অবশেষে বিদ্যুতের আলো পেতে চলেছেন কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন অন্তত ১০টি গ্রামের হাজার কুড়ি বাসিন্দা। সম্প্রতি ওই সব গ্রামে সৌরবাতি লাগাতে এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে জেলা পরিষদ। প্রথম পর্যায়ের কাজে এ জন্য ২৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে।
স্বাধীনতার সাড়ে ছয় দশক পরেও বিদ্যুতের আলো পৌঁছয়নি দিনহাটার গীতালদহের জারিধরলা, দরিবস-সহ বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন অন্তত ১০টি গ্রামে। সন্ধ্যার পর গাঢ় অন্ধকারে ডুবে থাকে ওই সমস্ত এলাকা। শুধু গুটি কয়েক মোমবাতি আর লন্ঠনের আলো জ্বলে, তাও বেশিক্ষণ নয়। রাত ৮টা বাজতে না বাজতেই ঘুমিয়ে পড়তে বাধ্য হন বাসিন্দারা। আজও যা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যুতের দাবি জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। সম্প্রতি ওই সমস্ত গ্রামে সৌরবাতির ব্যবস্থা করতে কোচবিহার জেলা পরিষদ উদ্যোগী হয়েছে।
জেলা পরিষদ সভাধিপতি পুষ্পিতা ডাকুয়া এই প্রসঙ্গে বলেন, “বহু বছর ধরে ওই গ্রামের মানুষ কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছেন। এত দিনও কেন সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়নি জানি না। ওই এলাকাগুলিতে আমরা সৌরবাতি লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। যা জেলা পরিষদের বৈঠকে পাশ হয়েছে। দ্রুত সেই কাজ শুরু করব।” স্থানীয় ইলিয়াজ হোসেন, আব্দুল মিয়াঁ বলেন, “বহু দিন ধরে বিদ্যুতের দাবি জানিয়ে আসছি। কোনও লাভই হয়নি। তবে এ বার সবাই আশার কথা শোনাচ্ছেন। দেখা যাক কত দূর কী হয়।” দিনহাটা ১ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ গীতালদহের বাসিন্দা জিল একরাম বলেন, “স্থানীয় মানুষ বছরের পর বছর অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছেন। সন্ধ্যার পর গোটা এলাকা অন্ধকারে ডুবে থাকে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা থেকে রাতের রান্নাসমস্ত কিছুতেই তাঁদের চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। এত দিন কেউ উদ্যোগী হয়নি।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া জারিধরলা, দরিবস গ্রামে হাজার চারেক মানুষের বসবাস। গ্রাম দুটি একেবারে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া। গীতালদহ বাজার থেকে ওই গ্রামে যেতে বানিয়াদহ নদী পেরোতে হয়। নদী পেরোনোর পরে অন্তত দুই কিলোমিটার হাঁটলে গ্রামে পৌঁছনো যায়। ওই গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা যথেষ্ট ব্যয়সাধ্য বলে কেউ এত দিন এই ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ। সীমান্ত সংলগ্ন জারিধরলা, দরিবস, সাপগ্রাম কিংবা মানাবাড়ি-সহ ১০টি গ্রামের ২০ হাজার বাসিন্দার ভরসা তাই লন্ঠন অথবা মোমবাতির আলো। সম্প্রতি কোচবিহার জেলা পরিষদের সাধারণ সভায় সব সদস্যের মতের ভিত্তিতে গ্রামগুলিতে সৌরবাতি লাগানোর সিদ্ধান্ত পাশ হয়। জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, অচিরাচরিত শক্তি উন্নয়ন নিগমের সহায়তায় সৌরবাতি লাগানোর কাজ করা হবে। এক একটি আলো বসাতে ১০ হাজার ২০০ টাকা খরচ। জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক চিরঞ্জীব ঘোষ বলেছেন, “২৬ লক্ষ টাকার প্রকল্পের কাজের সিদ্ধান্ত হয়েছে।” |