স্কুল গড়তে জমি দিলেন দুই শবর ভাই
গ্রামে স্কুল গড়তে নিজেদের একমাত্র সম্বল ১০ কাঠা জমি দান করে দিলেন শবর সম্প্রদায়ের দুই ভাই।
খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘর। রোজগার বলতে বন থেকে কাঠ-পাতা কুড়িয়ে এনে হাটে বিক্রি করা। কখনও অবশ্য দিনমজুরিও মেলে। কিন্তু তাতেও বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল রাইপুর ব্লকের সগরভাঙা গ্রামের অনিল শবর ও অশোক শবর নামে এই দুই ভাইয়ের সংসারে অভাব কাটে না। তবু গ্রামে স্কুল গড়তে কেন ওই জমি দান করে দিলেন?
অনিলবাবুর কথায়, “আমরা সারাটা জীবন ধরে অভাবের মধ্যেই কাটিয়ে গেলাম। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম যেন ভাল ভাবে বাঁচে। তার জন্য দরকার স্কুল। সেই কারণেই জমি দান করেছি।” তাঁর ভাই অশোকবাবুর কথায়, “গ্রামে আর কোনও দেওয়ার মতো জমিও ছিল না। ওই জমিটা পড়েই থাকত। তাতে চাষও করা যায় না। তাই চেয়েছিলাম, এমনি পড়ে না থেকে ভাল কাজে লাগুক।”
বিডিওর সঙ্গে দুই জমিদাতা।—নিজস্ব চিত্র।
রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস অবশ্য জানান, ওই জমিতে চাষ হত না ঠিকই, তবে তার বাজার মূল্য লক্ষাধিক টাকা। তিনি বলেন, “ওই দুই ভাই জমিটা বিক্রি করে দিলে ভাল টাকাই পেতেন। তার বদলে স্কুলের জন্য দান করে দেবেন, এটা শুনে প্রথমে খুব অবাকই হয়েছিলাম।” তিনি জানান, ওই জমিতে একটি প্রাথমিক স্কুল তৈরির জন্য ইতিমধ্যে তপশিলি জাতি-উপজাতি উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম পরিষদ থেকে ১৩ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করারও পরিকল্পনা রয়েছে। স্কুলবাড়ি তৈরির কাজ শীঘ্রই শুরু করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। অনিলবাবু ও অশোকবাবু সম্প্রতি রাইপুর ব্লক অফিসে গিয়ে বিডিও-র হাতে জমির দানপত্র তুলেও দিয়েছেন।
প্রত্যন্ত গ্রাম সগরভাঙায় বর্তমানে ৭২টি শবর পরিবার বাস করে। গ্রামে সরকারি প্রাথমিক স্কুল নেই। একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে দু’কিলোমিটার দূরে করমবেড়া গ্রামে। সেখানে গিয়েই গ্রামের প্রায় ৩০টি শিশু পড়াশোনা করে। এলাকার মানুষ তাই সগরভাঙায় একটি স্কুলের জন্য বিডিও-র কাছে আর্জি জানান। এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদেরও প্রশিক্ষণ নিতে দূরে যেতে সমস্যা হয় বলে তাঁরা জানিয়েছিলেন। পরে বিডিও ওই গ্রামে গিয়ে স্কুল ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র তৈরির জন্য জমি চান। বিডিওর-র কথায়, “ওই গ্রামে বেশির ভাগ জমিই বন দফতরের। তা নেওয়ার জটিলতা রয়েছে। শুধু অনিলবাবু ও অশোকবাবুদেরই ১০ কাঠা পতিত জমি ছিল। তাঁদের কাছে ওই জমি চাইতেই নিঃশর্তে দিতে রাজি হয়ে যান।”
তাতে গোটা গ্রামই খুশি। এই দুই ভাই দারিদ্রের কারণে লেখাপড়া শিখতে পারেননি। তাই আক্ষেপ ছিল। কিন্তু অনেক কষ্ট করেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছেন। অনিলবাবুর দুই ছেলের একজন পঞ্চম, অন্য জন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। অশোকবাবুর দুই মেয়ে সোনাগাড়া হাইস্কুলে দ্বাদশ ও একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। প্রশাসন সূত্রে খবর, সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী, এই জেলায় সাক্ষরতার হার ৬৪ শতাংশ। রাইপুর ব্লকেও শিক্ষার হার তেমনই। কিন্তু সগরভাঙা গ্রাম যে সোনাগাড়া পঞ্চায়েতের অধীনে, সেখানকার সাক্ষরতার হার ৫৭ শতাংশ।
গ্রামের নিরঞ্জন শবর, মিঠুন শবর বলেন, “ওঁরা আমাদের গ্রামের গর্ব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.