এক মাস আগে কুয়াশা ঢাকা সন্ধ্যায় বিস্ফোরণ কেড়ে নিয়েছিল এলাকার ৬টি প্রাণ। এলাকার একটি ছোট সেতুর উপরে প্লাস্টিক ব্যাগে ভরা টিফিন কৌটো খোলার চেষ্টা করেছিলেন এক মধ্যবয়সী মাংস বিক্রেতা। এর পরেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। নিমেষে বাসিন্দারা দেখতে পান, সেতুর মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে ৫টি ছিন্নভিন্ন দেহ। রাস্তায় গড়াচ্ছে রক্ত। পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয় বিস্ফোরণে জখম আরও এক যুবকের। ঘটনার ৩২ দিনের মাথায় বুধবার বিস্ফোরণ কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত সন্দেহে কেএলও-র ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ তরুণ থাপা ওরফে জলপাইগুড়ির বেলাকোবার নারায়ণ রায় এবং ময়নাগুড়ি রোড এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ রায় ওরফে ইকবাল সিদ্দিকি ওরফে প্রাণনারায়ণ কোচ গ্রেফতার হতেই শাস্তির দাবিতে সরব বজরাপাড়া। একই সঙ্গে গজলডোবা লাগোয়া মিলনপল্লির চর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা লিঙ্কম্যান রামশঙ্কর বসাকের মতো একজন ফুচকাওয়ালা কী ভাবে এই ধরনের নাশকতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন তা নিয়েও এলাকায় জল্পনা তুঙ্গে।
এ দিন বজরাপাড়ায় সন্ধ্যায় থেকেই নানা এলাকায় জটলা দেখা যায়। কোনভাবে যাতে উত্তেজনা ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের ভ্যানের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বিস্ফোরণে নিহত অ্যাম্বুল্যান্স চালক ১৮ বছরের পাপ্পু মহম্মদের কাকা মহামিন আলি। তাঁর কথায়, “যা ক্ষতি হয়েছে, তা কোনদিনই পূরণ হবে না। পাপ্পুকে আর ফিরে পাব না। তবে সরকারের সাহায্য মিলেছে। পুলিশ বলেছে, বিস্ফোরণের মূল পাণ্ডাদেরও ধরেছে। তা যদি সত্যি হয়, তবে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তবেই শান্তি পাব।” একই সুরে নিহত আর্নেস হোসেনের বাবা ভ্যান চালক আফজল হোসেন বলেন, “যাঁদের কারণে ছেলেকে হারিয়েছে, তারা ধরা পড়েছে বলে শুনেছি। ওদের কঠোর শাস্তি হোক।”
এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য বিকাশ বসাকের দাবি, “তদন্তের কাজ পুলিশ যথাযথভাবেই চালাচ্ছে। এলাকার সকলেও তাদের সন্তোষের কথা জানিয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা দোষীদের কঠোর শাস্তি চায়।” জলপাইগুড়ি পুরসভার কংগ্রেসি চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “জলপাইগুড়ি শহরে এমন নাশকতার ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। দোষীদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি চন্দন ভৌমিকও পুলিশের তদন্তে আস্থা প্রকাশ করে, বিস্ফোরণে জড়িতদের আইন মেনে যথাযথ শাস্তি হবে বলে জানিয়েছেন।
বিস্ফোরণের পরে জড়িত সন্দেহে কয়েকজন প্রাক্তন কেএলও সদস্য সহ কেপিপির কিছু নেতাকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এ দিন মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতারের কথা শোনার পরে কেপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিখিল রায় বলেন, “শুধু কেএলও নয়, যে কোনও সংগঠনের পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবির বিরোধী আমরা। কেপিপি ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে পৃথক রাজ্যের দাবিতে গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করছে। তবু আমাদের কেএলও-র সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা প্রকৃত অপরাধী তাঁদের ধরা হোক। কিন্তু দেখতে হবে যেন নিরীহ কোনও ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে তুলে এনে জঙ্গি হিসেবে দেখান না হয়।” |