হায়দরাবাদের সাইবারাবাদ থেকে মালদহের নবীনগর। দূরত্ব এতটাই যে, ভি ভি এস লক্ষ্মণের নামই পৌঁছয়নি রাবিয়া বেওয়ার কাছে। গত সপ্তাহেই বাড়ি এসেছিল তাঁর ছেলে ইজাজুল। শনিবার প্রতিবেশীর বাড়ির টিভি থেকে রাবিয়া জেনেছেন সেই ইজাজুল শেখকেই কোনও এক ক্রিকেটারের টাকা হাতানোর অভিযোগে ধরেছে পুলিশ। তার পর থেকেই হতবাক তিনি। বারবার শুধু বলছেন, “আমার ছেলে এ কাজ করতেই পারে না।”
কালিয়াচকের নবীনগর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার জনা দু’য়েক বাসিন্দা জানেন লক্ষ্মণের খ্যাতির কথা। টিভি, কাগজ থেকে বাসিন্দারা জেনেছেন গ্রামের ছেলে ইজাজুলকে এক ক্রিকেটারের টাকা হাতানোয় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অবাক তাঁরাও। শনিবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল বাসিন্দাদের জটলা। সকলের আলোচনার বিষয়ও এক। কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না বিখ্যাত ক্রিকেটারের টাকা তাঁদের গ্রামের ছেলের কাছে এল কী করে! ইজাজুলের কাকিমা সেলিনা বিবি, আজমিরা বিবি বললেন, “আমাদের ইজাজুল কম্পিউটারই জানে না। ও এ কাজ কী করে করবে? ওকে নিশ্চয়ই ফাঁসানো হয়েছে।” |
ইজাজুলের বাবা তিনকড়ি শেখ আলিনগর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান ছিলেন। তিন বছর আগে হৃদরোগে তাঁর মৃত্যু হয়। নবীনগর দক্ষিণপাড়ায় যৌথ পরিবারেই বাস ইজাজুলের পরিবারের। টালির ছাদ দেওয়া পাকা দেওয়ালের বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকলেও টেলিভিশন নেই। নেই কম্পিউটারও। এ দিন ইজাজুলের খবর জিজ্ঞাসা করতেই মা রাবিয়া বললেন, “আমরা বিপিএল পরিবার। আমার ছেলে আগে এমব্রয়ডারির কাজ করত। হরেক মাল বিক্রি করত। কাজের খোঁজে অন্য রাজ্যেও গিয়েছিল। এখন ও কোথায় আছে, কী করে বলতে পারব না। ওর অনেক বন্ধু। ওরাই ছেলেকে ফাঁসিয়েছে।”
তিন ভাই এক বোনের মধ্যে ইজাজুল মেজ। দাদা মামুন, ভাই বাপি ও বোন বিউটির বিয়ে হয়ে গেলেও ইজাজুল বিয়ে করেনি। কালিয়াচক হাইস্কুলে সে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিল। এরপর নানা জিনিসপত্র বিক্রি করত সে। পরিজনেরা জানান, তার পরে দিনমজুরির কাজে দিল্লি ও মুম্বই যায় ইজাজুল। কখনও মাসে একবার, কখনও তিন মাস পর বাড়িতে আসত। তবে গ্রামে এসে সে তিন-চার দিনের বেশি থাকত না বলে জানিয়েছেন ইজাজুলের মা। গত সপ্তাহে শেষ ইজাজুল বাড়িতে এসেছিল। তিন দিন থেকে গত মঙ্গলবার সে চলে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামেরই একাংশ বাসিন্দা অবশ্য দাবি করেছেন, জাল নোট পাচারের অভিযোগে এক বার ইজাজুলকে মুম্বই পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “এই মামলার বিষয়টি বিধাননগর কমিশনারেটের। তবে ইজাজুলের বিরুদ্ধে কোনও পুরনো মামলা রয়েছে কি না তা আমরা খোঁজ করছি।”
শুক্রবার দুপুরে সাইবারাবাদ কমিশনারেটের সাইবার থানায় লক্ষ্মণ অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দশ লক্ষ টাকা ডেবিট হয়ে গিয়েছে। ওই দিন বিকেলে কলকাতার বিধাননগরের কোয়ালিটি মোড়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে দশ লক্ষ টাকা আসায় তা পুলিশে জানান ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, লক্ষ্মণের অ্যাকাউন্টের ওই দশ লক্ষ টাকা চলে এসেছে ওই ব্যাঙ্কে ইজাজুল শেখের অ্যাকাউন্টে। টাকা ঢোকার কিছু পরেই সে টাকা তুলতে ব্যাঙ্কে যায়। তাতেই সন্দেহ হয় ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষের। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে আটক করে পুলিশ। পরে ইজাজুলকে গ্রেফতার করা হয়। |