ভবিষ্যতে কোনও দলাই লামা না-থাকলেও তার আঁচ পড়বে না বৌদ্ধ ধর্মেএমনই মনে করেন চতুর্দশ দলাই লামা তেনজিং গাৎসো।
তাঁর উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই দলাই লামা বললেন, “তিন বছর আগে তিব্বত সরকারের সমস্ত রাজনৈতিক দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়েছি। এ বার তিব্বতিরাই ঠিক করবেন, ভবিষ্যতে এই পদের প্রাসঙ্গিকতা থাকবে কি না।”
আজ গুয়াহাটির নেহরু স্টেডিয়ামে এক সমাবেশে মার্কিন ও চিনা আগ্রাসী নীতির সমালোচনা করেন তিনি। দলাই বলেন, “পূবের ভাগ্য পশ্চিম ও পশ্চিমের ভাগ্য পূবের উপরে নির্ভর করছে। যুদ্ধ বা সন্ত্রাস নয়, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ কায়েম করলেই সকলের মঙ্গল।” তাঁর বক্তব্য, আমেরিকা উন্নত রাষ্ট্র। কিন্তু, ইরাক বা আফগানিস্তানে গণতন্ত্র ফেরানোর নামে যুদ্ধের পথ নেওয়ায় সেখানে হিংসা বেড়েছে। পরিবেশ সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয়ে চিনা সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। |
গুয়াহাটির সমাবেশে দলাই লামা। পাশে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। রবিবার। ছবি: উজ্জ্বল দেব। |
‘নিজভূমি’ থেকে বিতাড়িত ধর্মগুরুকে সভায় হাজির এক ছাত্রী প্রশ্ন করেন, লাসার পোতালা প্রাসাদের কথা মনে করে তাঁর দুঃখ হয় কি না? দলাই বলেন, “এতদিন ভারতে আরামে রয়েছি। ওই প্রাসাদে শৌচালয় ছিল না। শাওয়ারও নয়। তা-ই এখন ওখানে গেলে এক সপ্তাহ কাটাতেই কষ্ট হবে। তবে, ওখানে যে ফুল ফুটত, সে গুলিকে খুব মনে পড়ে। তবে ধর্মশালার টিউলিপ, হায়াসিন্থরা সেই দুঃখ ভুলিয়ে রাখে।”
সভায় হাজির ছিলেন তিব্বত সরকারের প্রধানমন্ত্রী লবসাং সাংগে-সহ অন্য মন্ত্রী-আমলারা। অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও অরুণাচলের পর্যটনমন্ত্রী পেমা খাণ্ডুও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। গগৈ বলেন, “অসমে বর্তমান নাশকতা, সীমানা বিবাদে জর্জরিত সমাজে দলাই লামার আশীর্বাদ ও শিক্ষার প্রয়োজন।”
গতকাল গুয়াহাটির রবীন্দ্র ভবনে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে দলাই লামা বলেন, “৪০ বছর আগেও সর্বধর্ম সম্প্রীতি নিয়ে সভা করেছি। আজও করছি। আমাদের কথা যদি মানুষ মেনে চলতেন, তাহলে চার দশকে বিশ্বে কোনও অশান্তি থাকত না। ধর্মগুরুরা নিজেদের বিশ্বাস ব্যক্ত করলেই হবে না। তা মানুষকে তাঁদের মতো করে বোঝাতেও হবে। এখানেই ধর্মনিরপেক্ষ ভারত বিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।”
তেনজিং গাৎসের পর দলাই লামা কে হবেন, তা নিয়ে তিব্বত ও চিনে জোর চাপান-উতোর চলছে। পাঞ্চেন লামা ও কর্মপার নির্বাচন ঘিরেও মতানৈক্য হয়েছে। অনুষ্ঠানের পর এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “২০০১ সালে নির্বাচিত সরকারের হাতে তিব্বতের রাজনৈতিক ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়। তখনই আংশিক অবসর নিয়েছিলাম। ২০১১ সালে পুরোপুরি রাজনৈতিক দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিই। এ বার তিব্বতিরাই সিদ্ধান্ত নেবেন আমার পরে কে দলাই লামা হবেন, বা আদৌ তাঁদের কাছে এই পদের প্রয়োজনীয়তা আছে কী না?” তাঁর মতে, বৌদ্ধ ধর্ম সুপ্রাচীন। দলাই লামার প্রথা ছ’শো বছর পুরনো। তাই পদ না-থাকলেও ধর্মের বহমানতায় সমস্যা হবে না। তাঁর মতে, পরবর্তী দলাই লামা নির্বাচিত করা হলে, তা তিব্বতি নিয়ম মেনেই হওয়া উচিত। এমন কী, তিনি কোনও মহিলা হলেও তাঁর আপত্তি নেই। |