দিল্লি কা লাড্ডু খেয়ে পস্তাচ্ছি না

প্রথম ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি উপলক্ষে ছবি তোলা হল। কিন্তু আপনার স্বামী রানে কেমন যেন আড়ষ্ট হয়েই রইলেন! উনি কি ছবি তুলতে লজ্জা পান?
হ্যাঁ। ও দারুণ লাজুক। আর ইন্ট্রোভার্ট। ছবি তোলার জন্য খুব জোর করতে হয়। রানে আসলে ক্যামেরার সামনে নয়, পেছনেই থাকতে চায়।

আগামিকাল বিয়ের এক বছর হবে। ছুটি নিচ্ছেন তো? নাকি শ্যুটিং, ডাবিং, অ্যানিভার্সারি সব একসঙ্গে?
না, না। কালকের দিনটা ছুটির বন্দোবস্ত করেছি আমি আর রানে।

কী ভাবে সেলিব্রেট করবেন?
আমাদের দুই পরিবার একসঙ্গে হয়ে খাওয়াদাওয়া, আনন্দ হবে।

কেমন সাজবেন?
যে শাড়িই পরি, সঙ্গে লাল টিপ মাস্ট। শ্বশুরবাড়ির সবাই কপালে লাল টিপ খুব পছন্দ করেন। আর পছন্দ করেন বাঙালি সাজ।

আপনার স্বামী রানেকে কী উপহার দেবেন? এনি সারপ্রাইজ?
ওকে সারপ্রাইজ দিয়ে কোনও লাভই নেই। খুব খুঁতখুঁতে। ওর যা প্রাণে চায় তাই গ্ল্যাডলি কিনে দেব।

বিয়ের দ্বিতীয় বছরে রেজোলিউশন কী?
যতই কাজ করি, কোয়ালিটি টাইম দেব পরিবারকেই।

আর কাজের প্ল্যান? তিনটে ছবি তো রিলিজের অপেক্ষায়?
কাজের ব্যাপারে কোনও প্ল্যান করতে চাই না। একবার আপনাদের কাগজেই দেওয়া ইন্টারভিউয়ে বলেছিলাম বিয়ের পর কাজ কমিয়ে দেব। কিন্তু ভাগ্য এমন, যে বিয়ের বছরেই প্রচুর কাজ করতে হল। এখনও ‘অরুন্ধতী’ ছবির কাজ চলছে।

এত দিন ধরে চলছে কেন? কবে তো শুরু হয়েছে?
ছবিটা টানা শ্যুট করা কঠিন ছিল। তাই প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা এবং রানে মাঝে মাঝে গ্যাপ দিয়েছে। প্রচুর অ্যাকশন সিকোয়েন্স, অনেক নাটক, রহস্য, নাচ। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে তাণ্ডব নৃত্য আছে। খুব খেটে রপ্ত করেছি। সত্যিকারের তলোয়ার হাতে নিয়ে যুদ্ধের দৃশ্য। কী ভারি তলোয়ার! ফাইট মাস্টার বললেন, সত্যিকারের তলোয়ার হাতে না নিলে চোয়াল আর হাতের পেশিগুলো অভিনয়ের সময় শক্ত মনে হবে না। অভিনয় ন্যাচারাল মনে হবে না।
অনেক অ্যাঙ্গেল থেকে একই শট বহু বার বহু ভাবে নেওয়া হচ্ছে। তাই এত দিন সময় লাগছে।


কিন্তু এটা তো দক্ষিণের একটা সুপারহিট ছবির রিমেক।
দেখুন আমি আমরা রিমেক করছি না। রিক্রিয়েট করছি। সলমন খানের বহু ছবিই তো দক্ষিণ ভারতের ছবির সুপারহিট রিমেক। আমাদের ছবির নতুনত্ব এটাই ‘অরুন্ধতী’ বাংলার কোনও এক সময়কার রানি। বাঙালিয়ানা আছে গল্পের প্রেজেন্টেশনে। প্রতিটা স্তরে। গ্রামবাংলার নানা জায়গায় শু্যটিং। পুনর্জন্ম নিয়ে গল্প হলেও এই সময়কার চরিত্রও আছে আমার। আর আমি পুনর্জন্ম খুব বিশ্বাস করি।

পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন, ‘জাতিস্মর’ দেখেছেন?
না। দেখা হয়নি।

দম্পতি
‘অরুন্ধতী’র অন্যতম প্রযোজক রানেও। পারিবারিক সিনেমা ব্যবসায় আপনার পদটা কী? এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসর?
না না। এখনও আমাকে কোনও পদ দেওয়া হয়নি। আসলে ব্যবসাটা তো বাঙালির মজ্জাগত নয়। হিসেবনিকেশ কিছুই বুঝি না। আর রানে ষোলো সতেরো বছর বয়স থেকে ফিল্ম প্রোডাকশনের শিডিউল, বাজেট প্ল্যান করছে। ভীষণ চৌখস। আমি দ্রুত শিখি। রানের সঙ্গে কাজ করতে করতেই মনে হয় শিখে যাব।

সন্দীপ রায়ের সঙ্গেও তো একটা ছবি করেছেন...
বাবুদার (সন্দীপ রায়) ছবিটা শেষ। চারটে গল্প নিয়ে ছবি ‘চার’। আমার গল্পটার ব্যাকগ্রাউন্ডে রয়েছে স্বাধীনতার সময়টা। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই গল্পে আমি আর আবির আছি। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ছবি। একটা সময় উত্তম-সুচিত্রার সাদাকালো ছবি দেখতে কী ভাল লাগত! এ বার আমিও সাদা কালোয়। বাবুদার সঙ্গে কাজ করে খুব মজা। ওঁকে বারবার বলতাম কেন সত্যজিৎ রায়ের গল্পে ছেলেরাই থাকে শুধু? ফেলুদার একটা মেয়ে অ্যাসিস্টেন্ট থাকলেও তো পারত। সেটা আমি করতাম তা হলে।

গোয়েন্দা সাজতেন?
হ্যাঁ। গোয়েন্দার রোল করতে আমার ভীষণ ইচ্ছে করে। কিন্তু তার জন্য তো ‘কহানি’ গোছের একটা গল্পও চাই। ও হ্যাঁ, আমার অন্য ছবিটা পরিচালক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের ‘হাইওয়ে’।

তার মানে আপনি এ বছর মূলধারার ছবির পাশাপাশি নতুন ধারার ছবিতেও?
এ বছর কেন? আমি অনেক দিন আগে থেকেই আছি। কবে ‘দেবীপক্ষ’ করেছি। ‘জ্যাকপট’, ‘হিটলিস্ট’, ‘হেমলক’ সবই অন্য ধারার। যদি ভাল চিত্রনাট্য পাই, আরও এই ধরনের ছবি করব।

গত বছরে জিতের সঙ্গে শুভশ্রীর ‘বস’ বক্স অফিস হিট। অঞ্জন দত্তের ছবিতেও কাজ করেছেন শুভশ্রী। ওঁর এই সাফল্যটা আপনার কাছে কতটা চ্যালেঞ্জিং?
আমার কোনও চ্যালেঞ্জ নেই। নিজের কাজ মন দিয়ে করে যাচ্ছি। এখন প্রোডাকশন হাউসের কাজে কিছুটা জড়িয়ে বুঝতে পারছি ইন্ডাস্ট্রিতে আরও অনেক নায়ক-নায়িকা আমাদের দরকার। শুভশ্রীর সাফল্যকে স্বাগত জানাতে কোনও দ্বিধা নেই।

কিন্তু জিৎ-কোয়েলের জুটিকে আবার কবে পর্দায় দেখা যাবে? জিকোকে?
ভাল চিত্রনাট্য পেলেই একসঙ্গে কাজ করব। এখন কোনটা চ্যালেঞ্জ মনে হয় জানেন?

কোনটা?
যখন নতুন এসেছিলাম তখন আমার হাসি-কান্না সবই ছিল ফ্রেশ। দর্শক প্রশংসা করেছেন। কিন্তু এখন সেই কোয়েল ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন কিছু করে দেখাক, এটাই তো দর্শকের প্রত্যাশা। তার জন্য ক্রমাগত নিজের অভিনয়ের ফর্ম ভাঙাচোরা করতে হবে। সেটাই চ্যালেঞ্জ।

বিয়ের অনুষ্ঠানে তো জিৎ পুরোদমে ছিলেন। বিয়ের পর দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে?
আমি, রানে, জিৎ-মোহনা চার জনে মিলে সিনেমা দেখতে গিয়েছি এক আধবার। সবাই কাজে ব্যস্ত থাকি। নিয়মিত আড্ডা দেওয়ার সময় কোথায়?

