কলমের জোরে এক জাদুর দুনিয়া তৈরি করেছিলেন লেখিকা জে কে রোওলিং। জাদু-জগৎ, ম্যাজিক স্কুল, ঝাঁটায় চড়ে দুনিয়া পার কিংবা ছড়ি ঘোরাতেই শত্রুর শেষ এমন আরও কত কী! আর ছিল তিন বন্ধু হ্যারি, রন ও হারমাইনি! লেখিকার হাত ধরেই বন্ধুত্ব গড়াল প্রেমে। ঠিক যেমনটা ভেবেছিলেন পাঠক-দর্শকরা।
ভুল হল। বহু পটার-পাঠক ঠিক এমন প্রেম চাননি। হ্যারি-হারমাইনির মিল হল না যে! ঠিক যেটা মনে মনে ভেবে রেখেছিলেন অনেকেই। তবু মুখ ফুটে বলেননি। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। মানতেই হবে।
বাঁধ ভাঙল হঠাৎই। সে দিন যাঁরা চিনচিনে দুঃখ বুকে চেপে রেখেছিলেন, আজ তাঁরা বলছেন ‘রন-হারমাইনির বিয়ে নিয়ে আপত্তি থাকলে, এখনই বলুন। এই সময়।’ কারণ? মুখ খুলেছেন স্রষ্টা স্বয়ং। |
একটি পত্রিকার জন্য সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জে কে রোওলিং। সঙ্গে ছিলেন এমা ওয়াটসনও। পটার-সিরিজে হারমাইনির চরিত্রে দেখা গিয়েছিল যাঁকে। এখনও প্রকাশিত হয়নি সাক্ষাৎকারটি। তার আগেই ব্রিটিশ দৈনিকে ফলাও করে বেরিয়ে গেল ব্রেকিং নিউজ ‘জে কে মেনে নিলেন, হ্যারির সঙ্গে হারমাইনির বিয়ে হওয়া উচিত ছিল।’
হগওয়ার্টসের তিনমূর্তি হ্যারি, রন ও হারমাইনি। প্রথম দর্শনে অবশ্য রনের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়ে যায় হারমাইনির। বরফ গলে হ্যারির সৌজন্যে। আর তার পর ধীরে ধীরে গভীর হয় তিন জাদুকরের বন্ধুত্ব। গল্প এগোয়, গাঢ় হয় রহস্য। আর সেই সঙ্গে নিজের মনেই পাঠক কিংবা দর্শক-মনে জন্ম নেয় গল্পের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ। রন না হ্যারি কার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবে জাদুস্কুলের সব চেয়ে বুদ্ধিমতী ছাত্রীটি।
বরাবর দেখানো হয়েছিল, হারমাইনির প্রতি দুর্বল রন। তবু ভোটে এগিয়ে ছিল হ্যারিই। কিন্তু স্রষ্টা অন্য রকম ভেবেছিলেন। কাহিনির মারপ্যাঁচে হারমাইনির মনে জায়গা পেল রন। হ্যারি প্রেমে পড়ল জিনি উইজলি-র। কিন্তু রনের বোনের সঙ্গে হ্যারির সম্পর্কটা মেনে নিতে পারেনি অনেকেই।
পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারের যে অংশটুকু ফাঁস হয়েছে, তাতে অবশ্য ‘হ্যারি হারমাইনির বিয়ে হওয়া উচিত ছিল’, সরাসরি এমন কিছু বলেননি রোওলিং। কিন্তু যা বলেছেন, তা আদপে হারমাইনি-রনের বিয়ে নিয়ে প্রচ্ছন্ন আক্ষেপ। লেখিকা বলেছেন, “নিজের ইচ্ছে পূরণ করতে হারমাইনি-রনের সম্পর্কটা তৈরি করেছিলাম। সত্যি! গল্পটাকে ধরে রাখতেই জুড়ে দিয়েছিলাম দু’জনকে। যেমনটা আমি প্রথমে কল্পনা করেছিলাম। এতে সাহিত্যের খুব একটা কিছু ছিল না।”
সাক্ষাৎকার আয়োজকরা নাকি থমকে গিয়েছিলেন কথাটা শুনে। কয়েক মুহূর্তের নিস্তব্ধতার পর ধীর গলায় রোওলিং বলেন, “আমি জানি। ...আমি দুঃখিত।” বলেন, “আমি বুঝতে পারছি, অনেকেই খুব রেগে রয়েছে। ক্ষোভে ফেটে পড়ছে। কিন্তু একেবারে সত্যি কথা, আজ (পটার সিরিজ থেকে) দূরে সরে গিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। রন-হারমাইনির সম্পর্কটা আমারই সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। বিশ্বাসযোগ্যতার কথা ভাবিনি।” তার পরেই আবার বলেন, “আমি কি কারও মন ভেঙে দিলাম? আশা করি নয়।”
এ ব্যাপারেও কিন্তু নিশ্চিত লেখিকা। তাঁর কথায় অন্তত তেমনটাই ধরা পড়ে।
কী ভাবছেন ‘মিসেস উইজলি’? লেখিকার সঙ্গে একমত?
