কাজের টোপ দেখিয়ে চলছে নারীপাচার,
মাঝপথে ঘটে চলেছে যৌন নির্যাতনও
কারও সামনে টোপ ঝোলে, বিউটি পার্লারে কাজ পাওয়ার। কেউ জানে, নাচ-গান করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের। কেউ আবার পরিচারিকার চাকরির আশ্বাসেই খুশি। অনেকে অবশ্য জানেই না, কী কাজে লাগানো হবে বলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে। কোথায় গেলে মিলবে চাকরি? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর মেলে, “অত সব জেনে কী হবে? ভরসা রাখো, ঠিক কাজ জুটে যাবে।”
কোথায় যাবে, কোথায় থাকবে, কে দেবে চাকরি এ সব কোনও প্রশ্নের সদুত্তর থাকে না বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে এ দেশে ঢুকে পড়া মেয়েদের। যার ফলশ্রুতিতে অনেক সময়েই যৌন নির্যাতন এমনকী ধর্ষণের শিকার হতে হয় এই সব মেয়েদের। অনেককেই যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। দালাল, ফড়েদের হাতেও নির্যাতিতা হতে হয় এদের। সীমান্তের ও পার থেকে নারীপাচার বন্ধ না হওয়ায় কত শত মেয়েকে এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেই সঠিক সংখ্যাটা অবশ্য অজানা। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয় এই সব মেয়ের হদিস মেলে না। অনেকে আবার ভয়ে মুখ খোলে না। অনুপ্রবেশকারী হিসাবে পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হবে না বলে আশঙ্কা থাকে এই মেয়েদের।
উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার আঙরাইল, বনগাঁর কালিয়ানি পিরোজপুর, বাগদার বয়রা, রণঘাট সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে এ দেশে ঢোকানো হয় এই মেয়েদের। তার পরে দালালরাই তাঁদের নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করে। সেখান থেকে তাঁরা যান মুম্বই, পুণে, দিল্লি-সহ ভারতের বড় শহরগুলিতে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যৌনপল্লিতে ‘কাজ’ জোটে তাঁদের। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার একাংশের বক্তব্য, বাংলাদেশ থেকে আসা মেয়েদের বেশিরভাগেরই পারিবারিক অবস্থা খুব খারাপ। ভাল কাজের টোপ দিয়ে নিয়ে আসা হয় তাঁদের। তারপরে এ দেশে এসে শুরু হয় অত্যাচার। বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁদের উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়। ভয়ে তাঁরা সে কথা কাউকে বলতে পারেন না। দেশে ফেরার পথও বন্ধ হয়ে যায়। এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, “ভারতের বড় শহরগুলিতে নিয়ে গিয়ে ওদের যৌন ব্যবসায় লাগানো হয়। কিছু মেয়ে স্বেচ্ছায় তা মেনেও নেয়। কিন্তু ভয়ে তারা কাউকে সে কথা বলতে পারেন না। যাঁরা মানতে চান না, তাঁদের উপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ভয়-ভীতি দেখানো হয়। তারপরে তারা নিজে থেকেই ওই কাজে যুক্ত হয়ে পড়ে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ থেকে মুম্বই পর্যন্ত সক্রিয় একটা চক্র। তাদের মাধ্যমে ওই মেয়েরা তাদের রোজগারের অর্থ বাড়িতে পৌঁছিয়ে দেয়। আঙরাইলের এক বাসিন্দার কথায়, “দেখতে একটু ভাল হলে ধর্ষণ তো বাঁধা। অনেকেই আমাদের কাছে এসে কান্নাকাটি করে। মাঠে পড়ে থাকতে দেখি। কিন্তু আমাদের কিছুই করার থাকে না।” খেদাপাড়ার কয়েক জন বাসিন্দা জানান, রাতের দিকে মাঝে মধ্যেই মেয়েদের চিৎকার শুনতে পাই। বুঝতে পারি, অত্যাচার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে উপায় থাকে না বলে মেনে নেয়।
গোয়েন্দারা জানান, প্রথমে বাংলাদেশি দালালরা গরিব পরিবারের মেয়েদের ‘টার্গেট’ করে। তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বুঝিয়ে বা টাকা দিয়ে এ দেশে নিয়ে আসা হয়। কিছু দিন আগে যেমনটা হয়েছিল চট্টগ্রামের দুই বোনের ক্ষেত্রে। তাদের কাকাকে দালালরা বুঝিয়ে এ দেশে নিয়ে এসেছিল।
এলাকার মানুষ জানালেন, সীমান্তের গ্রামগুলিতে নির্দিষ্ট ঘর রয়েছে, যেখানে এই মেয়েদের প্রথমে তোলা হয়। মাঝি থেকে শুরু করে মুম্বই বা অন্য কোনও শহরে পৌঁছনোর পথে বিভিন্ন স্তরেই যৌন নির্যাতনের শিকার হন তাঁরা। এমনকী জওয়ানদের বিরুদ্ধেও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে কিছু ক্ষেত্রে। কয়েক মাস আগেই একটি বাস থামিয়ে সাত জন বাংলাদেশি তরুণীকে আটক করে গাইঘাটা পুলিশ। জেরায় তারা শুধু এটুকু বলতে পেরেছিল যে তারা মুম্বইতে কাজের জন্য যাচ্ছে। কিন্তু কাজটা কী, তা নিয়ে কোনও ধারণাই নেই তাঁদের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁর সীমান্ত এলাকার সর্বত্র কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। রাতের অন্ধকারে এই পাচার হচ্ছে। একবার এ দেশে ঢুকে পড়লে সনাক্ত করাও মুশকিল হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনায় একের পর এক ধর্ষণ, নারী নিগ্রহের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন রাজ্য প্রশাসন-পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। খোদ মুখ্যমন্ত্রীও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। জেলা জুড়ে নারী নিগ্রহ ঠেকাতে এক গুচ্ছ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে যে সব মেয়েরা এ দেশে ঢোকে, তাদের উপরে যৌন নির্যাতন ঠেকানোর উপায় নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারাও চিন্তায় আছেন। সমস্যার প্রকৃতি এ ক্ষেত্রে অনেকটাই আলাদা। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “সীমান্ত এলাকায় পোস্টার-লিফলেটের মাধ্যমে আমাদের নম্বরে যোগাযোগের কথা বলা হচ্ছে। বিএসএফের সঙ্গে যৌথ ভাবে নারী পাচার নিয়ে বৈঠক হয়েছে। থানাগুলিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।” ভাস্করবাবুর কথায়, “বিদেশের মাটিতে কার সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যার কথা জানাবেন, তা-ই জানেন নায় ভয়ও পান। এ জন্যই প্রচার করা হচ্ছে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.