জবানবন্দিতে ও সব বলিনি, সাক্ষ্য অর্পিতার
প্রথম বার অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সাক্ষ্য দিতে আসেননি। এ বার যখন এলেন, তখন দেখা গেল, পেশ হওয়া পুরনো জবানবন্দির সঙ্গে তাঁর এখনকার সাক্ষ্যের অনেক তফাৎ।
সারদা মামলায় অভিযোগকারিণী অর্পিতা ঘোষ শনিবার আদালতে জানালেন, তাঁর জবানবন্দি বলে পুলিশ যে তথ্য আদালতে পেশ করেছে, এর কিছু অংশ তাঁর নিজের নয়। এমনকী, গত বছরের ১৬ এপ্রিলে ওই জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ আদালতকে যা জানিয়েছে, তা-ও অস্বীকার করেছেন অর্পিতাদেবী। শনিবার বিধাননগর এসিজেএম কোর্টে দাঁড়িয়ে অর্পিতাদেবী বলেন, ১৬ এপ্রিল নয়, ওই জবানবন্দি তিনি দিয়েছিলেন ওই মাসের ১৯ তারিখে।
গত বছর ১৬ এপ্রিল বিধাননগরের পাঁচ নম্বর সেক্টর থানায় অর্পিতাদেবী সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে সংস্থার কর্মীদের বকেয়া বেতন না দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ডিসেম্বর মাসে ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী ছিলেন ওই সংস্থারই কর্মী বিমল গিরি।
আদালত থেকে বেরিয়ে অর্পিতা ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র।
তিনিও তাঁর জবানবন্দি হিসেবে পুলিশের পেশ করা তথ্যের সবটা স্বীকার করেননি। এমনকী, সে দিনও পুলিশের কাছে তাঁর জবানবন্দির সঙ্গে আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যের অনেক বয়ানেরই মিল ছিল না। দ্বিতীয় সাক্ষী হিসাবে এ দিন হাজির ছিলেন অর্পিতাদেবী।
বিধাননগর আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্বাতী মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে এ দিন সাক্ষ্য গ্রহণ-পর্বে অর্পিতাদেবীকে তাঁর দেওয়া জবানবন্দির কিছু অংশ পড়ে শোনান অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা। সেখানে যা লেখা আছে বলে পড়ে শোনানো হয়, তা এ রকম সুদীপ্ত সেন ও তাঁর কয়েক জন সঙ্গী (সারদা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার কর্তা) মিলে অসাধু উপায়ে টাকা রোজগার করেছেন। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে তা সারদার নানা সংস্থায় খাটানো হয়েছে।
এই কথা শুনেই অর্পিতাদেবী আদালতে জানান, তিনি পুলিশকে এ সব কিছুই বলেননি।
সরকারি কৌঁসুলি শেখর চক্রবর্তীর প্রশ্নের উত্তরে অর্পিতা জানান, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সারদার একটি চ্যানেলে এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসাবে যোগ দেন তিনি। বেতন বাবদ প্রায় ৮৫ হাজার টাকা পেতেন। ওই সংস্থায় ছ-সাত মাস তিনি চাকরি করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী কালে ওই চ্যানেল চালু হয়নি। অর্পিতাদেবী আদালতকে জানান, ওই সংস্থার কর্মীদের আড়াই মাস বেতন দেওয়া হয়নি। ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনের একটি ই-মেল পান। সেখানে ওই সংস্থা বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। একই সঙ্গে কর্মীদের বকেয়া মেটানোরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
অর্পিতার বক্তব্য, ওই ই-মেল পাওয়ার দিন কুড়ি আগেই অফিসের জল ও বিদ্যুতের সংযোগও কেটে দেওয়া হয়েছিল। বাইরে থেকে ফোন করে সমস্ত কর্মীদের দফতর ছেড়ে চলে যেতেও বলা হয়েছিল। পুলিশের কাছে এই কথাগুলিই তিনি জানিয়েছিলেন বলে আদালতে এ দিন অর্পিতা ঘোষ দাবি করেন।
সাক্ষী জানান, এর পরেই তিনি ও অফিসের অন্য কর্মীরা সারদা কর্তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। লিখিত অভিযোগ বাইরে থেকে লিখিয়ে ১৬ এপ্রিল অফিসেরই এক কর্মীকে দিয়ে থানায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোন থানায় ওই অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছিল বা কে সেটি তাঁর হয়ে থানায় পৌঁছে দিয়েছিলেন, তা অবশ্য এ দিন আদালতে মনে করতে পারেননি অর্পিতাদেবী।
এ দিনই বিধাননগর আদালতে প্রথম শ্রেণির বন্দি মর্যাদা চেয়ে আবেদন জানান সারদা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। কিন্তু সরকারি আইনজীবীরা তার বিরোধিতা করায় আদালতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন কুণালবাবু। কোর্ট লক-আপ থেকেই তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, তাঁকে প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। কুণালের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন। তাঁকে দেখিয়ে কুণাল বলেন, ওঁকে জিজ্ঞেস করুন, আমি টাকা নিয়েছি কি না। কুণালের আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা আদালতে দাবি করেন, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে রাজ্য সরকার। পর্যাপ্ত মর্যাদা না দিয়ে সাংসদকে বিদ্রুপ করা হচ্ছে। রাজ্য প্রশাসনের একাংশ অবশ্য বলছেন, ব্রিটিশ আমলে প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণি বন্দির কোনও অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পরে সেই প্রথা বিলোপ হয়ে গিয়েছে। জেল এখন সংশোধনাগার। সেখানে কেবল রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদাই পৃথক ভাবে দেওয়া হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.