সে রাতে ফোন করল কে, জানতে পারেনি পুলিশ

৩০ জানুয়ারি
ধ্যরাতে একটি ফোন বেজে উঠল চট্টগ্রাম বন্দর থানায়। এক পুরুষ কণ্ঠ কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে জানাল, শিল্প দফতরের জেটিতে ক্রেনে করে যে সব বাক্স খালাস হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে থরে থরে গোলাবারুদ ও অস্ত্র।
২০০৪-এর সে দিনটা এপ্রিলের পয়লা তারিখ, বোকা বানানোর দিন। দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মী কিন্তু একটুও হালকা ভাবে নেননি অজানা নম্বর থেকে আসা ফোনটিকে।
কর্ণফুলির তীরে শিল্প দফতরের জেটি থানা থেকে বড়জোর এক কিলোমিটার। এক সহকর্মীকে বিষয়টি জানিয়ে তাঁর মোটরসাইকেলের পেছনে বসেই ঘচনাস্থলে যান ওই সাবইনস্পেক্টর। দেখেন সত্যিই সেখানে দু’টি ট্রলার থেকে ক্রেনে করে নামানো হচ্ছে একের পর এক বাক্স। ১০টি ট্রাকে বোঝাই করা হচ্ছে সেগুলি।
কী আছে এতে?
প্রশ্ন করতেই বিপত্তি। দু’জন লোক এগিয়ে এসে স্পষ্ট হুমকি দিয়ে বলে, “অস্ত্রই আছে। ওপরমহলের ব্যপার। তোমাদের মাথা না ঘামালেও চলবে। আর একান্তই যদি ঘামাতে চাও মাথাই খোয়া যেতে পারে দু’জনের।”
কিছুটা যে দমেননি তাঁরা তা নন। জেটির বাইরে এসে দু’জনে ফোন করেন থানার ওসিকে। বলেন হুমকির কথা। ওসি সে রাতেই দলবল নিয়ে হাজির হন জেটিতে। কয়েক জন পিঠটান দিলেও ধরা পড়ল পাঁচ জন। আর বাক্স খুলে পুলিশের চক্ষু তো চড়কগাছ! থরে থরে রাইফেল, রকেট, গ্রেনেড, বুলেট।
সকালে সাংবাদিকদের ডেকে পুলিশ যখন এই বিপুল অস্ত্র উদ্ধারের কৃতিত্ব নিচ্ছে, তখনও জানে না কী হতে চলেছে। দিন কয়েক পরে পুলিশের ওপর মহল যে মামলা খাড়া করল, সেই দুই পুলিশই তার প্রধান আসামি! স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ঘোষণা করলেন, সরকারকে উৎখাত করতে আওয়ামি লিগই এই অস্ত্র এনেছে। তদন্তে তাদের নাম জানানো হবে। এর পরে তদন্তের নামে চলল প্রমাণ নষ্টের মহড়া।
পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা দখলের পরে শুরু হল নতুন করে তদন্ত। টান পড়ল আসল চক্রান্তকারীদের মাথায়। এঁরা গুপ্তচর বাহিনীরই কর্তা। কিন্তু পুলিশ তাঁদের ধরতেই তাঁরা জানিয়ে দিলেন, সরকারের উচ্চতম মহল থেকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বেতনভুক কর্মচারী হিসেবে তাঁরা সেই নির্দেশ পালন করেছেন মাত্র। আদালতে জবানবন্দি দিয়ে একের পর এক ‘আসল মাথা’র নাম জানিয়ে দিলেন গোয়েন্দা কর্তারা। তাঁরা তৎকালীন মন্ত্রী, আমলা।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামিরা জানায়, আইএসআইয়ের সহযোগিতায় চিন থেকে এই অস্ত্রশস্ত্র কিনেছিল আলফা। দক্ষিণ চিনের একটি গোপন জায়গা থেকে জাহাজে অস্ত্র বোঝাই করার সময়েও আলফা নেতা পরেশ বরুয়া নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দেখভাল করেছেন। তার পরে চট্টগ্রামের উপকূলে পৌঁছে দু’টি মাছ ধরার ট্রলারে চাপিয়ে সেই অস্ত্র পাঠানো হয় শিল্প দফতরের জেটিতে।
কয়েক সপ্তাহ আগেই ব্যাঙ্ককের একটি তিন তারা হোটেলে বসে সব বন্দোবস্ত চূড়ান্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে অসমের গোপন ডেরায় অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আইএসআই সঁপেছে বাংলাদেশের গুপ্তচর সংস্থা এনএসআই-র কর্তাদের হাতে। বাংলাদেশ সরকারের ‘উচ্চতম’ মহলের সঙ্গেও কথাবার্তা সারা। তাদের অর্থও পাঠিয়ে দিয়েছে আইএসআই। সরকারের পাহারায় সড়ক পথেই ওই অস্ত্র যাওয়ার কথা অসমে।
কিন্তু এ ভাবে ফেঁসে যাওয়া? গোয়েন্দারা জানতে পারেন, খবর পেয়ে মায়ানমারের গোপন ডেরায় রেগে আগুন হয়ে যান পরেশ। চিৎকার চেঁচামেচি করেন।
কিন্তু কে করল সেই ফোনটি? কার ফোনে এই পর্দাফাঁস, যা কালক্রমে ফাঁসির দড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে দিল চক্রান্তকারীদের?
না, তার নামটি জেনে উঠতে পারেননি সেই পুলিশ কর্মী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.