|
|
|
|
টানিয়ামের মৃত্যু নিয়ে দিল্লিতে বিক্ষোভ |
নিজস্ব প্রতিবেদন
১ ফেব্রুয়ারি |
অরুণাচলের ছাত্র নিদো টানিয়ামকে হত্যার প্রতিবাদে দক্ষিণ দিল্লির লাজপত নগরে বিক্ষোভ দেখালেন উত্তর-পূর্বের হাজার দু’য়েক ছাত্র-ছাত্রী।
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, দেশের রাজধানীতে বারবার উত্তর-পূর্বের পড়ুয়াদের হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হচ্ছে না। শনিবার দিনভর বিক্ষোভের পরে পুলিশের কাছ থেকে দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির আশ্বাস পেয়ে ধর্না-বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন উত্তর-পূর্ব ছাত্র সংগঠন, অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ও জেএনইউ-এর ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
উত্তর-পূর্ব ছাত্র সংগঠনের সচিব সিনাম প্রকাশ বলেন, “কেন্দ্র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও দিল্লি সরকারকে অনুরোধ,
|
নিদো টানিয়াম |
উত্তর-পূর্ব থেকে যাঁরা দিল্লি বা ভারতের অন্যত্র পড়তে ও কাজ করতে যাচ্ছেন, তাঁদের নিরাপত্তা ও সম্মান যেন অক্ষুন্ন থাকে।” অরুণাচল প্রদেশ ছাত্র সংস্থা আকাশদীপ এলাকা থেকে রাজভবন পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করে। উত্তর-পূর্বের ছাত্রদের সুরক্ষা দিতে না-পারায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিনং এরিং ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সমালোচনায় মুখর হয় তারা। এ দিন রাতে টানিয়ামের দেহ ইটানগরের সি সেক্টরে, তাঁদের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন বহু মানুষ।
অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যপাল নির্ভয় শর্মা টানিয়ামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করার পাশাপাশি দিল্লির পুলিশ প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ঘটনায় তদন্ত দ্রুত করার ব্যপারে ব্যবস্থা নিতে রাজ্যের ডিজিকে নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, টানিয়ামের দেহ তাঁদের আদি বাড়ি তথা তাঁর বাবা, কংগ্রেস বিধায়ক নিদো পবিত্রর বিধানসভা আসন রাগায় নিয়ে যাওয়া হবে।
ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের বিষয়ে দিল্লি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার রবিন হিবু আজ বলেন, “ইতিমধ্যে তিন জনকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুন ছাড়াও তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের যুবকের উপর অত্যাচারের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।” তবে মৃত্যুর কারণ এখনও নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, মারধরের জন্য শরীরের ভিতরে আঘাত লেগেই নিদোর মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট হবে। |
|
মুখ ঢেকেছে প্রতিবাদে। টানিয়ামের হত্যার বিচার চেয়ে শনিবার
নয়াদিল্লির লাজপত নগর থানার সামনে বিক্ষোভ তরুণীর। ছবি: পিটিআই। |
টানিয়ামের আত্মীয়দের দাবি, লাজপত নগর পার্ট-১ এলাকায় একটি মিষ্টির দোকানে কোনও বাড়ির ঠিকানা জানতে চেয়েছিলেন টানিয়াম। ওই সময় তাঁর চুলের আকার ও রং নিয়ে কয়েকজন ব্যঙ্গ করে। প্রতিবাদ করে তাদের ক্ষমা চাইতে বলেন টানিয়াম। তখনই বিবাদের শুরু। ক্রুদ্ধ টানিয়াম দোকানের কাচ ভেঙে ফেলায় দোকানদার তাঁকে রড দিয়ে মারধর করে। টানিয়ামের সঙ্গে তিন বন্ধু ছিলেন। তাঁরা ফোনে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ বিষয়টি নিজেদের মধ্যেই মিটিয়ে নিতে বলে। টানিয়ামের পরিবারের দাবি, পুলিশ টানিয়ামকে মিষ্টির দোকানের মালিককে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলে। টাকা দিয়ে গ্রিন পার্কের দিকে রওনা হয় টানিয়াম। লাজপত নগরের একটি গলিতে ফের ওই যুবকরা তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর করে। টানিয়াম ফের থানায় যায়। পুলিশের দাবি, তখন তিনি নিজেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি।
এ দিকে ওই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। এর জন্য কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারকে দায়ী করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রতিনিধি দল বিজেপি নেতা তথা দিল্লি বিধানসভার বিরোধী নেতা হর্ষবর্ধনের সঙ্গে দেখা করেন। পরে হর্ষবর্ধন বলেন, “আমি আশা করব ওই মর্মান্তিক ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তৎপর হবেন।” বিজেপি শিবিরের অভিযোগ, আম আদমি সরকার দিল্লিবাসীর নিরাপত্তা সুনিশ্চত করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। অন্য দিকে, এ নিয়ে পুলিশের ঘাড়েই দায় চাপিয়েছে আপ শিবির। দলের বক্তব্য, দিল্লি পুলিশ সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলেছে। পুলিশ সক্রিয় থাকলে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। এটা কেন্দ্রেরই ব্যর্থতা। দিল্লি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের দাবিতে সরব রয়েছে আপ।
দিল্লির ঘটনার প্রেক্ষিতে সতর্ক থাকতে চাইছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তার রেশ ধরে এখানে কোনও গোলমাল যাতে তৈরি না-হয় সে জন্য বিভাগীয় প্রধান ও বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষকে সতর্ক থাকার বার্তা দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এ কথা জানান। কলকাতার নাগা স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অবশ্য ঘটনাটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চুমচামবেনি ওদিও বলেন, “এর পর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের অন্যত্র পড়তে যাওয়ার আগে দু’বার ভাববেন। বিশেষত দিল্লি যাওয়ার আগে তো বটেই।”
|
পুরনো খবর: দিল্লিতে অরুণাচলের ছাত্র-মৃত্যুতে উত্তেজনা |
|
|
|
|
|