গন্ডারকে খড়্গহীন করার প্রস্তাব বিবেচনায় কমিটি

৩১ জানুয়ারি
শেষ অবধি কি গন্ডার বাঁচাতে আলফার বাতলানো টোটকাই মানতে চলেছে অসম বন দফতর? অন্তত বনমন্ত্রী ও প্রধান মুখ্য বনপালের কথায় তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। শিকারিদের হাত থেকে গন্ডার বাঁচাতে বছর দুয়েক আগে গন্ডারদের খড়্গ ছেঁটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিল আলফা (পরেশ)। তখন তা উড়িয়ে দিলেও এ বার রাজ্যের বন দফতর, ৫ বছর অন্তর গন্ডারের খড়্গ ছাঁটার ব্যাপারে আলোচনার জন্য কমিটি গড়েছে। কমিটির সবুজ সংকেত পেলে বুড়াচাপোড়ি অভয়ারণ্যে গন্ডারদের খড়্গ আগেই ছাঁটাই করে পাঠানো হবে।
অসমে চোরাশিকারিদের উৎপাত বৃদ্ধি ও গন্ডার নিধনে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংগ্রামপন্থী আলফার সভাপতি অভিজিৎ অসম বিস্তর তথ্যাদি সম্বলিত এক বিবৃতি পাঠিয়ে বলেছিলেন, খড়্গশিকারিদের হাত থেকে গন্ডারদের বাঁচাতে তাদের খড়্গ ছেঁটে ফেলা ভাল। দক্ষিণ আফ্রিকার উদাহরণ টেনে তিনি বলেছিলেন, “গন্ডারকে অজ্ঞান করে খড়্গ কেটে ফেলতে মাত্র ১৫ মিনিট লাগে। এটি ব্যথাহীন, রক্তপাতহীন প্রক্রিয়া। যে কোনও অভিজ্ঞ চিকিৎসকই এটা করতে পারেন। খড়্গটি প্রতি বছর ১০০ মিলিমিটার করে বাড়বে। তাই গন্ডারের কোনও ক্ষতি হবে না।” সেই বছরই মাজুলিতে বর্শার আঘাতে জখম একটি গন্ডারের খড়্গ কেটে ফেলে শিকারিদের হাত থেকে বাঁচাবার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি। পশুপ্রেমীদের একাংশ জীবন্ত গন্ডারের খড়্গ কেটে নেওয়ায় বন বিভাগকে কাঠগড়ায় তোলে। পশু চিকিৎসক ও বনকর্তারাও জানিয়েছিলেন: নিয়ম করে রাজ্যের সব গন্ডারের খড়্গ ছাঁটার প্রক্রিয়া অনুচিত ও অবাস্তব। এতে সংরক্ষণের শর্ত ও পশু অধিকার কোনওটিই মানা হবে না। কিন্তু খড়্গের লোভে লাগাতার গন্ডার হত্যার ঘটনা থামাতে না পেরে, শেষ পর্যন্ত বনদফতর খড়্গ ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসেছে।এই বছরই বুড়াচাপোড়ি অভয়ারণ্যে চারটি গন্ডারকে কাজিরাঙা থেকে পাঠানোর কথা। পরের বছর পাঠানো হবে আরও দশটি। কিন্তু চারপাশে গ্রাম ও চর ঘেরা বুড়াচাপোড়িতে গন্ডারের নিরাপত্তা নিয়ে খোদ বনকর্তারাই নিশ্চিত নন। পাশাপাশি, মানসে প্রতিস্থাপিত ৭টি গন্ডারের মৃত্যুর ফলে ইন্ডিয়ান রাইনো ভিসন-২০২০ প্রকল্পও জোর ধাক্কা খেয়েছে। তাই আইআরভি প্রকল্প নিয়ে আজকের বৈঠকে বনমন্ত্রী রকিবুল হুসেন ও প্রধান মুখ্য বনপাল আর পি অগ্রবালের উপস্থিতিতে খড়্গ ছাঁটাইয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়। অগ্রবাল বলেন, “বিভিন্ন এনজিও সংগঠনের প্রতিনিধি ও জাতীয় উদ্যানের কর্তাদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়েছে। তাঁরা ২০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন।”
তবে এই পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই মতভেদ রয়েছে। চিকিৎসত কুশল কোঁয়রের মতে, খড়্গহীনতার কোনও সরাসরি প্রভাব গন্ডারের উপরে পড়ে না। তবে এটি শেষ উপায় হিসাবেই ভাবা উচিত। গন্ডার বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯০ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় এই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। তারপরেও ২০১০ সালে ৩৩৩টি, ২০১২ সালে ৪৪৩টি, গত বছর সেখানে ১০০৪টি গন্ডার মারা পড়েছে। গত এক মাসের মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকায় ৮৬টি গন্ডার মারা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বন বিভাগ, সেই জন্য খড়্গ ছাঁটা, খড়্গে বিষ মেশাবার মতো নানা পদ্ধতি পরীক্ষা করে দেখেছেন। কিন্তু এখন অবধি কোনওটিই সফল হয়নি। সেখানকার হিসেবে একটি গন্ডারকে খড়্গহীন করতে ৮০০ থেকে ১০০০ ডলার খরচ হয়। বিষ মেশাবার খরচ এর দ্বিগুণ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অঞ্জন তালুকদার বলেন, “পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে মানুষের হাতে পালিত সীমিত সংখ্যক গন্ডারের ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ করা যায়। কিন্তু বৃহত্তর ক্ষেত্রে, খড়্গ কেটে গন্ডার বাঁচানোর পরামর্শ গ্রহণযোগ্য নয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, খড়্গহীন গন্ডার যৌনক্রিয়ায় দুর্বল হয়। এটি তাদের ব্যবহারিক ও মানসিক সমস্যা ডেকে আনবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.