এ রাজ্যে জেলায় জেলায় কেন্দ্র এবং রাজ্যের যৌথ উদোগে পর্যটন-উন্নয়ন প্রকল্পে কাজের গতি আশাপ্রদ নয়। তাই রাজ্যের পর্যটন কর্তাদের দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক। বুধবার কেন্দ্র-রাজ্য আলোচনার পর মন্ত্রকের এক পদস্থ কর্তা জানান, পশ্চিমবঙ্গ-সহ কয়েকটি রাজ্যে পর্যটন প্রকল্পের কাজে গতি না এলে এজেন্টদের কমিশন বন্ধ করা হতে পারে।
কেন রাজ্যের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক? মন্ত্রক সূত্রের খবর, রাজ্যের ৯টি পর্যটন-প্রকল্পের কাজের মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে। টাকা মঞ্জুর করা হলেও একটি ক্ষেত্রেও পুরো প্রকল্পের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইউসি) পাওয়া যায়নি। কাজে দেরি হওয়ায় বাড়ছে প্রকল্প-ব্যয়। “বিভিন্ন পর্যটন প্রকল্পের পরিকল্পনা তৈরি এবং তদারকির জন্য রাজ্য পর্যায়ের যে এজেন্টদের কমিশন দেওয়া হত, তা বন্ধ করা হতে পারে,” জানান মন্ত্রকের এক পদস্থ অফিসার। এর পর প্রতিটি রাজ্যের সঙ্গে আলাদা করে বসবেন মন্ত্রকের কর্তারা। রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “প্রকল্প রূপায়ণে কারও গাফিলতি থাকলে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যটন-পরিকাঠামো উন্নয়নে নানা ভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রের দাবি, তারা যে সব পর্যটন প্রকল্পে টাকা ঢেলেছে, সেগুলির কাজে সে ভাবে গতি আসেনি। সমস্যা মেনে নিয়ে বর্তমান পর্যটনমন্ত্রী বলছেন, “এখন প্রতিটি প্রকল্পের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।”
পর্যটন মন্ত্রক সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের সৈকত-পর্যটন প্রকল্পের পরিকল্পনা হয় ২০০৯-’১০ অর্থবর্ষে। বরাদ্দ হয় প্রায় ৬ কোটি টাকা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অর্ধেক টাকারও কাজও হয়নি। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের পরে এখন ওই প্রকল্পের দায়িত্বে রাজ্যের পর্যটন উন্নয়ন নিগম (টিডিসি)। টিডিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভীষ্ম দাশগুপ্ত জানান, তাঁরা ওড়িশা সীমানা লাগোয়া উদয়পুরে বড় মাপের ‘টেন্ট রিসর্ট’ গড়ছেন। ৩৫টি আধুনিক তাঁবু হয়েছে সেখানে। হবে ফুড কোর্ট, ল্যান্ডস্কেপিং। ভীষ্মবাবু বলেন, “মাসখানেকের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।”
কান্দি-কর্ণসুবর্ণ-বহরমপুর পর্যটন প্রকল্পের জন্য ২০০৮-০৯ অর্থবর্ষে বরাদ্দ হয় সাড়ে চার কোটি টাকা, যার মধ্যে দেড় কোটি টাকা দেয় কেন্দ্র। সে প্রকল্পেও কাজ এগোয়নি, জানান রাজ্যের পর্যটন-অধিকর্তা উমাপদ চট্টোপাধ্যায়ের। এখন টিডিসি-র সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত ওই প্রকল্পের কাজ শেষ করার দায়িত্ব নিয়েছেন কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ইসলামপুর-লালবাগ-জিয়াগঞ্জ ট্যুরিজম সার্কিট প্রকল্পটি নিয়েও সমস্যা রয়েছে। ২০১০-’১১ অর্থবর্ষে অনুমোদিত টাকার প্রথম কিস্তির ২৫ শতাংশ টাকা এসে পড়ে আছে। ২০০৯-’১০ অর্থবর্ষের ‘ওয়েস্ট ডুয়ার্স সার্কিট’ এবং ২০১০-’১১-র ‘আহিরণ বিল-সুভাষদ্বীপ -সাগরদিঘি সার্কিট’ (দু’টি ক্ষেত্রেই বরাদ্দ প্রায় ৮ কোটি টাকা করে) প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে দিল্লি সতর্কীকরণ অস্বাভাবিক নয়। রাজ্য পর্যটন দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় অনুদানের অন্য কয়েকটি প্রকল্পের হাল যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। তার মধ্যে ঝাড়গ্রামকে ঘিরে ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্প, বোলপুর-বক্রেশ্বর-নলহাটির প্রকল্প, ‘ডেভেলপমেন্ট অফ ডুয়ার্স অ্যাজ এ মেগা সিটি’ প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পগুলির অগ্রগতির কথাও কেন্দ্রকে বিবেচনা করতে হবে। |