পশ্চিমী সুর শুনে কমে যাচ্ছে শ্রোতা, আক্ষেপ বাউলদের
ধুতি-পাঞ্জাবী পরা সৌম্য চেহারা। গলায় উত্তরীয়। হাতে একতারা নিয়ে গান ধরেছেন বাউল-গায়ক। কিন্তু শ্রোতা গাতে গোনা। এ রকম দৃশ্য নতুন নয়। অথচ বাউল গানের দর্শক এখনও রয়েছে। তাহলে ভিড় হয় না কেন?
বর্ধমানের দুর্গাপুরের একটি আখড়ার বাউল নারায়ণচন্দ্র অধিকারীর আক্ষেপ, বাউলের সেই সুর নেই। মাদকতাও নেই। তাই শ্রোতা থাকলেও বাউল গান শোনার জন্য কেউ আসেন না। অর্ধশতাব্দী ধরে বাউল গান গাইছেন নারায়ণবাবু। বাংলাদেশের হরিপুর জেলার মাদারিহাট মহকুমার মোস্তাফাপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। বাউলের টানে মাত্র বারো বছর বয়সে দেশ ছেড়ে ছিলেন তিনি।
সম্প্রতি বর্ধমানের মেমারির বাসস্ট্যান্ডে পুরসভা পরিচালিত বইমেলার ময়দানে জেলার বাউল শিল্পীদের নিয়ে একটি সম্মেলন হয়। আনুমানিক তিনশো জন বাউল শিল্পী উপস্থিত ছিলেন ওই সম্মেলনে। তাঁদের বেশিরভাগেরই ক্ষোভ, “এখন সবাই নিজেকে বাউল বলে খুব আনন্দ পায়। কিন্তু তাঁদের গানে না আছে বাউলের সুর, না আছে বাউলের কথা। তার উপর বাউল গান গাওয়ার সময় ইলেকট্রনিক্স বাদ্য যন্ত্র ব্যবহার করছে!” কাটোয়ার চাল খ্যাপা কিংবা বীরভূমের দুবরাজপুরের সুশান্ত দাস বাউলেরাও বলেন, “এখনকার গায়কদের মধ্যে বাউলের সেই মাটির সোঁদা গন্ধটাই উধাও। একতারা, মাটির খোল অথবা আনন্দলহরী ছাড়া কী বাউলের সুর বা টান অনুভব করা যায়! ফলে সুর কেটে বাউল তার শ্রোতা হারাচ্ছে।”
ওই দিনের সম্মেলনে ঠিক হয়, রাজ্য সরকার পরিচালিত লোক সংস্কৃতি মঞ্চের কাছে বাউল গানের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটা অ্যাকাডেমি তৈরি ও বছরে প্রতিটি মহকুমায় কর্মশালা করার দাবি জানানো হবে। অমৃত লোকগান প্রসার সমিতির রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক মণিমোহন দাস বাউল বলেন, “আমাদের রাজ্যে কবিয়ালদের জন্য অ্যাকাডেমি হচ্ছে। বাউল শিল্পীদের জন্যও অ্যাকাডেমি হলে ভাল হয়। তবেই বাউল গান আবার তার ছন্দে ফিরে আসবে।” এই সংগঠন লিখিত ভাবে লোক সংস্কৃতি কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছে, আইন করে বাউল গানের মধ্যে পশ্চিমি সুর ও অমার্জিত কথার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
রাজ্য সরকার পরিচালিত লোক সংস্কৃতি মঞ্চের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বাউল শিল্পীদের দাবি শুনে বলেন, “আমরা এ রকম অ্যাকাডেমি তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছি। সেখানে বাউল চর্চা হবে। বাউল চর্চা শুরু হলেই বাউল গানের ভিতর অন্য সুর ও কথা বন্ধ হয়ে যাবে।” তিনি জানান, তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র পূর্বস্থলী দক্ষিণের বিদ্যানগরে অ্যাকাডেমির ভবনের কাজ শেষ হওয়ার পথে। ওই অ্যাকাডেমি তৈরি হওয়ার পর নবদ্বীপে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বাউল শিল্পীদের নিয়ে রাজ্য সম্মেলনও করা হবে। তবে স্বপনবাবুর আক্ষেপ, সরকারি পরিচয় পত্র নেওয়ার ব্যাপারে বাউল শিল্পীদের চরম গাফিলতি রয়েছে। ফলে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া সরকারি অনুষ্ঠানে আর কোনও শিল্পী ডাক পান না। বর্ধমান জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি পরিচয় পেতে গেলে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হয়। সেই ফর্ম জমা পরার পরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাউল শিল্পীরা ঠিক মতো ফর্ম পূরণই করেননি। তার উপর আবার তাঁদের দেওয়া ঠিকানাতেও পাওয়া যায় না। ফলে এই সমস্যা হয়। মন্ত্রী বাউল শিল্পী সংগঠনের কাছে সরকারি পরিচয় পত্র যাতে শিল্পীরা পায় সে জন্য সহযোগিতা করার আবেদনও করেন। মণিমোহনবাবু বলেন, “মন্ত্রীর সঙ্গে আমরা একমত। সংগঠনের তরফে এ বিষয়ে উদ্যোগী হব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.