সম্পাদকীয় ২...
ভাঙনের মুখে
তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে বিরোধী দল ডিএমকে খাড়াখাড়ি বিভাজনের সম্মুখীন। কুলপতি এম করুণানিধির দুই পুত্র আলাগিরি এবং স্ট্যালিন এই বিভাজনের দুই মেরু। জ্যেষ্ঠ পুত্র আলাগিরি ইতিমধ্যেই দল হইতে সাসপেন্ড হইয়াছেন, তাঁহার বহিষ্কার সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু তাঁহার সহিত দলের মাদুরাই শাখা তথা দক্ষিণ তামিলনাড়ুর কর্মী-সমর্থকরা রহিয়াছেন, স্ট্যালিনের সঙ্গে যেমন রহিয়াছেন চেন্নাই সহ উত্তর তামিলনাড়ুর দলীয় কর্মীরা। ক্যাডারভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন ডিএমকে-র উল্লম্ব বিভাজনের সম্ভাবনাটি এ জন্যই মূর্ত হইয়া উঠিয়াছে। যুযুধান দুই পক্ষের কেহই নমনীয়তা বা আপসে বিশ্বাসী না-হওয়ায় ডিএমকে’র ভাঙন একপ্রকার অনিবার্য।
করুণানিধির দুই পুত্রের বিবাদের মূলে রহিয়াছে উত্তরাধিকার লইয়া কাজিয়া এবং উত্তরসূরি মনোনয়নে কনিষ্ঠ পুত্রের প্রতি করুণানিধির অন্ধ পক্ষপাত। এই পক্ষপাতের কারণে জ্যেষ্ঠ পুত্র আলাগিরি সর্বদাই নিজেকে ‘বঞ্চিত’ গণ্য করিয়া আসিয়াছেন। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, ২০০৭ সালে তামিল দৈনিক ‘দিনকরণ’-এর এক সমীক্ষায় স্ট্যালিনকে তামিলদের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় নেতা বলিয়া উল্লেখ করার পরের দিনই পত্রিকা ভবনে রহস্যময় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। করুণানিধি সে সময় বিবদমান দুই পুত্রের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন বটে, কিন্তু তাহাতে ঈর্ষা ও বিদ্বেষের ক্ষত নিরাময় হয় নাই। ২০০৯ সালে আলাগিরিকে রাজ্য-রাজনীতি হইতে দূরে সরাইয়া দিতে করুণানিধি তাঁহাকে ইউপিএ সরকারের মন্ত্রিসভায় ‘নির্বাসিত’ করেন। তামিলনাড়ুতে স্ট্যালিন নিরঙ্কুশ হইয়া ওঠেন। আর মাদুরাই সহ দক্ষিণ তামিলনাড়ুর সংগঠনে নিজের প্রভাব অক্ষুণ্ণ রাখিতে আলাগিরি ঘন ঘন দিল্লি ছাড়িয়া রাজ্যে পাড়ি দিতে থাকেন। পঞ্চদশ লোকসভার নির্বাচন যত আসন্ন হইয়াছে, ততই দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন লইয়া দুই ভাইয়ের ঝগড়া চরমে উঠিয়াছে। শেষ পর্যন্ত ‘তিন মাসের মধ্যে স্ট্যালিনের মৃত্যু হইবে’, আলাগিরির এই মন্তব্যের পরে করুণানিধি তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্রকে দল হইতেও নির্বাসিত করিলেন।
সমগ্র ঘটনাক্রমের পরতে-পরতে যে কুনাট্যরঙ্গ নিহিত আছে, তাহা হয়তো চলচ্চিত্রনির্ভর তামিল রাজনীতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। নাটকীয়তা, এমনকী অতিনাটকীয়তাও এত দিনে ভারতীয় রাজনীতির অঙ্গাঙ্গি। কিন্তু যে-রাজ্যের রাজনীতিকরা প্রায় সকলেই রূপালি পর্দা হইতে ধরণীর ধুলায় অবতীর্ণ হন, মুখ্যমন্ত্রী এক কালের জনপ্রিয় নায়িকা, বিরোধী নেতা প্রখ্যাত চিত্রনাট্য রচয়িতা, শরিক অন্যান্য দলও ম্যাটিনি আইডলদের ফ্যান-ক্লাব হইতে বিবর্তিত, তাহার নির্বাচনী ঘনঘটার পূর্বকাল যে এমন নাট্যরসসমৃদ্ধ হইবে, তাহাতে আর আশ্চর্য কী? এমনিতেই ডিএমকে ইউপিএ সরকারের শরিক হিসাবে এবং তাহার মন্ত্রী-সাংসদরা গুরুতর দুর্নীতির দায়ে এখনও অভিযুক্ত থাকায় নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বে এডিএমকে-র তুলনায় পিছাইয়া আছে। আলাগিরি-স্ট্যালিন বিরোধ ও দলে তাহার প্রতিকূল প্রভাব সেই পশ্চাদ্বর্তিতা আরও নিশ্চিত করিবে। তবে প্রখর পিতৃতন্ত্রে অভ্যস্ত তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে কুলপতি হিসাবে করুণানিধি এখনও ‘শেষ কথা’ বলার অধিকারী। তিনি যদি দুই পুত্রের মধ্যে সন্ধি স্থাপনে সক্ষম হন কিংবা আলাগিরিকে ‘ত্যাজ্য’ করিয়া পুরোপুরি কনিষ্ঠকেই বরণ করেন, তবে ক্রমে বিভাজনের ক্ষতি হ্রাস পাইতে পারে। করুণানিধি যে কিছুটা সেই পথেই হাঁটিতেছেন, ইঙ্গিত স্পষ্ট।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.