|
|
|
|
অরণ্যশহরের তেষ্টা মিটবে কংসাবতীর জলে
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
আগামী দিনে কংসাবতীর জলেই তেষ্টা মিটতে চলেছে অরণ্যশহরের!
নদী ভিত্তিক জলোত্তোলন প্রকল্পের মাধ্যমে অরণ্যশহরে বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত জল সরবরাহের উদ্যোগ নিচ্ছে ঝাড়গ্রাম পুরসভা। প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ক্ষমতাসীন তৃণমূল পুরবোর্ডের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে প্রাথমিকভাবে ৫০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের আশ্বাস, “শীঘ্রই প্রথম পর্যায়ের টাকা বরাদ্দ করা হবে।” ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “পুরবাসীকে পর্যাপ্ত পরিস্রুত জল সরবরাহ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কংসাবতীর নদীতটে বালি ও জলের গভীরতা মাপার কাজ চলছে। জল অনুসন্ধান দফতরের ছাড়পত্র পাওয়া গেলেই রাজ্য পুর কারিগরি দফতরের সহযোগিতায় প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।”
ঝাড়গ্রাম পুরসভা সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে লালগড়ের বৈতায় কংসাবতী নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিশোধিত জল সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই বৈতায় কংসাবতী নদীতটের বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষামূলক বোরিং করে বালি ও জলস্তরের গভীরতা মাপার কাজ হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতরের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈতায় কংসাবতী নদীতট এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছেন। দফতরের এক সিনিয়র জিওলজিস্ট এবং এক জিওফিজিসিস্ট-ও ওই পর্যবেক্ষক দলে ছিলেন। কংসাবতী নদীতে সারা বছরই জল থাকে। তবে বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে জলের প্রবাহ কমে যায়। নদীতট পর্যবেক্ষণ করে ওই প্রতিনিধি দলটি অবশ্য মনে করছেন, সেখান থেকে সারা বছর পর্যাপ্ত জল পেতে সমস্যা হবে না। নদীতটে বালি ও জলের গভীরতা মাপার কাজ শেষ হলে পুরসভাকে নদী থেকে জল তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলে দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতরের ছাড়পত্র পাওয়া গেলেই রাজ্য পুর-কারিগরি দফতরের সহযোগিতায় প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। বৈতা এলাকায় নদী থেকে জল তুলে তা শোধন করে প্রায় ৮কিমি পাইপ লাইনের মাধ্যমে ঝাড়গ্রাম শহরে জল নিয়ে আসা হবে। পুরসভা সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রাম পুর-শহরে প্রায় ৬২ হাজার মানুষের বাস। পরিবারের সংখ্যা ১৭ হাজার। শহরে দোকানপাট ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজার। জনসংখ্যার নিরিখে পানীয় ও নিত্য ব্যবহার্য মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬ লক্ষ গ্যালন জল প্রয়োজন। বর্তমানে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহযোগিতায় একাধিক ডিপ টিউবওয়েল ও মিনি ডিপ টিউবওয়েলে জল তুলে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ৯৬০টি টাইম কলের মাধ্যমে দৈনিক মাত্র আড়াই লক্ষ গ্যালন জল সরবরাহ করা সম্ভব হয়। গ্রীষ্মে একাধিক ডিপ টিউবওয়েল অকেজো হয়ে জলসঙ্কট বাড়িয়ে তোলে।
গত ৩১ বছর ঝাড়গ্রাম পুরবোর্ড বামেদের দখলে ছিল। অথচ দীর্ঘ তিন দশকেও বাড়ি-বাড়ি পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারেনি বিগত বাম পুরবোর্ড। বিগত পুরভোটগুলির ইস্তেহারে বামেরা বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের জন্য নদী ভিত্তিক জলোত্তোলন প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি বারে বারে দিয়ে এসেছিল। কিন্তু তা ইস্তেহার বন্দি হয়েই থেকে গিয়েছিল বলে পুরবাসীর অভিযোগ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত নভেম্বরে পুরভোটের আগে বামেদের ইস্তেহারে সুনির্দিষ্ট ভাবে ওই প্রতিশ্রুতির কথা ছিল না। তৃণমূলের পক্ষ থেকে মুকুল রায় জানিয়েছিলেন, “ক্ষমতায় এসে দু’বছরের মধ্যে অরণ্যশহরের উন্নয়ন করতে আমরা ব্যর্থ হলে তখন আমাদের প্রত্যাখ্যান করবেন।” এখন কত দ্রুত এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়, সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|