পাশে বসেছিলেন এমা। হেসে বললেন, “হ্যারির ভক্তরাও সবটা জানে। রন কতটা ভাল রাখতে পারবে হারমাইনিকে, তা নিয়েও চিন্তায় রয়েছে তারা।” এ দিকে সমলোচনার ঝড় উঠেছে মাগলনেট ডট কম-এ।
পটার-দুনিয়ার ভক্তদের অন্যতম জনপ্রিয় সাইট মাগলনেট। “কী??? আমার মন ভেঙে গেল”, মন্তব্য করেছেন রন-ভক্ত অ্যানার। অনেকে আবার বলেছেন, “রন আর হারমাইনির প্রেম, একদম নিখুঁত। কাহিনির গোড়া থেকে ধীরে ধীরে জন্ম নিয়েছে। ক্রমশ গাঢ় হয়েছে সম্পর্ক। শুধু এই কারণেই চরিত্র দু’টো এত পছন্দের।”
তবে উল্টো ছবিটাও রয়েছে। “হারমাইনি আরও ভাল কাউকে পেতে পারত জীবনে। রন তো নিজেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে”, বলেছেন জনৈক ভক্ত। অনেকের আবার আক্ষেপ, হ্যারি-হারমাইনি, দুজনেই দুর্ধর্ষ জাদুকর। মানাত ভাল।
‘ডেথলি হ্যালোস’ ছবি মুক্তির আগে শোনা গিয়েছিল, রনের চরিত্রটা শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন রোওলিং। তা হলে কী ভাবে তাঁর কল্পনায় থাকতে পারে রন-হারমাইনির প্রেম! পরে আবার দেখানো হয়ে ছিল হ্যারি-জিনি ও রন-হারমাইনি, দুই দম্পতিই সুখে আছে। তাদের ভরা সংসার। যেমন আর পাঁচটা রূপকথার শেষ হয় “তার পর তারা সুখে-শান্তিতে ঘর করতে লাগল।”
সত্যিই কি চিরকাল সুখে থাকবে হ্যারি-হারমাইনি? কেনই বা এত দিন বাদে মুখ খুললেন রোওলিং? যেখানে তাঁকে আবার সমর্থনও করছেন মিসেস উইজলি। রোওলিংয়ের প্রতিটি পদক্ষেপই খবর হয়ে এসেছে বরাবর। সম্প্রতি তাঁর ছদ্মনামে লেখা বড়দের উপন্যাস ‘দ্য কাক্কু’জ কলিং’ প্রকাশিত হওয়ার আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল লেখিকা আসলে কে। তখনও অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ব্যবসায়িক কৌশল নাকি?
এ বারও কি অন্য কোনও পরিকল্পনা রয়েছে রোওলিংয়ের? তাঁর কলমে কি ফের ধরা দেবে জাদু-দুনিয়ার তিন মূর্তি? বদলে যাবে ত্রয়ীর সম্পর্কের সমীকরণ? জল্পনা থাকছেই। উত্তর দেবে সময়। |