মাওবাদী-যোগ লুকোতেই উঠছে মামলা: বিমান
ন্দীগ্রাম আন্দোলন পর্বে মাওবাদীদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ নিয়ে হামেশাই সরব হত সে সময়ের শাসক বামফ্রন্ট। নন্দীগ্রাম মামলায় সিবিআইয়ের চার্জশিট এবং তার পরেই নন্দীগ্রাম আন্দোলন-পর্বের ৩০৩টি মামলা প্রত্যাহার করার সরকারি সিদ্ধান্তকে বিঁধতে তৃণমূল-মাওবাদী আঁতাঁতের অভিযোগ ফিরিয়ে আনলেন বামেরা। ২০১১-র বিধানসভা ভোটে বাম জমানার অবসানের পিছনে নন্দীগ্রাম কাণ্ড এবং সিঙ্গুর পর্বের অবদান অস্বীকার করেন না শাসক দলের শীর্ষ নেতারা। ঘটনাচক্রে ফের যখন এই বিতর্ক উস্কে উঠেছে, তখনও দুয়ারে আর এক ভোট। লোকসভা, ২০১৪।
রাজ্য মন্ত্রিসভার এক বৈঠকের পরে শুক্রবার নবান্নে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের ৪২৫টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকার মনে করছে, রাজনৈতিক অভিসন্ধি ও প্রতিহিংসামূলক কারণে ওই মামলাগুলি দায়ের হয়েছিল। শনিবার দুর্গাপুরের পলাশডিহায় ওই সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “২০০৭ থেকে ২০০৯ সালে নন্দীগ্রামে ৩৪ জন বামফ্রন্টের কর্মীকে খুন করা হয়েছে। প্রত্যেকেই জানে কাদের বাঁচানোর জন্য মামলা প্রত্যাহারের কথা বলা হচ্ছে। কারণ, তৃণমূল ও তৎকালীন সময়ে যারা তৃণমূলের সহোদর ছিল, সেই তথাকথিত মাওবাদীরা সব ধরা পড়ে যাবে। তাই মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।”
সভার ফাঁকে। দুর্গাপুরে বিমান বসু। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
আবার এ দিনই ‘ফেসবুক’-এ নিজের প্রোফাইলে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন লিখেছেন, ‘সিপিএমের দুষ্কৃতীরা সাতেঙ্গাবাড়ি (নন্দীগ্রাম ২ ব্লক) গ্রামে লুঠপাট, বাসিন্দাদের ঘরে আগুন লাগানোর পরে কারা সে গ্রাম পাহারা দিচ্ছিলেন? সঙ্গে দেশি বন্দুক রাখা, সে সব ব্যবহারে প্রশিক্ষিত সেই যুবকেরা কারা?... কারা তা সংগঠিত করেছিল?” ঘটনা হল, নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন পর্ব এবং তার পরেও এই কবীর সুমনের ভূমিকা নিয়েই বিভিন্ন বাম শিবির থেকে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন তোলা হত।
বামেদের অভিযোগ ‘পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন পর্বে সামনের সারিতে থাকা তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, “নন্দীগ্রামে সিপিএম কী বীভৎস অত্যাচার চালিয়েছে সেটা শুধু রাজ্য কেন, দেশের মানুষ জানেন। তাই ওঁদের অভিযোগে কেউ গুরুত্ব দেবেন না।” তাঁর সংযোজন, “৩৪ বছরের অপশাসনের পরে, এই সরকারের আমলেই জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে। কিষেণজির (মাওবাদী শীর্ষ নেতা) মৃত্যু হয়েছে।”
বিমান বসু এ দিন বলেন, “কোর্টের নির্দেশে সিবিআই ওই তদন্তের (নন্দীগ্রাম-কাণ্ড) দায়িত্ব নেয়। মামলা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত কোর্টই নিতে পারে। সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে পারে না। আদালত যদি মামলা প্রত্যাহার না করে, তা হলে শেষ রক্ষা হবে না।”
২০০৭-এর ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে ১৪ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। সেই সময় একটি দেহ শনাক্ত হয়নি। এই পর্ব থেকেই বামেরা অভিযোগ তুলতে শুরু করেন, বহিরাগতেরা নন্দীগ্রামে ঢুকে অশান্তি করছে। তখন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের অভিযোগ ছিল, “কিছু অতি-বাম শক্তি নন্দীগ্রামে সক্রিয়।”
২০০৮-এর পঞ্চায়েত, ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে বিপুল জয় পায় তৃণমূল। ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে সোনচূড়ায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান নিশিকান্ত মণ্ডল খুনের পরে নন্দীগ্রামে মাওবাদী-উপস্থিতির প্রমাণ পায় পুলিশ। ওই মামলায় মাওবাদী নেতা তেলুগু দীপক এবং মধুসূদন মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়। নিশিকান্ত হত্যা মামলার তদন্তেও উঠে আসে মাওবাদী কার্যকলাপের কথা। পুলিশ সূত্রের খবর, সোনাচূড়া থেকে একটি রাইফেল উদ্ধার করেছিল তারা। ব্যালিস্টিক রিপোর্টে জানা যায়, ওই রাইফেলটি পুরুলিয়ার সিপিএম নেতা রবীন্দ্রনাথ করকে সস্ত্রীক খুনের পরে তাঁর দেহরক্ষীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল মাওবাদী জঙ্গিরা।
২০১০-এর শেষ দিকে পুরুলিয়া থেকে অন্যতম মাওবাদী নেতা বিক্রমের নামে সংবাদমাধ্যমকে পাঠানো বিবৃতিতে একাধিক বার দাবি করা হয়, নন্দীগ্রাম আন্দোলনে তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে ছিলেন। সে সময় কেন্দ্রের কাছে তৃণমূল এবং মাওবাদী ‘আঁতাঁত’ নিয়ে একপ্রস্ত অভিযোগ জানিয়ে আসেন সীতারাম ইয়েচুরির মতো সিপিএমের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু ২০১১-য় বিধানসভা ভোটে বামদের হারের পরে মাওবাদী-প্রসঙ্গটা পিছনের সারিতে চলে গিয়েছিল।
মাওবাদী-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বামেদের অভিযোগের জবাবে পরিবর্তনের আগে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বলতেন, ‘ও সব মনগড়া’। বামেরা ফের সে প্রসঙ্গ তোলায় ক্ষুব্ধ নন্দীগ্রামের তৎকালীন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতা শেখ সুফিয়ান। বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি এই তৃণমূল নেতার বক্তব্য, “নন্দীগ্রাম মামলার চার্জশিটে সিবিআই জমি আন্দোলনকারীদেরই নাম দিয়েছে। আমাদের সঙ্গে মাওবাদীরা থাকলে, চার্জশিটে তো তাদেরও নাম থাকত?”
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেছেন, “যা বলার, রবিবার (আজ) সাংবাদিক বৈঠক করে বলব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.