কালিয়াচক কলেজের ছাত্র সংসদ ভোটে খোলাখুলি গুলি চালানোর ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে ৭২ ঘণ্টা। তার পরেও গ্রেফতার হয়নি দুষ্কৃতীদের একজনও। ফলে, বিরোধী কংগ্রেস, সিপিএম তো বটেই, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের অন্দরেও পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শাসক ও বিরোধী, উভয় দলের নেতা-কর্মীদের অনেকেই জানান, যেখানে ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দু’জন দুষ্কৃতী রিভলবার থেকে গুলি চালাচ্ছে, সেখানে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলে দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে মালদহের পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “ভিডিও ফুটেজ দেখে কালিয়াচক কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বোমা-গুলি ছোঁড়ার ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ৩-৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু, সকলেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে।” তদন্তের স্বার্থে পুলিশ শনাক্ত হওয়া একজনের নামও জানাতে রাজি নয়।
সোমবার মালদহের কালিয়াচক কলেজে ছাত্র সংঘর্ষ রীতিমতো ‘গ্যাং ওয়ার’-এর আকার নেয়। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে চলা বোমা-গুলির লড়াইয়ের ফলে ঘণ্টাখানেক ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কেও যানবাহন স্তব্ধ হয়ে যায়। গোটা সুলতানগঞ্জ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। গৃহস্থেরাও আতঙ্কে দরজা-জানলা বন্ধ করে দেন। গুলির লড়াইয়ে কেউ হতাহত হননি। তবে বিরোধী দল এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ঘটনার সময়ে পুলিশ ছিল নিষ্ক্রিয় সাক্ষী।
তবে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, যে যুবককে ছবিতে ডান হাতে গুলি ছুড়তে দেখা যাচ্ছে, সে সম্ভবত কালিয়াচকের সুলতানগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, ওই যুবক কয়লার চোরাকারবারে যুক্ত বলেও অভিযোগ রয়েছে। অতীতে সিপিএম সমর্থক হলেও বর্তমানে ওই যুবক তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত বলেও এলাকাবাসীদের একাংশ পুলিশকে জানিয়েছেন। তৃণমূলের মালদহ জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “দুষ্কৃতীরা আমাদের দলের কেউ নয়। ছাত্র সংসদ ভোটে গুলি চালানোর ঘটনায় যুক্তদের গ্রেফতারে গড়িমসি বরদাস্ত হবে না।” কালিয়াচক কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী জানান, ভোটের দিন কলেজের ভিতরে কোনও গোলমাল হয়নি। তাঁর দাবি, “কলেজের বাইরে বোমা, গুলি ছোড়ার ঘটনায় যুক্তদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে বলেছি। এলাকায় যারা অশান্তি সৃষ্টি করবে তাদের কাউকে ছাড়া হবে না।”
ছাত্র পরিষদ ও এসএফআই অবশ্য অভিযোগ করছে, তৃণমূলের আশ্রিত বলেই অভিযুক্তদের নাম পুলিশ বলছে না। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “কালিয়াচকের হামলাকারীরা তৃণমূল কংগ্রেসের আশ্রয়ে রয়েছে বলেই পুলিশ গ্রেফতার করার সাহস পাচ্ছে না।” মালদহের জেলা কংগ্রেস সভাপতি মৌসম বেনজির নূরও পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, “বিপাকে পড়ে এখন তৃণমূলের জেলা সভাপতি উল্টোপাল্টা কথা বলছে। তৃণমূল প্রমাণ করুক, রিভলবার হাতে যাদের ছবি খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে, তারা তৃণমূলের কেউ না। সেই সাহস তৃণমূল নেতাদের নেই।” |