কিসান ক্রেডিট কার্ড নেই, বিমাও করা নেই। মহাজনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পাঁচ বিঘেয় আলু চাষ করেছিলেন মাথাভাঙ্গার বাইশগুড়ির কৃষক মণীন্দ্র দাস। ধসায় নষ্ট হয়েছে আড়াই বিঘের আলু। এখন মহাজনের টাকা শোধ করা নিয়েই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁর। এ অবস্থা পচাগড়ের রঞ্জিত দাস থেকে বিজয় দাস-সহ বহু চাষির। এই পরিস্থিতিতে ভুট্টা-বীজ ও সার বিলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা কৃষি দফতর।
কোচবিহার জেলার শস্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিক বিপ্লব ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, “ধসার আক্রমণের পর থেকে কৃষি দফতর সব এলাকায় গিয়ে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে। তার পরেও কিছু ক্ষতি হয়েছে। ওই হিসাব রাজ্যে পাঠানো হয়েছে।” তিনি জানান, বর্তমানে ধসা নিয়ন্ত্রণে আছে।
সরকারি হিসাবে কোচবিহারে এ বার প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে ধসা ছড়িয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষির সংখ্যা ২২ হাজার ১০৮ জন। এদের মধ্যে ১৫ হাজার ২২ জন কৃষকের খেতের আলু পঞ্চাশের শতাংশের বেশি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাকি ৭০৮৬ জনের খেতের আলু ৫০ শতাংশের কম ক্ষতি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কৃষকদের জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়নি।
কৃষিকর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের হিসেব-সহ একটি রিপোটর্র্ রাজ্য কৃষি দফতরে পাঠানো হয়েছে। জেলা কৃষি দফতর ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য ভুট্টা এবং পাটের বীজ চেয়ে পাঠিয়েছে। তা পেলে জেলা পরিষদের মাধ্যমে তা কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এক আধিকারিক জানান, ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। জেলায় বর্তমানে সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়। এক বিঘা জমিতে এক কেজি বীজের প্রয়োজন। ১০ কেজি সার লাগে। তা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বিনা পয়সায় বিলি করলে ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে যাবে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তা বিলি করতে হবে। এই নিয়ে এখনও কিছু জানায়নি রাজ্য কৃষি দফতর।
চাষিদের অনেকে আবার সরাসরি ক্ষতিপূরণের দাবি করেন। মাথাভাঙ্গার পচাগড়ের কৃষক ডিওয়াইএফ নেতা কাজল রায় বলেন, “তিন বিঘায় আলু চাষ করেছি। পুরোটা নষ্ট হতে বসেছে। অনেকেই নিজের টাকায় চাষ করেন। অনেকে মহাজনের থেকে ঋণ নিয়ে। চাষিদের সরাসরি ক্ষতিপূরণ দিলেই ভাল হয়।” কৃষি দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, আলু চাষিদের মধ্যে ৭০ শতাংশের কিসান ক্রেডিট কার্ড আছে। এ বছরে ১৫ হাজার চাষির নতুন করে কার্ড হয়েছে। কোচবিহারের লক্ষাধিক চাষি আলু চাষে যুক্ত। কৃষি দফতরের হিসাব ধরলেও এখনও ৩০ হাজার চাষির কিসান ক্রেডিট কার্ড নেই।
কোচবিহার ২ ব্লকে কৃষক দিলীপ মণ্ডলের কিসান ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। তিনি সাত বিঘা জমিতে এ বার আলু চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “প্রায় এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে চাষ করেছি। অনেক আলু নষ্ট হয়েছে। কিন্তু বিমা করা আছে বলে ক্ষতিপূরণ পাব আশা করছি।” ওই ব্লকের নিবারণ দাসের কিসান ক্রেডিট কার্ড নেই। তিনি আলু চাষের সময় ব্যাঙ্ক থেকে এক লক্ষ টাকা ঋণ নেন। তিনি বলেন, “ঋণ নেওয়ার সময় বিমা করি। যা অবস্থা তাতে ওই ভরসা। তবে ভুট্টা চাষের সুযোগ দিলে ক্ষতি পুষিয়ে যাবে।” |