্ট্রিম পরিবাহী পাইপগুলি পরিষ্কার করার কাজ) শুরু করেছে ডিভিসি। দেবাশিসবাবু জানান, এই কাজ পরীক্ষামূলক উৎপাদনের প্রথম পর্যায়। পুরোমাত্রায় পরীক্ষামূলক উৎপাদনের জন্য স্থানীয় সালঞ্চি চেকড্যাম থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ১৫ লক্ষ কিউবিক মিটার জল এনে বিদ্যুৎকেন্দ্রর জলাধারে মজুত করে রাখা হয়েছে। ঠিক করা হয়েছে মার্চ মাসের শেষদিকে ওই ইউনিটে পুরোমাত্রায় লোড নিয়ে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ১২ দিন ধরে উৎপাদন করা হবে।
বস্তুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে জমি জট কাটার পরেই ডিভিসি কর্তৃপক্ষ আশা করেছিল জানুয়ারি মাসের মধ্যেই ওয়াটার করিডরে পাইপ পাতার জন্য মাটি কাটার কাজ শেষ হবে।.কিন্তু ঘটনা হল ওয়াটার করিডরের একবারে শেষদিকে ভুরুকুণ্ডাবাড়ি গ্রামে স্থানীয় জমি মালিকদের বিরোধিতায় কাজ বন্ধ হয়ে দিয়েছে। পরে কাজ বন্ধ করা হয় অযোধ্যা, সিদপুর, গুনিয়াড়া এলাকাতেও। যে সব জমি মালিক বাধা দিচ্ছেন তারা এলাকায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থক হিসাবে পরিচিত।
ঘটনা হল এই ভুরকুন্ডাবাড়ি এলাকার কিছু জমিমালিককে নিয়ে পুরুলিয়ার জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ডিভিসি-র তৎকালীন চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে ডিভিসি-র কাছে এলাকা উন্নয়নের কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই সূত্র ধরেই জমিদাতারা সেচের জন্য দামোদর থেকে জল নিয়ে আসার দাবিতে ওয়াটার করিডরের কাজে বাধা দেওয়া শুরু করেন। এলাকায় গিয়ে জমি মালিকদের সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক করেছেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে ওই জমি মালিকদের একাংশকে নিয়ে রঘুনাথপুরে মহকুমাশাসকের উপস্থিতিতে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেন জেলার মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো ও সুজয়বাবু। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি।
সুজয়বাবুর বক্তব্য, “পুলিশ দিয়ে জবরদস্তি কাজ করলে এলাকায় আমাদের সাংগঠনিক ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমরা বলেছিলাম পার্থবাবুর উপস্থিতিতে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ এলাকায় সেচ-সহ আরও যে সব উন্নয়নমূলক কাজ করার কথা জানিয়েছিল, তা দ্রুত বাস্তবায়িত করুক।” তাঁর অভিযোগ, “ডিভিসি কর্তৃপক্ষ কাজগুলি না করায় জমি মালিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।” অন্য দিকে ডিভিসি-র দাবি, সেচের জন্য দামোদর নদ থেকে জল পাওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের দামোদর রিজার্ভার রেগুলেশন কমিটির অনুমোদন পাওয়া দরকার। তা সময়সাপেক্ষ কাজ।” তবে দ্রুত কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন শান্তিরামবাবু ও সুজয়বাবুরা। |