|
|
|
|
প্রচারক বাঘ |
জিতের নবতম চমক। ‘দ্য রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ ছবির জন্য দত্তক নিলেন বাঘ। লিখছেন সংযুক্তা বসু। |
খাঁচার ভিতরে বাঘটা। ভালবেসে জিৎ যার নাম রেখেছেন ‘অঞ্জন।’
বেশ শান্ত ভাবেই সেদিন পোজ দিচ্ছিল। হঠাৎ কী হল, ‘অঞ্জন’য়ের মুড গেল বিগড়ে। ছবি তোলার প্রতিবাদ করতেই বোধ হয় ধেয়ে এসে হিংস্র ভাবে সপাটে ঝাঁপিয়ে পড়ল খাঁচার গায়ে। কেউ এক পা নড়তে পারছেন না। সম্বিৎ ফিরতে পড়ি কি মরি করে লাফ দিয়ে সরে এলেন তাঁরা।
ঘটনাটা ২৬ জানুয়ারির। সেদিনই ভূপালের বনবিহার ন্যাশনাল পার্ক অ্যান্ড জু থেকে জিৎ ও তাঁর বন্ধু পরিচালক ও প্রযোজক নীরজ পাণ্ডে অঞ্জনকে দত্তক নেন।
অভিজ্ঞতা যতই ভয়ঙ্কর হোক না কেন এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারই এখন তাঁদের তুরুপের তাস। আজ মুক্তি পাচ্ছে জিৎ এবং আবির চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘দ্য রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।’ আর তার আগেই জলজ্যান্ত একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার জিতের হেফাজতে।
জীবেপ্রেমের আছিলায় এ কি ছবির পাবলিসিটি? “‘দ্য রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’য়ের প্রোমোশনের জন্যেই বাঘটাকে দত্তক নিলেও এটা একটা সামাজিক কাজ। ছবিতে আমার নাম অঞ্জন তাই বাঘের নামও অঞ্জন। আজ ট্যুইটারের আমাদের বাঘ-অঞ্জন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য, ছবি আপলোড করা হবে। প্রচারও হল আবার বন্যপ্রাণীর যত্নও হল। শুধুই ব্যানার, পোস্টার, হোর্ডিং বা ফেসবুকেই আটকে রাখছি না বিপণন। বাঘ নিয়ে ভিডিয়ো গেমস রিলিজ করার চেয়ে জ্যান্ত বাঘ দত্তক নেওয়া ঢের ভাল। বাঘ দত্তক নিয়ে সারা বছরের পরিচর্যা, খাওয়াদাওয়া, চিকিৎসা, কেয়ারটেকারের বেতন সব খরচই বহন করব আমি আর নীরজ,” বললেন জিৎ। সেই সঙ্গে নীরজ জুড়লেন, “দত্তক নেওয়াটা কোনও গিমিক নয়। মানবিকতার দিকটাও আছে। আমরা মাঝে মাঝে যাব অঞ্জনকে দেখতেও।” |
|
খাঁচায় ‘অঞ্জন।’ আর বাইরে নতুন দুই অভিভাবক। জিৎ ও তাঁর বন্ধু নীরজ পাণ্ডে। |
সিনেমার প্রমোশন স্ট্র্যাটেজি হিসেবে চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণী দত্তক নেওয়ার কোনও নজির মিলল না ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে। যদিও অনিল কুম্বলে, জাহির খান থেকে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো বহু সেলিব্রিটিই এই রকম প্রাণী দত্তক নিয়েছেন। কলকাতার চিড়িয়াখানা থেকেও বাঘ দত্তক নিয়েছেন হর্ষ নেওটিয়া, বৈশালী ডালমিয়া নিয়েছেন জাগুয়ার, দেবশ্রী রায়ের দত্তক এক হাতি। কিন্তু এ সবই ঘটেছে বিভিন্ন মানুষের সাহায্যে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন দেওয়ার জন্যে।
কিন্তু এখানে তো সে রকম কোনও ব্যাপার নেই। সবটাই পাবলিসিটির উপলক্ষ। আর তা থেকে একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে প্রচার পরিকল্পনার অভিনবত্বে বলিউডের নিত্যনতুন স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিচ্ছে এবার বাংলা ছবিও।
‘চাঁদের পাহাড়’য়ের শ্বাপদসঙ্কুল লোকেশন সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রাসল্যান্ডে দেব ওরফে শঙ্কর বনাম সিংহের মোকাবিলার শু্যট কভার করেছিল আনন্দ প্লাস।
শঙ্কর যখন সিংহের সামনে, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি উড়ে গেলেন হেলিকপ্টারে। ‘জাতিস্মর’ মুক্তির আগে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বেহালা এয়ারপোর্ট থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে রওনা দিলেন বোলপুর। মাত্র চার ঘণ্টার ঝটিকা সফরে প্রচার অভিযান সেরে ফিরে এলেন কলকাতায়। বোলপুরের মানুষজন বিস্মিত হয়ে দেখলেন একবিংশ শতকের হাইটেক অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির আজব উড়ান। প্রচারমাধ্যমও ঝাঁপিয়ে পড়ল হেলিকপ্টার-সহ নায়কের অসংখ্য মুহূর্ত ধরতে।