কিছু দিন আগে সুচিত্রা সেন মারা যাওয়ার সময় দেব খুব আবেগপ্রবণ হয়ে বলেছিলেন যে তিনিও অশক্ত শরীরে পর্দায় আসবেন না। হিরোর ইমেজ নিয়েই চলে যাবেন আড়ালে। আপনিও কি এই রকম ভাবেন? না কি বয়স হলে ক্যারেকটার রোলেও অভিনয় করবেন?
জানি না ক্যারেকটার রোলে অভিনয় করব কি না। কিন্তু সিনেমার সঙ্গে আমার যোগ থাকবেই। আমার বাবাও যেমন অভিনয় না করলেও এই জগতের নানা কাজ নিয়ে আছেন। তা ছাড়া এটাও বলছি, সুচিত্রা সেনকে মানায় তা কি সকলকে মানায়? এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনা ইদানীং খুব মনে পড়ছে।

কোন ঘটনা?
আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। তখন ল্যান্ডলাইন ছিল। একদিন একটা ফোন এল। এক মহিলা কণ্ঠ জিজ্ঞাসা করলেন, “রঞ্জিতবাবু আছেন?” আমি বললাম, না বাবা তো বাইরে। আপনি কে বলছেন? মহিলা রাশভারী গলায় বললেন, ‘আমি একজন প্রাক্তন অভিনেত্রী। রঞ্জিতবাবুর সঙ্গে একটু দরকার ছিল।’ জানেন, আমি তক্ষুনি বুঝে গিয়েছি গলাটা সুচিত্রা সেনের। সে কি উত্তেজনা আমার! কোনও কথা বলতে পারছি না। উনি ফোনটা নামিয়ে রাখলেন। সেই মুহূর্তটা কোনও দিন ভুলব না।

বাবা তার পর সুচিত্রা সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন?
হ্যাঁ করেছিলেন। একান্ত পারিবারিক কথা হয়েছিল। বলা যাবে না। তবে আমি কিন্তু জীবনটাকে শুধু স্টারডম দিয়ে দেখি না। আমার ছেলেমেয়ে হবে, নাতিনাতনি হবে। তাদের নিয়ে ছবির অনেক ফ্রেম তৈরি করতে করতে এগিয়ে যাব। ভিক্টোরিয়ায় বসে আকাশের তারা গুনব। আইসক্রিম খাব। মজা করব। এটাও তো জীবন। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু মিস আ ড্রপ।
কিন্তু তার জন্যে সব চেয়ে আগে কোয়েল মল্লিককে মা হতে হবে। সেটা কবে হচ্ছে?
(খিলখিলিয়ে হাসি) জানতাম। জানতাম এই প্রশ্নটা আসবে। রানে আগেই বলেছিল আপনি এই প্রশ্নটা করবেনই। দেখুন সত্যিই জানি না কবে হবে। এ সব কি বলা যায় নাকি! (জোরে হাসি)। এই মুহূর্তে কোনও প্ল্যান নেই।

আচ্ছা এই যে বিয়ে, বিয়ে মানে কিন্তু একটা বাধ্যবাধকতাও। সেই স্বাধীন জীবনটা মিস করেন না?
না। আমার সেই স্পেস আছে। ইচ্ছে করলে একা বসে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে পারি। নিজস্ব বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডাও দিই। আর তা ছাড়া নতুন একটা পরিবারের সকলকে নিয়ে থাকব বলেই তো বিয়ে করেছি।

কিন্তু এই ইন্টারভিউটা বাপের বাড়িতে বসে দিচ্ছেন কেন? শ্বশুরবাড়িতেও তো হতে পারত?
না, আমি এই বাড়িটাকে আমার অফিস হিসেবেও ব্যবহার করি। রানে কিংবা শ্বশুরমশাই কাজ করেন অফিসে গিয়ে। সেই জন্যই আমিও সেটা মানি।

