সঙ্গীত সমালোচনা ২...
গুরুর শেখানো পথে
ডাইমেনশন ফোর ‘জন্মভূমি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে। যেখানে কবিতা রূপ নিয়েছিল গানে। দ্বিজেন্দ্রলালের কবিতা পাঠে ছিলেন অপর্ণা সেন। নূপুরছন্দা ঘোষের কণ্ঠে সেই গান হয়ে মূর্ত হয়ে উঠছিল। তাঁর সঙ্গে ছিল ছাত্রছাত্রীরা। কালজয়ী স্বদেশী সঙ্গীত প্রবর্তন করেছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত ও অতুলপ্রসাদ। অনুষ্ঠান শুরু হয় নূপুরছন্দার ‘পরম্পরা’ শীর্ষক একটি সিডি প্রকাশ দিয়ে, যেখানে কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় ও নূপুরছন্দার সাতটি করে গান। এর পর অপর্ণা সেনের কণ্ঠে ‘যেদিন সুনীল জলধি হইতে’ ও অতুলপ্রসাদের ‘উঠো গো ভারতলক্ষ্মী’ পাঠ ও নূপুরছন্দার সুললিত কণ্ঠে গান ও কবিতা এক অনবদ্য রূপ নিয়েছিল। দ্বিতীয়ার্ধে নূপুরছন্দার একক পরিবেশনা শ্রোতার মন ভরায়। পরিচিত গানের পাশাপাশি স্বল্পশ্রুত গানেও তিনি সমান স্বচ্ছন্দ। বাগেশ্রী রাগে অতুলপ্রসাদের ‘কার লাগি সজল আঁখি’ শ্রোতাদের মন ছুঁয়েছে। পরপার নাটকের ‘এ জীবনে পুরিল না সাধ’ গানটি মুক্তছন্দে শুনতে মন্দ লাগেনি। ‘আজি এসেছি’ গানটি বুঝিয়ে দেয় শিল্পীর শিক্ষার গভীরতা, রেওয়াজি গলা ও কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের গায়কি কত অক্লেশে তার আয়ত্তে। উপস্থাপনায় অমিত রায় ও শাহাজাদ হোসেন।

মনে রাখার মতো
কবি জয় গোস্বামী ষাট বছরে পদার্পণ করার জন্য থিয়েটার রিদম ‘জয়জয়ন্তী’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন শিশির মঞ্চে। অগ্রজ কবি শঙ্খ ঘোষ সহ উপস্থিত ছিলেন নবকুমার বসু, অভিরূপ সরকার, ড. পূর্ণেন্দু রায় ও অধ্যাপিকা শিউলি সরকার। জয় গোস্বামীর হাতে শঙ্খ ঘোষ পুষ্পস্তবক তুলে দেন। অভিরূপ সরকার ‘নুন’ কবিতাটি পাঠ করেন আন্তরিকতার সঙ্গে।
জয় গোস্বামীর কবিতা আর রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে পরিবেশিত হল ‘প্রেমে প্রতিবাদে জয়’ শীর্ষক শ্রুতিনাটক। শিল্পী ছিলেন দেবশংকর হালদার, নাতাশা দাশগুপ্ত, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত ও বিজয়লক্ষ্মী বর্মন। যন্ত্র সহযোগিতায় সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত। অনুষ্ঠানটি শ্রুতিনাটকের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকল। দেবশঙ্কর, বিজয়লক্ষ্মীরা তো স্বনামখ্যাত, কিন্তু নাতাশা দাশগুপ্তকে এই প্রথম শুনলাম এবং বলতে দ্বিধা নেই তাঁর কণ্ঠস্বর আকর্ষণীয় ও সেই স্বরকে তিনি নাটকের প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ বুঝে সঠিক ব্যবহার করেন। বিশেষ করে প্রেমের অংশে তিনি দেবশঙ্করের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়েছেন। আর মাঝে মাঝে মুহূর্ত অনুযায়ী স্বাগতালক্ষ্মীর গলায় এসেছে গান যা নিয়ে অধিক কিছু বলার থাকে না।

