টাকা এসে পড়ে রয়েছে। তালিকাও প্রস্তুত। কিন্তু গত দু’বছর ধরে হাওড়া জেলায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে বহু রাস্তা তৈরির কাজ শুরুই হয়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রের জানা গিয়েছে, এক সময়ে পিএমজিএসওয়াই প্রকল্পে রাস্তা তৈরির দায়িত্বে ছিল জেলা পরিষদ। তবে জেলা পরিষদের হাতে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় তারা সাতটি ব্লকে রাস্তা নিজেরা তৈরি করত। বাকি সাতটি ব্লকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাতে। জেলা পরিষদের কাছ থেকে পাওয়া অনুরোধের ভিত্তিতেই পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর এই সাতটি ব্লকের দায়িত্ব রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাতে দিয়েছিল বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। বছর দুই আগে জেলা পরিষদের হাত থেকে এই প্রকল্পে রাস্তা তৈরির দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়ে নেয় রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর।
|
হাওড়ায় গ্রামীণ সড়কের হাল |
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর জানায়, ২০১২ সালে ৩ বার টেন্ডার হয়। মাত্র ২৫টি রাস্তার জন্য ঠিকা সংস্থাগুলি আগ্রহ দেখায়। সেই সব রাস্তার কাজ শুরুও হয়েছে। কিন্তু বাকি রাস্তার জন্য ঠিকা সংস্থা পাওয়া যায়নি। |
|
ওই দফতর সূত্রের খবর, ২০১২-১৩ এবং ২০১৩-১৪ এই দু’টি অর্থবর্ষে জেলায় ৪৪০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ অনুমোদিত হয়। বরাদ্দ করা হয়, প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা। ১৪টি ব্লকের ৮১টি রাস্তা নির্মাণের জন্য চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে মাত্র ২৫টি রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার। বাকি ৫৬টি রাস্তার কাজ এখনও শুরুই হয়নি। তার দৈর্ঘ্য ৩৪৫ কিলোমিটার।
এক সময়ে নিয়ম ছিল ১০০০ মানুষের বসবাস, এমন দু’টি বা তিনটি গ্রামকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পের রাস্তা দিয়ে জোড়া যাবে। ২০১২-১৩ আর্থিক বছর থেকে এই নিয়মের পরিবর্তন করা হয়। বলা হয়, ৫০০ জনবসতিসম্পন্ন গ্রামকেও এই প্রকল্পের আওতায় আনতে হবে। সেই ভাবেই ২০১২ সালের গোড়ায় হাওড়া জেলায় রাস্তা নির্বাচন করা হয়। নতুন নিয়মে ফলে রাস্তার দৈর্ঘ্য এবং সংখ্যা বেড়ে যায়। রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক কর্তার দাবি, এর আগে হাওড়া জেলা প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে এত বরাদ্দ কোনও বছরে পায়নি। কিন্তু বরাদ্দ টাকা খরচ করতে না-পারায় পরবর্তী বরাদ্দের টাকা সঠিক সময়ে পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের একাংশ।
সমস্যা ঠিক কোথায়? পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, রাস্তা তৈরির জন্য তারা একাধিকবার টেন্ডার ডাকলেও কোনও ঠিকা সংস্থা তাতে সাড়া দেয়নি। দফতর সূত্রের খবর, ২০১২ সালে মোট তিন বার টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। মাত্র ২৫টি রাস্তার জন্য ঠিকা সংস্থাগুলি আগ্রহ দেখায়। সেই সব রাস্তার কাজ শুরুও হয়েছে। কিন্তু বাকি রাস্তাগুলির জন্য কোনও ঠিকা সংস্থা পাওয়া যায়নি।
মাস ছ’য়েক আগে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর এই ৫৬টি রাস্তার দায়িত্ব তুলে দেয় হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনারের (এইচআরবিসি) হাতে। কিন্তু তার পরেও রাস্তা তৈরির কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা প্রয়োজনীয় নথিপত্র জেলা পরিষদের হাতে তুলে দিলেও কেন রাস্তার কাজ শুরু হচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না। অথচ দ্রুত রাস্তার কাজ শুরু করতে না পারলে কয়েক মাস পরেই বর্ষা এসে যাবে। তখন আবার অসুবিধায় পড়তে হবে।”
এইচআরবিসির ভাইস চেয়ারম্যান সাধন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঠিকা সংস্থা চেয়ে আমরা টেন্ডার করেছি। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমের দিকে টেন্ডার খুলে ঠিকা সংস্থা নির্বাচন করা হবে। তারপরে টাকা-পয়সার ব্যাপারে আলোচনায় বসব পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের সঙ্গে। কারণ ওই দফতরই টাকা দেবে। এ বিষয়টি চূড়ান্ত হলেই নির্বাচিত ঠিকা সংস্থাগুলিকে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হবে।’’
কিন্তু কী কারণে এর আগে ঠিকা সংস্থাগুলি টেন্ডারে অংশ নেয়নি?
এ বিষয়ে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, হাওড়া মূলত ঘনজনবসতিপূর্ণ জেলা। রাস্তার জন্য প্রয়োজন প্রায় ৭ মিটার চওড়া জায়গা। সর্বত্র এই পরিমাণ জায়গা পাওয়াই হাওড়ায় একটা বড় সমস্যা। তার ফলেই ঠিকা সংস্থাগুলি সব রাস্তার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখায়নি। একই সমস্যায় এইচআরবিসিও পড়তে পারে। এ বিষয়ে সাধনবাবু বলেন, “টেন্ডার খোলার পরেই এই সংক্রান্ত তথ্য জানা যাবে। প্রয়োজনে ঠিকা সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হবে।” সিপিএমের অবশ্য অভিযোগ, প্রকল্পটি রূপায়ণের ক্ষেত্রে অদক্ষতারই পরিচয় দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এর আগের সিপিএম পরিচালিত জেলা পরিষদের প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আনন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের হাতে যখন এই প্রকল্পের দায়িত্ব ছিল তখন তা রূপায়ণের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হয়নি। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই আমাদের হাত থেকে এই প্রকল্পটি কেড়ে নিল। অথচ তারা নিজেরাও প্রকল্পটি রূপায়ণ করতে পারল না।” |