যা আশঙ্কা ছিল, হল-ও তাই।
রাস্তায় বেরিয়ে বাসের অভাবে নাজেহাল। গন্তব্যে পৌঁছনোর তাড়ায় তিন-চার গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হল অটো-ট্যাক্সিতে। অনেকে কয়েক কিলোমিটার হেঁটেও অফিসে পৌঁছলেন। শুধু তা-ই নয়, সভা-ফেরত মিছিলের ফাঁদে পড়ে ভুগলেন অফিসফেরত যাত্রীরাও। যদিও বৃহস্পতিবারের এই দুর্ভোগের জন্য আগাম মার্জনা চেয়ে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পাশাপাশিই অবশ্য অষ্টমীর ভিড় নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে হাওড়া থেকে মধ্য কলকাতার কিছু অংশে একটু হলেও পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে পুলিশ। ফলে যানজটে ভোগান্তি হলেও ওই সব এলাকায় তা ভয়াবহ আকার নেয়নি।
বাম আমলে কাজের দিনে রাজনৈতিক সভা ঘিরে বারবার নাকাল হয়েছে শহর। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের সভার জেরে দুর্ভোগের ছবিটাও ছিল একই রকম। সকাল থেকেই হাওড়া ও শিয়ালদহ শাখার ট্রেনগুলিতে গাদাগাদি ভিড়। ট্রেনের সামনে তৃণমূলের ব্যানার-ফ্লেক্স, জানলায় দলীয় পতাকা। দুটো কামরার মাঝে ঝুলেও যাতায়াত চলেছে।
ট্রেনে যদি বা ওঠা গিয়েছে, শিয়ালদহ-হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে রীতিমতো নাকাল যাত্রীরা। ভাড়া না বাড়ার কারণ দেখিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক বাস উধাও। তার উপরে বুধবার থেকে সমাবেশের জন্য বাস তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধেও। সব মিলিয়ে এ দিন বেসরকারি বাস তেমন পথে নামেনি। বাসমালিক এবং পরিবহণ কর্মী সংগঠন সূত্রের খবর, অন্য দিন শহরে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৬৫০০ বাস চলে। এ দিন চলেছে মাত্র ১৪০০। তাতে বাদুড়ঝোলা ভিড়। |
ব্রিগেডমুখী বাসের ভিড়ে স্তব্ধ বিদ্যাসাগর সেতুর এক দিক। |
মিছিলে এসেছিলেন তৃণমূল সমর্থিত ট্যাক্সি ও অটো ইউনিয়নের সমর্থকেরাও। যে ক’টি অটো রাস্তায় বেরিয়েছিল, সুযোগ বুঝে দাঁও মেরেছে তারা। সকাল সাড়ে দশটা। শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে অটো নেই বললেই চলে। যাত্রীদের লম্বা লাইন সাপের মতো এঁকেবেঁকে বাইরে। ট্যাক্সিও হাতেগোনা। অটোর লাইনেই দাঁড়িয়েছিলেন দেবলীনা দাস। বললেন, “বেলেঘাটা যেতে ট্যাক্সি ৩৫০ টাকা চাইছে।” উল্টোডাঙা থেকে সেক্টর ফাইভ যেতে এ দিন যাত্রীপিছু ৬০ টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তিন-চার গুণ ভাড়া হেঁকেছে উল্টোডাঙা-সল্টলেকের অন্য রুটও।
দুপুর একটা। বিবাদী বাগ বাস গুমটিতে মাত্র তিনটি মিনিবাস। পুলিশ সূত্রের খবর, শিয়ালদহ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে মিছিল ও তার গাড়ি পার্কিংয়ের জেরে যানজটে আটকে পড়ে বহু বাস ও গাড়ি। ভুগেছে দূরপাল্লার সরকারি বাসও। ধর্মতলা ডিপোর কর্মীরা জানান, সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও দূরপাল্লার সরকারি বা বেসরকারি বাস ছাড়েনি। |
