রাজ্যসভাতেও নোটা, শুরু হয়ে গেল বিতর্কও
বার রাজ্যসভার ভোটের ব্যালটেও ‘না’ ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। দিল্লি থেকে নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশ এসে পৌঁছেছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরে। শনিবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্ত এই খবর জানিয়ে বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই কমিশন এই ব্যবস্থা চালু করেছে।”
কমিশনের এই নির্দেশ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশাও। বিশেষ করে প্রশ্ন উঠেছে, দলের নির্দেশ অমান্য করে ‘নো’ ভোট দিলে কি দলত্যাগ বিরোধী আইনে বিধায়ক পদ খারিজ হতে পারে? রাজ্যসভার ভোট যে হেতু প্রকাশ্যে দেখানোর প্রথা রয়েছে, তাই সহজেই জানা যায়, কে কাকে ভোট দিচ্ছেন। ফলে ‘নো’ ভোট দিলে তা-ও অজানা থাকবে না। আবার সুপ্রিম কোর্টই না-ভোটের ব্যবস্থা করতে বলেছে। তা হলে কি শেষ পর্যন্ত রাজ্যসভার ভোটের ক্ষেত্রে এই বিকল্পটি সামগ্রিক ভাবে অব্যবহৃতই থেকে যাবে? ভয়ে কেউ এই ভোট দেবেন না?
লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেও বিভ্রান্তির সুরই ধরা পড়েছে। তিনি জানান, এক জন নির্বাচিত বিধায়ক দলের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে রাজ্যসভায় ‘না’ ভোট দিলে তাঁর বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের স্পিকারের কাছে আর্জি জানাতে পারে সেই রাজনৈতিক দলটি। একই সঙ্গে তারা দলীয় ভাবে ওই বিধায়কের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাও দেখার। অন্য দিকে আবার এটাও মনে রাখতে হবে, নতুন এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে।
তবে সোমনাথবাবুর এই আশঙ্কাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও বিধায়ক দলীয় নির্দেশ (হুইপ নয়, ডাইরেক্টিভ) না মেনে যদি রাজ্যসভার নির্বাচনে অন্য কাউকে ভোট দেন, অথবা কাউকেই ভোট না দেন সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিধানসভা সেই বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না। কারণ, রাজ্যসভার ভোটে দল কোনও ‘হুইপ’ দিতে পারে না। আর হুইপ না ভাঙলে বিধানসভায় সংশ্লিষ্ট বিধায়কের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনও কার্যকর করা যাবে না। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে কেউ ‘না’ ভোট দিলে সংশ্লিষ্ট বিধায়কের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিতেই পারে।
প্রায় একই মত তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের। তাঁর কথায়, “রাজ্যসভার নির্বাচনে বিধায়করা কাকে ভোট দিচ্ছেন, তা দলের এজেন্টদের দেখিয়ে দিতে হয়। ফলে কোনও বিধায়ক নির্দেশ না মানলে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর হবে না।”
সিপিএম নেতা রবীন দেবের মত আবার ভিন্ন। তাঁর দাবি, দলের নির্দেশ অমান্য করে অন্য কিছু করলে সংশ্লিষ্ট বিধায়কের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে বিধানসভায় অভিযোগ আনা যেতে পারে। কারণ, দলত্যাগ বিরোধী আইনে বলা আছে, নির্বাচিত দলীয় বিধায়কদের দলের নির্দেশ (যে প্রতীক নিয়ে তিনি জিতে এসেছেন) মানতে হবে। এবং রাজ্যসভার ভোট যে হেতু দলের এজেন্টকে দেখিয়ে দিতে হয়, তাই কোনও বিধায়ক দলীয় নির্দেশ না মানলে সেটা সহজেই জানা যায়।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য কিন্তু বিভ্রান্ত। তাঁর মতে, “এ ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। তবে আমাদের রাজ্যে ভোট এতটাই দলভিত্তিক যে, কোনও বিধায়ক দলের নির্দেশ না মেনে কোনও কাজ করবেন বলে মনে হয় না।”
রাজনৈতিক দলের নেতারা যা-ই দাবি করুন, কমিশনের দেওয়া নতুন বিকল্পকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যসভার নির্বাচনে যদি একাধিক বিধায়ক ‘না’ ভোট দেন, তা হলে অনেক হিসেব উল্টে যেতে পারে। বিশেষ করে যে ক্ষেত্রে সংখ্যার বিচারে দলীয় বা নির্দল প্রার্থীর জেতার সম্ভাবনা সুনিশ্চিত করা যাচ্ছে না। প্রশাসনের একটি অংশের মতে, কমিশনের এই নতুন ব্যবস্থা কোনও কোনও ক্ষেত্রে দলগুলিকে সমস্যায় ফেলে দিতে পারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.