জিৎ যে এই প্রথম তাক লাগিয়ে প্রচারে নামলেন তাও নয়। ‘বস’ রিলিজ করার আগে মুম্বই গিয়ে বলিউডের ‘বস’ অমিতাভ বচ্চনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে অমিতাভেরই বাঁধানো ছবি ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপক চিঠি উপহার দিয়ে এসেছিলেন। ছবির প্রচারে প্রেক্ষাগৃহের ভেতরে প্রিমিয়ারের দিন জলসা বসানোটাও আর একটা স্ট্র্যাটেজি। ‘অপরাজিতা তুমি’ হোক বা ‘জাতিস্মর’প্রেক্ষাগৃহ ঘিরে বসেছে কখনও কবিগানের আসর কখনও বা ‘চন্দ্রবিন্দু’র জলসা।
কিন্তু কলকাতা চিড়িয়াখানা থেকেও তো দত্তক তো নেওয়া যেত? জিৎ ও নীরজ সমস্বরে বললেন, “আমরা কলকাতা চিড়িয়াখানায় খবর নিয়ে জেনেছিলাম সব বাঘই দত্তক নেওয়া হয়ে গিয়েছিল।” |
‘দ্য রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’-এ জিৎ ও আবির। |
অন্য দিকে কলকাতা চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর কানাইলাল ঘোষ বললেন, “কেউ হয়তো জিতের তরফ থেকে এসে খোঁজ করে গিয়েছেন, আমরা সেটা জানি না।”
অতঃপর ছবির প্রমোশনের জন্য ভোপালের অঞ্জন-বাঘের খোঁজ দিয়েছিলেন নীরজেরই বন্যপ্রাণিপ্রেমী বন্ধুবান্ধব।
কিন্তু ছবির নামটার জন্যই শুধু একটা বাঘকে দত্তক নিয়ে নেওয়া হল? “মধ্যবিত্ত বাঙালি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভুলে গিয়েছে। তবু সব মানুষের মধ্যেই একটা ঘুমন্ত বাঘ থাকে। সেই বাঘটাকে জাগিয়ে তোলা নিয়েই আমাদের ছবির গল্প। সেই জন্যই বাঘই আমাদের ছবির প্রচারক,” বলছেন ছবির পরিচালক রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়। ‘ওয়েডনেসডে’ ও স্পেশ্যাল ২৬’ খ্যাত পরিচালক নীরজ পাণ্ডে লিখেছেন গল্প ও সংলাপ।
সারা পৃথিবী জুড়েই সিনেমার বিপণনের মারপ্যাঁচ ‘এক সে বড় কর এক’। স্টিফেন্স স্পিলবার্গের টিনটিন ছবির প্রমোশনে বিক্রি হয়েছিল হাজার হাজার খেলনা টিনটিনের অ্যাকশন ফিগার। ‘দ্য আমেজিং স্পাইডারম্যান’ রিলিজের আগে ছবির নায়ক অ্যান্ড্রু গারফিল্ড স্পাইডারম্যান সেজে কমিক বইয়ের মেলায় মেলায় ঘুরে বেরিয়েছেন। তাঁকে দেখে তাজ্জব বাচ্চাকাচ্চারা।
বলিউডে প্রমোশনের আজব সব উপায় খুঁজে বের করায় আমির খানের জুড়ি মেলা ভার। কখনও ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ান ছবি রিলিজের আগে। যদি দর্শক তাঁকে চিনে বের করতে পারেন, সেটাই প্রমোশন। ‘ধুম থ্রি’ রিলিজের আগে এক ভার্চুয়াল গেমে দেখা গেল ‘চোর’ রূপী আমির মূল্যবান ধনরত্ন চুরি করে পালাচ্ছেন, আর তার পেছনে পেছনে ছুটছে পুলিশ। আর ‘গজনী’ রিলিজের আগে আমির নিজেই নাপিত সেজে কত লোককে ওই ছাঁটে চুল কেটে দিয়েছিলেন....প্রমোশন স্ট্র্যাটেজি এখন এই রকম সব চৌখস চমকে ভরা। কিন্তু বাঘ দত্তক নিলে কি লোকে বেশি করে ছবিটা দেখতে আসবে? জিৎ হেসে বললেন, “বাঘ যত দূরেই থাকুক, দত্তকের খবরটা শুনে ছবিটার প্রতি কৌতুহল বাড়বে আশা করছি। বাঙালি বাঘ খুব ভালবাসে।”
এর পর যাঁরা ভোপাল বেড়াতে যাবেন, আগামী এক বছর তাঁরা হয়তো অঞ্জনের খোঁজ করবেন। খাঁচার বাইরে লেখা থাকবে তার নাম। জিতের সিনেমা নির্মাতা সংস্থা গ্রাসরুট এন্টারটেনমেন্ট ও নীরজের সংস্থা ‘ফ্রাইডে ফিল্মওয়ার্কস’য়ের নামও থাকতে পারে খাঁচার বাইরে। সিনেমাটার কথা ভুলে গেলেও মনে করিয়ে দেবে ভোপালের অঞ্জন। কিন্তু এই মুহূর্তে অঞ্জন-বাঘের উপস্থিতি একটা কথাই প্রমাণ করছে, দেব যদি সিংহের সঙ্গে পর্দায় লড়াই করে থাকেন, জিৎ নিজেই হয়ে উঠতে চাইছেন জলজ্যান্ত বাঘের অভিভাবক।
বাঘ-সিংহের লড়াইটা কেমন জমে সেটাই দেখার। নজর রাখতে হচ্ছেই ফেসবুকে, ট্যুইটারে... |
|
|
|
|
|