বিশ্ব বাণিজ্যের শর্ত ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সামাজিক নিরাপত্তা, দুইয়ের ‘সংঘাত’ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে উদ্যোগী হয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভা ঘরে সূচনা হল ‘ন্যাশনাল সিম্পোসিয়াম ২০১৪’ এর। শনিবার ও রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় স্তরের কর্মশালায় বিশ্ব বাণিজ্য এবং ভারতের সুযোগ, সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনাসূচিতে না থাকলেও, এ দিন কর্মশালার সূচনা পর্বেই বক্তাদের আলোচনায় এসে পড়ল বিশ্ববাণিজ্য এবং স্থানীয় সমাজজীবন, অর্থনীতির ‘সংঘাতের’ প্রসঙ্গ।
কর্ণাটকের রানি চেন্নামা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বি আর অনন্থন কর্মশালার উদ্বোধন করে, ভারতের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আরও বেশি করে বিশ্ববাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করার উদ্যোগই একমাত্র বিকল্পের কথা জানান। তাঁর কথাতে উঠে আসে সিঙ্গুর প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, “জমি আন্দোলনের জন্য সিঙ্গুর গাড়ি কারখানা হাতছাড়া করেছে, গুজরাত লাভবান হয়েছে। দেশের সর্বত্র এমন অনেক অন্তরায় রয়েছে। চিন বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র হতে পেরেছে, কারণ সত্তরের দশকেই চিন বিশ্ববাণিজ্যের জন্য নিজেদের অর্থনীতিকে মুক্ত করে দিয়েছিল।” |
একই সুরে ওড়িশার উৎকল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের ডিন জয়ন্ত পরিধা তুললেন, সে রাজ্যের ‘পস্কো’ প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “জমি আন্দোলনের জন্য অর্থনীতি বিকশিত হতে পারছে না। বড় বিনিয়োগের প্রশ্ন এলেই নানা ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়ে, পরে যার অনেক কয়েকটিরই কোনও অর্থ হয় না। বিনিয়োগ আটকে দেওয়ার ক্ষমতা প্রশাসনের নীচুতলায় থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।”
এই তত্ত্বের সরাসরি বিরোধিতা করেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমীর কুমার দাস। কর্মশালায় তিনি বলেন, “পস্কোর বিনিয়োগ নিয়ে যখন আলোচনা হবে, তখন সে এলাকার আদিবাসীদের কথাও ভাবতে হবে। বিশ্ববাণিজ্যের শর্তগুলি যদি স্থানীয় জনজীবনকে বিঘ্নিত করে, তবে সেই এলাকার অর্থনীতি কখনওই সমৃদ্ধ হবে না। কারখানা গড়ার জন্য আদিবাসী বা কৃষকদের উচ্ছেদ্দ করে তাদের, পুনর্বাসন দেওয়ার পরিবর্তে শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ দিয়েই দায় সারা হয়।” সমীরবাবু মনে করেন, বিনিয়োগের আগে স্থানীয় ক্ষেত্রের সামাজিক সুরক্ষা, নিরাপত্তার বিষয় প্রথমে ভাবতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান রথীন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তথাকথিত ওই সংঘাত থেকে উত্তরণের পথ নিয়েই দু’দিন আলোচনা হবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক তথা প্রাক্তন প্রধান দেবব্রত মিত্রও এ দিনের সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। |