তবে ব্যস্ত সময়ে ঠাসাঠাসি ভিড় হলেও এ দিন মেট্রোয় তেমন কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি। বেলা সওয়া দশটা। ডাউন বনগাঁ লোকাল থেকে দমদমে নেমে এক ঝাঁক নিত্যযাত্রী দৌড়লেন সাবওয়ের দিকে। মেট্রোর কাউন্টারে তখন লম্বা লাইন। কর্তৃপক্ষ জানান, বুধবারের তুলনায় এ দিন এক লক্ষেরও বেশি টিকিট বিক্রি হয় মেট্রোয়। হাওড়া থেকে আসতে বাগবাজার-হাওড়া বা ফেয়ারলি-হাওড়ার লঞ্চগুলিতেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, মিছিলের জেরে এ দিন খিদিরপুর রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, এপিসি রোডে যান চলাচল ব্যাহত হয়। ভুগেছে ই এম বাইপাসও। মিছিলের জেরে বাইপাস এবং পার্ক সার্কাস কানেক্টর প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। একই পরিস্থিতি হয় বিদ্যাসাগর সেতুতে। ওই সেতু দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া জেলার হাজারখানেক ছোট, বড় গাড়ি ব্রিগেডমুখী হওয়ায় তীব্র যানজট হয়। যার রেশ ছড়িয়ে যায় খিদিরপুর ও হেস্টিংস এলাকায়। |
ধর্মতলায় মিছিল আটকে গাড়ির পথ করে দিচ্ছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার। |
সন্ধ্যাতেও ছবিটা বদলায়নি তেমন। বইমেলা থেকে ফেরার পথে বাস মেলেনি। ব্রিগেড-ফেরত লোকের ভিড়ে থিকথিকে ভিড় হাওড়া-শিয়ালদহে। রাত আটটার পর থেকে ভিড় কিছুটা কমতে শুরু করে।
তবে এর মধ্যেই সকাল থেকে ব্রিগেড ও তার চৌহদ্দি-সহ হাওড়া থেকে মধ্য কলকাতার কিছু অংশে পরিস্থিতি খানিকটা সামাল দেয় পুলিশ। অষ্টমীর ভিড় নিয়ন্ত্রণের কৌশলেই কোথাও মিছিলের গতিপথ বেঁধে দেওয়া হয় রাস্তার একপাশে, কোথাও মিছিলের আগে পার করে দেওয়া হয় সাধারণ যানবাহন, নিয়ন্ত্রণ করা হয় নিত্যযাত্রীদের যাতায়াতও। ফলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছয়নি সে সব এলাকায়।
পুলিশকর্তারা জানান, অল্পসংখ্যক বাস-মিনিবাস থাকলে আগে সেই সব গাড়ি পার করানো হবে বলে ঠিক ছিল। পরে প্রাধান্য পাবে মিছিল। হাওড়া সিটি পুলিশও জানায়, সাবওয়ের ৬ নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে হাওড়া সেতুতে ওঠা নিত্যযাত্রীদেরও নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। সেই কারণে হাওড়া থেকে কলকাতায় পৌঁছতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি মানুষের।
তবে দুপুর আড়াইটে নাগাদ ব্রিগেডের সমাবেশ শেষ হওয়ার পরে ট্রাফিক ব্যবস্থা কিছুটা অগোছালো হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, লেনিন সরণি, মেয়ো রোড, গোষ্ঠ পাল সরণি, রেড রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড এবং বিদ্যাসাগর সেতুর উপরে যানজট হয়। জনসভার পরে যানজট দেখে নবান্নে ফিরে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিত্ করপুরকায়স্থের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর নির্দেশে যে সব গাড়ি জনসভায় ঢুকতেই পারেনি, তাদের ‘ইউ টার্ন’ করিয়ে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ। রাতে কলকাতায় ট্রাক ঢোকা এবং বার হওয়ার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে আগে জনসভায় আসা বাস ফেরত পাঠাতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। |
মোবাইলে QR Reader ডাউনলোড করে এই QR কোডটি স্ক্যান করুন।
আর দেখে নিন সমাবেশের দিনে পথচলতি মানুষের প্রতিক্রিয়া।
|
|