চল্লিশ পেরোলেই চালশে...
কিন্তু সবুজ মাঠে যারা বল পায়ে দাপাচ্ছেন, প্রায় সকলেরই বয়স চল্লিশ পেরিয়ে গিয়েছে। কারও মাথা জোড়া টাক, কারও চুলে পাক ধরেছে।
কিন্তু তাতে কী? কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। বল কাড়তে গিয়ে চোরাগোপ্তা ফাউলও চলছে। রেফারির পকেট থেকে কার্ড। টানটান ম্যাচের শেষ টাইব্রেকারে।
হাওড়ার বড়গাছিয়ায় এই ম্যাচই জমিয়ে দিল প্রজাতন্ত্র দিবসের দুপুর। স্থানীয় নবারুণ অ্যাথলেটিক ক্লাবের উদ্যোগে ২৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি নকআউট ফুটবলে লড়তে নেমেছিল ৩৫ পার করা তুর্কিদের আটটি দল। খেলোয়াড়দের অন্তত আশি ভাগ এক সময়ে কলকাতা ময়দানে খেলেছেন। বাকিরাও খেলেছেন জেলা লিগ। এক সময়ে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডানে খেলা অলোক দে, আবিদ হাসান, অমর গঙ্গোপাধ্যায়, দেবাশিস পাখিরা দাপিয়ে খেলা দেখিয়েছেন। |
হাওড়ার বড়গাছিয়ায় ফুটবল মিলন মেলা।—নিজস্ব চিত্র। |
টুর্নামেন্ট ঘিরে প্রস্তুতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মাঠে থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে বড় তোরণ। মাঠে হাজির মহিলা ঘোষিকা। ময়দানের প্রাক্তন ফুটবলারদের খেলা দেখতে মাঠের দু’পাশেই চাষের জমি ভরে উঠেছিল সাইকেল ও মোটরবাইকে। আশপাশে বাড়ির ছাদেও উপচে পড়া ভিড়। যেখানে শুধু পুরুষ নয়, মহিলা- মুখও প্রচুর।
নবারুণ অ্যাথলেটিক ক্লাবের কর্তা অনুপ গলুই জানান, ‘মিলন মেলা’ এ বার সাত বছরে পড়ল। এখানে খেলার প্রাথমিক শর্ত, খেলোয়াড়ের বয়স হতে হবে ৩৫ বছরের বেশি। এ বার দুইল্যা অ্যাথেলেটিক ক্লাব, মাকড়দহ ইউনাইটেড ফুটবল কোচিং সেন্টার, হুগলি মেলা, ইস্ট কলকাতা ভেটের্যান্স, বালিয়া স্পোর্টস অ্যাকাডেমি, বড়গাছিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, হাওড়া একাদশ ও পার্বতীপুর মিলন সঙ্ঘ আটটি ক্লাব যোগ দিয়েছে। খেলোয়াড়দের গড় বয়স ৪০ থেকে ৪৫। তবে ৫০ থেকে ৫৫ বছর বয়সী, এমনকী ষাটোর্ধ্ব ফুটবলারেরাও ম্যাচ খেলেছেন। বয়স্কেরা মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়লে যাতে সামাল দেওয়া যায়, তার জন্য মজুত রাখা হয়েছিল ডাক্তারও।
প্রতিযোগিতার অন্যতম উদ্যোক্তা, এলাকার প্রাক্তন ফুটবলার দুলাল দাস জানান, তাঁদের মাঠে ছোট ছেলেরা নিয়মিত অনুশীলন করে। জেলার বিভিন্ন টুর্নামেন্টেও খেলে তারা। ময়দানের প্রাক্তন ফুটবলারদের দেখে যাতে তারা খেলা শেখার সুযোগ পায়, মিলন মেলার সেটাই আসল লক্ষ্য। গোড়ার দিকে যে দলগুলি আসত, তাদের খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছিল ৫০-৫৫ বছর। কিন্তু ক্রমশ প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা আবহাওয়া তৈরি হয়ে যাওয়ায় তুলনায় কমবয়সী খেলোয়াড় নিয়ে আসছে দলগুলি। তবে প্রতি বছর প্রতিটি দলেই ৫০-৫৫ বছর বয়সী দু’তিন জন থাকেনই। এ বার পঞ্চাশোর্ধ্বদের মধ্যে সবচেয়ে নজর কেড়েছেন বালিয়া স্পোর্টস অ্যাকাডেমির আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় (৫২) ও সমীর মল্লিক (৫১), পার্বতীপুর মিলন সঙ্ঘের উজ্জ্বল গলুই (৫০), বড়গাছিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের তাপস মান্না (৫০), হাওড়া একাদশের সেখ সাহানাওয়াজ (৫২) এবং আরও দু’এক জন।
ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল মাকড়দহ ইউনাইটেড ফুটবল কোচিং সেন্টার ও দুইল্যা অ্যাথলেটিক ক্লাব। নির্ধারিত সময়ে গোল না হলেও গোলমুখী কিছু ধারালো আক্রমণ ও দারুণ সেভ ছিল দর্শকদের পাওনা। পুরনো দিনের ঝলক দেখাতে মরিয়া ছিলেন সবাই। টাইব্রেকারে জিতে যায় দুইল্যা। স্থানীয় বিধায়ক আবুল কাশেম মোল্লাও ওই দিন মাঠে উপস্থিত ছিলেন। |