আপনি কিন্তু এখনও পলিটিক্যালি কারেক্ট সব উত্তর দেন। অবশ্য নতুন শ্বশুরবাড়িতে ডিপ্লোম্যাট হলে সকলের মন জয় করা সহজ হয়...
যাক। এত দিনে তা হলে আমার পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকার একটা ভাল দিক পেলেন। দেখুন আমি কখনওই কোনও একটা মানুষকে ভাল বলতে গিয়ে আর একটা মানুষকে বাজে বলতে পারিনি। একজনের অভিনয় দারুণ বলতে গিয়ে আর একজনের অভিনয় খারাপ বলতে পারি না। দুনিয়াটা তো ব্যালেন্সের ওপরই চলে...

এই রকম এক তুখড় স্টার নায়িকা বৌ নিয়ে রানে নিশ্চয়ই খুব বিভোর। মানে যাকে বলে গদগদ...
ইসস্। রানে গদগদ হওয়ার পাত্রই নয়। রানে তো কোনও স্টার বা নায়িকাকে বিয়ে করেনি। কোয়েল বলে মেয়েটাকে বিয়ে করেছে। আর সেই জন্যই আমাদের বন্ধুত্বটা এত জমেছে। ও খুব মাটিতে পা রেখে চলা মানুষ। গ্রাউন্ডেড। এবং একেবারে হাজব্যান্ড মেটেরিয়াল। খুব কেয়ারিং। দায়িত্বশীল। মেয়েরা তো এই রকম স্বামীই চায়!

তার মানে বিয়েটা দিল্লি কা লাড্ডু মনে হচ্ছে না?
বিয়েটা অবশ্যই দিল্লি কা লাড্ডু। কিন্তু খেয়ে মোটেই পস্তাচ্ছি না। খুব সুস্বাদু। প্রচুর ঘি, কাজুবাদাম, পেস্তা দেওয়া।

অ্যানিভার্সারি উপলক্ষে আর এক বার হনিমুনে যাবেন না?
রানে বলছে হনিমুনে যেখানে গিয়েছিলাম, আবার সেখানেই যাবে। মানে রোম, প্যারিস, বার্সেলোনা। উরি বাবা! কী শীত তখন! যাই বলুন, কনকনে ঠান্ডায় বেরিয়ে আরাম নেই।

সে কী! কনকনে ঠান্ডায় শর্ট ড্রেস পরে শ্যুটিং করেন। শীতে কি আসে যায়...
কাজের সময় শীত করে না। একটা টেনশন থাকে তো।

বর সঙ্গে থাকলে একটা উষ্ণতা তো থাকবেই।
ইশশ্ কী সব কথা!

ও হ্যাঁ, রানে আপনাকে কী উপহার দিচ্ছেন? সেটা তো বললেন না...
বারবার জিজ্ঞেস করছে কী চাই। আমি কিছুই চাইব না। সত্যি বলতে কী, আমি খুব ইনএক্সপেনসিভ বৌ। কোনও পার্থিব উপহারের চাহিদা আমার নেই। ভালবাসা পেলেই হল। শুধু ভালবাসা।

তাই বুঝি? তা রানের প্রোডাকশনের ছবিতে নায়িকার রেমুনারেশনটা ভালবেসে না নিলেও তো হয়....
উফ্, পারেন বটে প্রশ্ন করতে... হি হি হি হি। (কোয়েলের স্বভাবোচিত খিলখিলানো হাসি) সেটা তো নেবই। আমার কাজের পারিশ্রমিক নেব না? কিন্তু জানেন তো, বেশ ভালই লাগে বরের কাছ থেকে চেক নিতে।

এক পয়সাও তো খরচ নেই। সব টাকা জমছে।
রানের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে বিল মেটায় কে? আমিই তো মেটাই। সেটা আমার বর খুব এনজয়ও করে। একটা কথা বলি, এখন খরচ না করলেও পরে সমাজসেবামূলক কাজে আমার অর্জিত টাকা খরচ করার ইচ্ছে আছে। বিশেষ করে অনগ্রসর মেয়েদের জন্য কাজ করতে চাই।

ছবি: কৌশিক সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.