পরিপূর্ণ হল যখন
সম্প্রতি মধুসূদন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল কসবা সঞ্চারীর ‘নববর্ষে রবিকিরণ’। শুরুতেই অপূর্ব গাইলেন গোপাল পাত্র ‘আমার খেলা যখন ছিল তোমার...’। স্বপ্না ঘোষাল গাইলেন, ‘আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা’। এ দিন শিল্পীদের গান নির্বাচনে ছিল নতুন বছরের আবাহন। নতুন পথের দিশায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া। তাই সুছন্দা ঘোষের ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে’, ‘আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ’ যেন সেই স্বপ্নের মায়াজাল বোনে। অনুশীলা বসুর ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’ ও বাসবী বাগচীর ‘কবে আমি বাহির হলেম’ অনুষ্ঠানে এক অন্য মাত্রা পায়। পরিপূর্ণ ভাবে নতুন বছরের আবাহনে নিজেকে মিলিয়ে দিলেন শিল্পী সুচরিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দিবস রজনী আমি যেন কার’ গানটিতে। সেই আমেজকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখলেন দীপঙ্কর পাল যখন গাইলেন ‘আমি যখন তার দুয়ারে।’ অনুষ্ঠানটির সামগ্রিক পরিকল্পনায় ছিলেন অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়।

নজর কাড়ে প্রান্তিক শিশুরাও
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সার্ধশত জন্মবর্ষে সুকুমার রায়ের একশো পঁচিশতম জন্মবার্ষিকী ও সত্যজিৎ রায় স্মরণ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হল খড়দহ রবীন্দ্রভবনে। আয়োজক রবিরঞ্জিনী। ‘আমি কী গান গাব’, ‘এসো হে’ প্রভৃতি সমবেত রবীন্দ্রগানগুলির সুর ও লয়ের সঠিক চলনে প্রাণ পেয়েছে। এর সঙ্গে পাপিয়া সিংহ দেবনাথের পাঠ ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ কবিতায় অন্য স্বাদ পাওয়া যায়। রবিরঞ্জিনীর সমবেত সঙ্গীত ও নৃত্যানুষ্ঠান দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে স্বপ্নিলের উপস্থাপনায় প্রান্তিক শিশুদের শ্রুতিনাটক ‘ইঁদুরের ভোজ’ মঞ্চস্থ হয়। নাটকটির পরিকল্পনা ও পরিচালনায় আত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-এর নির্দেশনা ও অভিনয়ে ‘তিনরায়’। অনুষ্ঠানে ছিলেন পৌলমী বসু ও দ্বিজেন বন্দ্যোপাধায়।

গানের ভুবনে
কবি, সাহিত্যিক রণজিৎকুমার সেনের স্মরণে সুন্দর অনুষ্ঠান উপহার দিল ‘গানের ভুবন’। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু থেকে অমৃতে উত্তরণের গান ও কবিতার সমন্বয়ে ‘তুমি আমার চিরকালের’ শিরোনামে। সুছন্দা ঘোষের ভাবগভীর কণ্ঠে ‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম’ ও দীপান্বিতা সেনের দরদি কণ্ঠে ‘তোমায় নতুন করে’ রবীন্দ্রগান দু’টি সে দিন অসাধারণ মাত্রা পেয়েছে। সংযুক্তা ভাদুড়ি, চন্দ্রা মহলানবীশ, অশোক ঘোষ, অব্যয় চট্টোপাধ্যায় ও টুলটুল ভট্টাচার্য তাঁদের উপলব্ধি ও আন্তরিকতা দিয়ে গান গেয়েছেন। রবীন্দ্রকবিতা আবৃত্তিতে বিবেকানন্দ হাজরা ও পরিচালিকা দীপান্বিতা সেন বিশেষ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। তবলা ও পারকাসনে স্বপন আচার্য ও উদয় হালদার।

দিবস রজনী আমি যেন
সম্প্রতি শিশির মঞ্চে ‘ভাবনা’র অনুষ্ঠানে গানে ছিলেন অনিন্দ্যনারায়ণ বিশ্বাস এবং পাঠে শ্রাবণী সেন। দু’টি পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানে অনিন্দ্যনারায়ণ রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন। ‘দিবস রজনী আমি যেন’ গানটি শুনতে বেশ লাগে। ‘জননী তোমারে করুণ চরণখানি’, ‘দাঁড়ায়ে গৃহদ্বারে জননী ডাকিছে’ শুনতে মন্দ লাগে না। কিশোর রবীন্দ্রনাথের রোম্যান্টিসিজমের অনেকখানি জুড়ে আছে তাঁর নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবী। গীতবিতানের প্রেম পর্যায়ের গান ‘তোমারে করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা’ গানটি শিল্পীর কণ্ঠসৌকর্যে উপভোগ্য হয়। সঙ্গে শ্রাবণী সেনের দরদি কণ্ঠে পাঠ শ্রোতাদের প্রত্যাশা পূরণ করে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.