সরকারি নজরদারির অভাবে সমস্যায় পড়েছেন লাক্ষা চাষ প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত ২১ জন চাষি। চরম আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন ওই চাষিরা। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট ব্লকের চকভৃগু পঞ্চায়েতের মোস্তাফাপুর ও চকরামনাথ মৌজায় ১০০ দিনের প্রকল্পে লাক্ষা চাষের মতো বিকল্প অর্থকরী ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। গত জুন জুলাইয়ে সেলিয়াটা গাছে লাক্ষা-কীট ছাড়া হয়। কিন্তু লাক্ষার উৎপাদন কম হওয়ায় চাষিদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০১২-১৩ বছরে ১০০ দিনের প্রকল্পে আদিবাসী সম্প্রদায়ের পুরুষ ও মহিলা কৃষককে নিয়ে দল তৈরি করে প্রশাসন। প্রবীণ সামলেট টপনোকে দলনেতা করে প্রতাপ টপনো, শেফালি টপনো, লেয়া সুরিনদের হাতে ২৫ একর জমি প্রকল্পের জন্য তুলে দেওয়া হয়। ২০১২ সালে তাঁরা সেলিয়াটা গাছের চারা রোপণ করেন। ১৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়। একফসলি জমিতে লাক্ষা ছাড়া মাছ চাষ ও অন্য মরসুমি শস্যের মতো বিকল্প অর্থকরী ফসলও চাষ করা হয়। |
চাষিদের অভিযোগ, ধুমধাম করে শুরু করা হলেও এখন প্রকল্পের আধিকারিকেরাও কেউ খোঁজ নিতে আসেন না। চাষিদের দলনেতা সামলেট টপনো বলেন, “লাক্ষা-কীট কেনার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ৬ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। কিন্তু সরবরাহকারী সংস্থা পুরুলিয়া থেকে সময় মতো লাক্ষা-কীট না পাঠানোয় গাছে লাক্ষা ছাড়তে দেরি হয়। তার পরে বৃষ্টির জেরে উৎপাদন কম হয়।” এক থেকে দেড় কুইন্টাল বিক্রি করে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা মিলবে। ৯ কুইন্টাল লাক্ষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে আয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। এখন কী ভাবে ব্যাঙ্ক-ঋণ শোধ হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দলের লেয়া সুরিন, শেফালি টপনোর মতো মহিলা উদ্যোক্তারা। তাঁদের বক্তব্য, প্রতি কুইন্টাল লাক্ষা প্রায় ৪০ হাজার টাকা দামে বিক্রির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। সরকার পাশে না দাঁড়ালে সমস্যায় পড়তে হবে। ১০০ দিনের প্রকল্পের জেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার কৌশিক সিংহ ছুটিতে। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “এ কথা জানা নেই। খোঁজ নেব।”
গত বছর বালুরঘাটের এই চাষকে পাইলট প্রোজেক্ট করে রাজ্য থেকে দিল্লি পাঠানো হলে উদ্যোগ দৃষ্টান্তমূলক বলে দিল্লির গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে প্রশংসিত হয়। জেলা দফতরের এক অফিসার জানান, প্রথম বছরের এই আর্থিক ক্ষতির ধাক্কা সামলানো সম্ভব হলে পরের বার থেকে লাভ মিলবে। পরের বার উদ্যোক্তাদের লাক্ষা চাষে বেশি খরচ নেই। যা শুনে চাষিদের পক্ষে সামলেট টপনো বলেন, “আমাদের কাছে যে লাক্ষা-কীট রয়েছে, তা জুন জুলাই মাসের মরসুমে সেলিয়াটা গাছে ছাড়া যাবে। প্রশাসন ব্যাঙ্ক-ঋণে সুদ ছাড়ের ব্যবস্থা করলে উপকৃত হব।” |