অনূর্ধ্ব-২২ কোরীয় পড়ুয়ারা ম্যাচের প্রথমার্ধ ওই পাসিং ফুটবল খেলেই লাল-হলুদের মিডল এবং ডিফেন্সিভ থার্ড দাপাচ্ছিলেন! তা-ও সারা দিন স্রেফ কলা আর মিনারেল ওয়াটার খেয়ে। ম্যাচের দিন নাকি ওই দু’টোই তাঁদের খাদ্য বলে জানিয়ে দিয়েছেন সংগঠকদের। ৪-৪-২ ছকে জমাট রক্ষণের সঙ্গে মাঝমাঠে একসঙ্গে ৮-৯টা পর্যন্ত পাস খেলা। ছোট জায়গায় চকিত টার্নিং, ড্রিবল, দুরন্ত থার্ডম্যান মুভ মনে করাচ্ছিল এ বারের ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর্তুগিজ স্লোগান—‘জুন্তোস নুম সো রিৎমো’। বাংলায় যার অর্থ, ‘সবাই এক ছন্দে’। একই ছন্দে গোটা পাঁচেক পাসে লাল-হলুদ রক্ষণকে নাকাল করে দিচ্ছিলেন কোরীয়রা। সেই ছন্দটাই আবার ইস্টবেঙ্গল হারিয়েছিল শুরুতে। যার সুবাদে চার মিনিটেই গোল হজম। তবে জিম দেই হানের গোলের সময় তাঁকে টার্নিংয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন অর্ণব, অভিষেক।
মাস পাঁচেক বাদেই টানা আট বার বিশ্বকাপ খেলতে চলা দক্ষিণ কোরিয়ান ফুটবলের ইউএসপি দুরন্ত টার্নিং, স্পিড, ক্রমাগত দুই উইংকে শাফল করে যাওয়া। সঙ্গে বুলেটের মতো শট। সেই দেশোয়ালি ধারাপাত মেনেই আক্রমণের সময় কোরিয়ান পড়ুয়ারা হয়ে যাচ্ছিলেন ৪-৩-৩। আর মোগারা বল ধরলেই ইয়ুন হাইয়ং সেওপ এসে দাঁড়িয়ে পড়ছিলেন মাঝমাঠে। সতেরো নম্বর জার্সিধারী সিম জিন ইউয়ি একদম ‘ফ্রি-ম্যান’ হয়ে দাপাচ্ছিলেন উইং থেকে ডাউন দ্য মিডল। মর্গ্যান জমানায় যেমন খেলতেন পেন ওরজি। ম্যাচের সেরাও এই সিম। দলের গোলের পিছনেও রয়েছে তাঁর মস্তিষ্ক। ইস্টবেঙ্গল তখন ছন্নছাড়া। বল ধরে খেলার লোক নেই। গোলের সুযোগ নষ্ট করে চিডি, মোগা, তুলুঙ্গারা ভিলেন। মাঝমাঠে ‘লুজ বল’টাও ধরতে পারছিলেন না। উল্টে দৃষ্টিকটু ভাবে মাঠের ভেতরেই নিজেদের মধ্যে তর্কে জড়িয়ে পড়লেন সুয়োকা-চিডি। কেন তাঁকে সুয়োকা বল বাড়াচ্ছেন না তার জন্য জাপানি ফুটবলারটির দিকে তেড়ে যান নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার। উত্তেজক পরিস্থিতি সামলাতে নামতে হল কিনা মোগাকে! মর্গ্যানের ৪-১-৩-২ ছক আপাতত হিমঘরে ঢুকিয়ে ৪-৪-২ রপ্ত করার মঞ্চ তাই জয় আনার বদলে দলীয় সংহতি বিঘ্নিত হওয়ার দায়ে কলুষিত। খেলা শেষে ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্য চিডি-মোগার সঙ্গে একান্তে আলোচনা করতেও দেখা যায় ইস্টবেঙ্গল কোচকে। |
অর্ণব-রাজুদের পায়ে সানমুনের পাসের ঢেউ আছড়ে পড়া আটকাতে দ্বিতীয়ার্ধে সুয়োকাকে তুলে মেহতাবকে নামান ইস্টবেঙ্গল কোচ। দ্বিতীয় চাল, জোয়াকিমকে তুলে লালরিন্দিকাকে মাঠে আনা। তাতে বল ধরে খেলার শক্তি পেলেন চিডি-মোগা। দুই সাইডব্যাকও কোচের নির্দেশে হানা দিলেন সানমুন রক্ষণে। মাঝমাঠও প্রথমার্ধের মতো ফাইনাল ট্যাকলে যাওয়া বন্ধ করে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই ছাত্র ফুটবলারদের রক্ষণভাগে ঘটতে লাগল ছোটখাটো ভুল। আর সেখান থেকেই গোল শোধ মোগার। বাড়ি ফেরার পথে আনন্দবাজারকে সুদানিজ স্ট্রাইকার বলে গেলেন, “এক সময় টেনশন হচ্ছিল। তবে সুযোগ নষ্ট হয়েছে প্রচুর। না হলে আমরা জিতেই ফিরতাম।”
কলকাতা ডার্বিকে গুরুত্ব না দিয়ে ফেড কাপ থেকে হতাশা নিয়ে ফিরেছিলেন আর্মান্দো। আইএফএ শিল্ডকেও তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। যার প্রভাব কিছুটা হলেও ফুটবলারদের মধ্যে। নিট ফল, জেতা ম্যাচ ড্র করে ফিরলেন মেহতাবরা। আর্মান্দো কি লাল-হলুদ তাঁবুতে আই লিগ নিয়ে আসবই, মার্কা কোনও চুক্তি সই করে বসে আছেন? যাই করুন, আইএফএ শিল্ডের বক্স অফিস কিন্তু সমর্থকদের মনে ফিকে নয়। গেলাং ম্যাচের আগে আর্মান্দো তা বুঝলে মঙ্গল তাঁর দলেরই। |
ইস্টবেঙ্গল: অভ্র, অভিষেক, অর্ণব, রাজু, রবার্ট, তুলুঙ্গা, সুবোধ (অ্যালভিটো), সুয়োকা (মেহতাব), জোয়াকিম (লালরিন্দিকা), চিডি, মোগা। |