মালিক সমিতির ডাকে বাস ধর্মঘট দু’দিনে পড়ল। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। অথচ জটিলতা কাটাতে পুরসভার তরফ থেকে কোনও উগ্যোগ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তাঁদের দাবি, কোনও সমস্যা থাকলে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসে মালিকেরা মিটিয়ে নিক। যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা ভেবে পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক প্রগতিশীল নাগরিক সমাজের তরফে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রামপুরহাট মহকুমাশাসকের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায় রবিবার বলেন, “বিষয়টি পুরসভার এক্তিয়ারভুক্ত। তবে যত শীঘ্র সম্ভব এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পুরসভাকে বলা হয়েছে।”
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাসস্ট্যান্ডে পানীয় জল, শৌচাগার, লেন-সহ নানা কাজ করে উঠতে পারেনি রামপুরহাট পুরসভা। এখনও প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। অথচ বাসস্ট্যান্ড থেকে পুরসভা দৈনিক প্রতি বাস পিছু ১০ টাকা এবং বাসস্ট্যান্ড চত্বরে থাকা দোকানগুলি থেকে দৈনিক ৫ টাকা করে আদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাস মালিক সংগঠনের দাবি, পরিকাঠামোর উন্নতি তো হয়নি। অথচ এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাদের কিছু জানানো হয়নি এবং ওই কর আদায়ের দায়িত্ব স্থানীয় এক জনের হাতে দিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা। এর প্রতিবাদে জেলা বাস মালিক সমিতির রামপুরহাট শাখা শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি বলেন, “কাজ বাকি রয়েছে। তবে কিছুই হয়নি তা ঠিক নয়। ধীরে ধীরে সেই কাজও করে দেওয়া হবে। বাস মালিকেরা কাউকে কিছু না জানিয়ে ধর্মঘট ডেকেছে। তা সম্পূর্ণ বেআইনি।” |
এমনই অবস্থা রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ডের। |
রামপুরহাট বাস মালিক সমিতির সহ-সম্পাদক ইয়ার সেলিম বলেন, “রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ডে এখনও পানীয় জলের জন্য পুরসভা থেকে কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। বাসস্ট্যান্ডের জায়গা এখনও পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়নি। যে দু’টি যাত্রী প্রতীক্ষালয় হয়েছে সেটা পূর্ত দফতরের টাকায়। এখনও বাসস্ট্যান্ডের সম্পূর্ণ জায়গা ঢালাই হয়নি। নিকাশি নালার কাজও বাকি আছে। অথচ পুরসভা পরিষেবা করের নামে কোনও কমিটি গঠন না করে টোল আদায় করবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।” রামপুরহাট বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মিলন শেখ বলেন, “প্রত্যেক দিন জ্বালানির দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাসের যন্ত্রাংশেরও দাম বাড়ছে। অথচ বাস ভাড়া বাড়ছে না। তা হলে বাস মালিকেরা কী করে মাসের পর মাস পুরসভাকে দৈনিক ১০ টাকা করে দেবে? বাস ভাড়া না বাড়ার জন্য আগের থেকে অনেক কম বাস মালিকেরা এখন চালাচ্ছেন। আগে কোনও রুটে যে বাস তিন বার চলত, সেই বাস জ্বালনি খরচ বাড়ার জন্য দু’বার চলছে। তার উপর আবার পুরসভা অন্যায় ভাবে টোল আদায় করবে?”
পুরপ্রধানের দাবি, “এর আগের সরকারের আমলে বাসস্ট্যান্ডের উন্নতি হয়নি। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। পরিষেবা কর নেওয়ার ব্যাপারে গত ২০ জানুয়ারি রমপুরহাট বাস মালিক সমিতি ও মালিকদের নিয়ে মহকুমাশাসকের অফিসে আলোচনা হয়েছে। আইন মেনেই সব কিছু করা হয়েছে। সেখানে বাস মালিক সমিতি আপত্তি করেছিল ঠিকই। তবে তারা হঠাৎ করে ধর্মঘট ডাকবে জানায়নি। ” তিনি বলেন, “বাসস্ট্যান্ড থেকে পুরসভার আয় বাড়াতে হবে। তাতে বাস মালিকদের সঙ্গে পুনরায় আলোচনায় বসতেও রাজি আছি।” |
পরিষেবা কর নেওয়ার প্রতিবাদে ধর্মঘট শুরু করেছেন বাস মালিকেরা। |
অন্য দিকে, বাস ধর্মঘট নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ড হকার্স ইউনিয়নের সম্পাদক তথা রামপুরহাট বাস মালিক সমিতির একজন সদস্য আনার শেখ বলেন, “আমরা এবং বাসস্ট্যান্ডের দোকানদাররা পুরসভার পক্ষ থেকে টোল আদায়কে সমর্থন করছি। কারণ, বাসস্ট্যান্ড চত্বর পরিষ্কার রাখার জন্য পুরসভা থেকে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরা প্রতিদিন কাজ করছে। তাঁদের তো বেতন বা মজুরি দিতে হবে। এ ছাড়া বাসস্ট্যান্ডে এখন আলোর ব্যবস্থা হয়েছে। সেখানে তো পুরসভাকে বিল দিতে হয়। তাই আমি মনে করি পুরসভার সিদ্ধান্ত ঠিক।” আইএনটিইউসি প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের পক্ষে দেবব্রত ঘোষ বলেন, “অনেক বাসস্ট্যান্ড থেকেই পুরসভা পরিষেবা কর নিচ্ছে। এখানে চালু হলে আমাদের আপত্তি নেই।” সিটুর পক্ষে জাহাঙ্গির খান বলেন, “পুরসভা এখনও বাসস্ট্যান্ডের সম্পূর্ণ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারেনি। অথচ পরিষেবা কর চালু করতে চাইছে। তাই আমরা ধর্মঘটকে সমর্থন করেছি।”
পরিষেবা কর নিয়ে এই চাপানউতোর-এর মধ্যে চরম সমস্যায় পড়েছেন যাত্রীরা। কবে পরিষেবা স্বাভাবিক হবে তার সদুত্তর মেলেনি কোনও তরফ থেকেই। |