ভিন্ জেলায় প্রশিক্ষণ, ক্ষুব্ধ পিটিটিআই পড়ুয়ারা
প্রাথমিকের ব্রিজ কোর্স পড়তে পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকাংশ যুবক-যুবতীকে যেতে হবে মুর্শিদাবাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এই নির্দেশিকা দিয়ে শুক্রবার তমলুকে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের অফিসে জেলার প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। নোটিসে জানানো হয়েছে, আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকেই ওই প্রশিক্ষণ কোর্সের ভর্তি ও ক্লাস শুরু হবে। ওই তালিকা দেখে ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সংসদ অফিসের সামনে পুলিশ পিকেট বসানো হয়।
সংসদ অফিসে প্রাথমিকের ব্রিজ কোর্সের জন্য এ দিন জেলার ৯৩৩জনের নামের তালিকা প্রকাশিত হয়। তার মধ্যে প্রতিবন্ধী ও মহিলা মিলিয়ে মাত্র দু’শো জন প্রার্থীকে পাঁশকুড়ার একটি বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ব্রিজ কোর্স পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। জেলার বাকি ৭৩৩জনের ব্রিজ কোর্সের জন্য মুশির্দাবাদ জেলার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নাম দেওয়া হয়েছে। তালিকায় মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, ডোমকল ও জলঙ্গির তিনটি প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ কেন্দ্রের নাম রয়েছে। কোর্সের জন্য প্রতি সপ্তাহে একদিন করে কলেজে যেতে হবে। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি গোপাল সাহু বলেন, “জেলায় ব্রিজ কোর্সে মোট ৯৩৩ জন প্রশিক্ষণ প্রার্থী রয়েছেন। কিন্তু জেলার একটি সরকারি ও ১১টি বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ কেন্দ্রে এখন কর্মরত প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলছে।” তিনি জানান, জেলায় একমাত্র পাঁশকুড়ার হাউরে একটি বেসরকারি শিক্ষক শিক্ষণ কেন্দ্রে ২০০টি আসন ফাঁকা রয়েছে। এ দিন প্রকাশিত তালিকায় ওই শূন্য আসনে প্রতিবন্ধী ও মহিলা মিলিয়ে ২০০ জনকে ব্রিজ কোর্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন হল, জেলার ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণের জন্য পড়শি জেলার কেন্দ্রে পাঠানো হল না কেন?
গোপালবাবু বলেন, “পাশ্ববর্তী জেলাগুলির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে ব্রিজ কোর্সের জন্য আসন খালি নেই। তাই মুর্শিদাবাদের তিনটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জেলার বাকি ৭৩৩জনের ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের কোনও ভূমিকা নেই।”

পুলিশি পাহারায় জেলা সংসদে প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ।
প্রশিক্ষণ প্রার্থী ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, কয়েকবছর আগেই তাঁরা এক বছরের পিটিটিআই প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারপরেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি না পাওয়ায় তাঁরা অমনিতেই সঙ্কটে রয়েছেন। এখন বাকি এক বছরের ব্রিজ কোর্স করতে তাঁদের কয়েকশো কিলোমিটার দূরে মুর্শিদাবাদে যেতে হবে বলে নোটিস দেওয়া হয়েছে। এরফলে তাঁদের আরও চরম আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে। উল্লেখ্য, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি প্রার্থীদের দু’বছরের প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স করতে হবে। ঠিক হয়েছে, যেসকল প্রার্থী ইতিমধ্যে এক বছরের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের আরও এক বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পর্ষদ এনসিটিই-এর নির্দেশিকা মেনে এইসব প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের এক বছরের ব্রিজ কোর্স পড়ার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তির ব্যবস্থা করছে। এ দিন পর্ষদের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের জেলা ভিত্তিক নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এ দিন সংসদের অফিসে ওই তালিকা দেখতে এসেছিলেন হলদিয়ার নমিতা সামন্ত, অনিল প্রামাণিক, কোলাঘাটের দেউলিয়ার অনিমেষ ধাড়ারা। তালিকা অনুযায়ী নমিতাদেবীকে ব্রিজ কোর্সের প্রশিক্ষণের জন্য যেতে হবে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর মহকুমার মথুরাপুর ডিএড কলেজে। তালিকা দেখে ক্ষুব্ধ নমিতাদেবী বলেন, “প্রায় ১০ বছর আগে হলদিয়ার একটি কেন্দ্র থেকে এক বছরের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। এখনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি মেলেনি। এখন আবার এক বছরের প্রশিক্ষণ নিতে মুর্শিদাবাদ জেলায় যেতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এই তুঘলকি সিদ্ধান্তের জেরে আমরা চরম সমস্যায়। আর এই প্রশিক্ষণের পরেও যে আমাদের চাকরি মিলবে তাঁর নিশ্চয়তা কোথায়?” প্রশিক্ষণ নিতে হলদিয়ার অনিল প্রামাণিককে যেতে হবে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির গঙ্গাপদ ইন্সটিটিউট অফ ডিএড কলেজে। অনিমেষবাবু বলেন, “প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির জন্য অনেক কষ্ট করে এক বছরের প্রাথমিক কোর্স করেছিলাম। কিন্তু এখনও চাকরি পেলাম না। এখন আবার ব্রিজ কার্সের প্রশিক্ষণ নিতে মুর্শিদাবাদে যেতে হবে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু এতদূরে গিয়ে ফের এক বছরের প্রশিক্ষণের জন্য টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।”
এসইউসিআই প্রভাবিত পিটিটিআই ছাত্র ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি আনন্দ হাণ্ডার অভিযোগ, “গত বছর কর্মরত প্রাথমিক শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের জন্য পর্ষদ একইভাবে অন্য জেলার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানোর তালিকা করেছিল। পরে বিক্ষোভের জেরে তারা সিদ্ধান্ত বদলায়। এবারও বেকার ছেলেমেয়েরা একইরকম হয়রানির শিকার।” তাঁর দাবি, “শুক্রবারই জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ কেন্দ্রে কর্মরত শিক্ষকদের এক বছরের প্রশিক্ষণ কোর্সের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ওই সব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শূন্য হওয়া আসনে জেলার বেকার যুবক-যুবতীদের ব্রিজ কোর্সে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.