প্রধাননগর থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে তরুণীকে ছুরি মেরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় এ দিনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। ফলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তরুণীর পরিবারের লোকজনের মধ্যে। তাঁরা দ্রুত ঘটনার তদন্ত করে অপরাধীর গ্রেফতাররে দাবি করেছেন। বুধবার সকালে ওই তরুণীর জবানবন্দি নিতে নার্সিংহোমে যান কমিশনার জগ মোহন। পুরো ঘটনা শুনে আশ্বাস দেন দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে। ওই তরুণীকে বুধবারই নার্সিংহোম থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতত সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর কাকা।
কমিশনার এদিন জানান, তিন মাস আগের ঘটনার প্রতিবাদের জেরে এই কাণ্ড হয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, “অভিযুক্তদের খোঁজা হচ্ছে। আমরা তদন্ত করছি। অনেক রকম সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখা হচ্ছে।” অন্যদিকে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে শহরে।
এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্য জ্যোৎস্না অগ্রবাল এদিন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সমাধানের আর্জি জানান। তিনি বলেন, “আমি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি আশ্বাস দিয়েছেন ব্যপারটি খতিয়ে দেখার। শহরের মেয়েদের উপরে ঘটা এই ধরণের ঘটনা কিছুতেই বরদাস্ত করা যাবে না।” এই ঘটনায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য। তিনি অভিযোগ করেন, “তৃণমূল সরকারের প্রশ্রয়েই এই ঘটনা ঘটছে সারা রাজ্য জুড়েই। মহিলাদের নিরাপত্তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। মহিলারা রাতে রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। পুলিশের উচিত দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে মানুষের মধ্যে কিছুটা আস্থা ফিরিয়ে আনা।” অশোকবাবু জানান, বৃহস্পতিবার বামফ্রন্টের দুর্নীতি বিরোধী মিছিল রয়েছে। তাঁর সঙ্গে নারী নির্যাতনের বিষয়ও তোলা হবে। দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামের পক্ষ থেকেও ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, “শিলিগুড়ি এলাকায় গত কয়েক মাসে মহিলাদের উপর হামলা ও ধর্ষণের একাধিক মামলা রয়েছে। এগুলির দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার।”
সোমবার রাত ৮ টা নাগাদ প্রধাননগর এলাকায় ডাক্তার দেখাতে গিয়ে আক্রান্ত হন শিলিগুড়িরই বাসিন্দা ওই তরুণী। সেখানেই তিনজন দুষ্কৃতী ছুরি নিয়ে তার উপরে হামলা চালায়। তাকে ছুরিকাহত করলে অজ্ঞান হয়ে পড়েন ওই তরুণী। সেই সুযোগে তাঁর গলার সোনার হার, টাকার পার্স ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করে পালায় তারা।
গত অক্টোবর মাসের শেষেও এই তরুণীই শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোমের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছিলেন। তার ভিত্তিতে ওই চিকিৎসককে বরখাস্তও করা হয়। চিকিৎসককে গ্রেফতারও করেছিল মাটিগাড়া থানার পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মামলাও চলছে। তার সঙ্গে এই ঘটনার যোগাযোগ রয়েছে বলে পুলিশ মনে করছে। তিন মাসের ব্যবধানে পরপর দুটি ঘটনার পর ভেঙে পড়েছেন তরুণীর পরিবার। তরুণীর কাকা বলেন, “এ দিন নার্সিংহোমে পুলিশ কমিশনারকে আমরা আর্জি জানিয়েছি অপরাধীকে খুঁজে বের করার। যাতে আসল সত্য বেরিয়ে আসতে পারে। আমরা আতঙ্কে রয়েছি।” |