পুজোর চাঁদা নিতে কেউ না কেউ আসছে প্রতি সন্ধ্যাতেই। দরজায় টোকা শুনে তেমনটাই ভেবেছিলেন রূপনারায়ণপুরের ব্যবসায়ী ও তাঁর বাড়ির সদস্যেরা। কিন্তু দরজা খুলতেই ঢুকে পড়ে এক দল দুষ্কৃতী। তার পরে বেঁধে রেখে মারধর, লুঠপাট।
আসানসোল শিল্পাঞ্চলে ভিন্ রাজ্যের সীমানা লাগোয়া এলাকাগুলিতে ব্যবসায়ীদের বাড়িতে পরপর লুঠপাটের ঘটনায় ক্ষুব্ধ বণিক সংগঠন। বরাকর, চিত্তরঞ্জন, রূপনারায়ণপুরের মতো এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি তুলেছে তারা। পুলিশ জানায়, সীমানা এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
মাসখানেক আগে বরাকরের ব্যবসায়ী অরবিন্দ নেহারিয়ার বাড়িতে ডাকাতি করে জনা পনেরোর একটি দল। সেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের নানা এলাকা থেকে সম্প্রতি ছ’জনকে ধরে এনেছে পুলিশ। এরই মধ্যে শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ রূপনারায়ণপুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে সামান্য দূরত্বে তেল ও চালকল ব্যবসায়ী গোপাল গোয়েলের বাড়িতে সাত জনের একটি দুষ্কৃতী দল হানা দেয়। পরিবারের সদস্যদের বেঁধে রেখে মারধর করে তারা। তার পরে তছনছ করে বাড়ি। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, যারা এই ঘটনায় যুক্ত তারা ব্যবসায়ীর গতিবিধি বিশদে জানত। রীতিমতো মহড়া দিয়ে লুঠপাট চালিয়েছে তারা। পুলিশের এই অনুমানের কারণ, প্রতি শুক্রবার ওই ব্যবসায়ী বকেয়া টাকা সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। এ দিনও সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টা নাগাদ তিনি ফেরেন। কিন্তু অসুস্থ থাকায় তিনি যে এ দিন টাকা আদায়ে যাননি, সে খবর সম্ভবত দুষ্কৃতীদের কাছে ছিল না। গোপালবাবু বাড়ি ঢোকার কিছুক্ষণ পরেই তারা লুঠপাট চালাতে পৌঁছে যায়।
টোকা শুনে দরজা খুলে দেন গোপালবাবু নিজেই। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভরসন্ধ্যায় এ ভাবে কেউ ডাকাতি করতে আসবে, তা ভাবতেই পারেননি তিনি। লুঠের পরে বাড়ির লোকজনকে বেঁধে রেখেই পালায় দুষ্কৃতীরা। কিছুক্ষণ পরে মুখ দিয়ে পরস্পরের দড়ি খুলে মুক্ত হন গোপালবাবুরা। খবর পেয়ে পৌঁছয় পুলিশ। বরাকরের পরে রূপনারায়ণপুরের এই ঘটনায় আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। এমন ঘটনা চিন্তা বাড়িয়েছে পুলিশেরও। তবে তার পরে দু’দিন কেটে গেলেও কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এলাকার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির হুঁশিয়ারি, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দুষ্কৃতীরা ধরা না পড়লে তারা আন্দোলনে নামবে।
রবিবার পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়েছিলেন এলাকার বণিক সংগঠনের সদস্যেরা। সংগঠনের সম্পাদক মহম্মদ আরমান দাবি করেন, এই ঘটনার পরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, “শীঘ্র দুষ্কৃতীদের ধরা না হলে আমরা আন্দোলনে নামব।” শুধু স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই নন, সীমানা এলাকায় এক মাসের মধ্যে পরপর ব্যবসায়ীদের বাড়িতে লুঠপাটের ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিল্পাঞ্চলের বণিক মহল। ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান বলেন, “আমরা পরপর এই ঘটনায় হতাশ। ব্যবসায়ীরা শিল্পাঞ্চলে আর নিরাপদ নেই। এর প্রভাব গিয়ে পড়তে পারে এলাকার অর্থনীতিতে।” সংগঠনের সম্পাদক সুব্রত দত্তের অভিযোগ, “সীমানা এলাকায় আমরা সিসিটিভি লাগানোর অনুরোধ করেছিলাম প্রশাসনকে। তা হয়নি। সীমানা এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো করা হলে হয়তো এই ধরনের অপরাধ ঠেকানো সম্ভব।” পুলিশের অবশ্য আশ্বাস, সীমানা লাগোয়া এলাকায় জোরকদমে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ ঘটনার রাত থেকেই অভিযান শুরু করেছে। আমরা দ্রত জড়িতদের ধরে ফেলব।” |