বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নোট বদলের ফরমান
পুরনো ফ্রিজ পাল্টে নয়া ফ্রিজ আনা যায়। টিভি বদলে টিভি। কিন্তু সব পুরনো নোট পাল্টে নতুন নোট? না, এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। ১৯৪৬, ১৯৫৪, ১৯৭৮ সালে এ দেশে বড় অঙ্কের নোট বাতিল করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কোটি কোটি নোট পাল্টানোর ঘটনা এটাই প্রথম। সম্প্রতি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে যে, দেশবাসীর কাছে ২০০৫ সালের আগে ইস্যু করা যে- সমস্ত নোট রয়েছে, সেই সবগুলিকেই এ বার পাল্টে নিতে হবে। তবে যেহেতু নোট বাতিল হচ্ছে না, তাই নগদ টাকার জোগান কমার সম্ভাবনা নেই।
বদল কেন?
স্বভাবতই বিষয়টি ঘিরে হাজারো প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারছে মানুষের মনে। যার মধ্যে একটি, কেন হঠাৎ এই কোটি কোটি নোট বদলের বিপুল যজ্ঞ! রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্র এর জবাবে জানাচ্ছে—
পুরনো নোটে সুরক্ষার বন্দোবস্ত কম। সহজেই তা জাল করা যায়। আর বাজারে জাল নোট বেশি ছড়িয়ে পড়লে বিপন্ন হয় সাধারণ মানুষের স্বার্থ। কারণ না-জেনেই তাঁদের তহবিলে মিশে যায় ওই ভুয়ো টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের অর্থনীতিও। তাই এ ভাবে জাল নোটের রমরমা ব্যবসা রুখতে কোমর বেঁধেছে তারা। পুরনোগুলি সব তুলে নিয়ে বাজারে চালু রাখা হবে সুরক্ষিত নতুন নোট।
অতি ব্যবহারে পুরনো নোটগুলি বেশির ভাগই মলিন হয়েছে। ফলে হাতবদলের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তার সমাধানও হয়ে যাবে।
পুরনো নোট পাল্টানোর এই প্রক্রিয়ায় নগদে রাখা কালো টাকার অনেকটাই ধরা পড়তে পারে।

দ্বিধা অনেক
কারণ যাই হোক, কী ভাবে এই পাহাড় পরিমাণ নোট পাল্টানো হবে, কিংবা এতে পরে কোনও আর্থিক লোকসান গুনতে হবে কি না— সে-সব নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩-র মার্চের শেষে ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের মোট সংখ্যা ছিল ৭৩৫১.৭০ কোটি। যার মোট মূল্য
১১,৬৪,৮০০ কোটি টাকা। এদের মধ্যে যে-অংশ ২০০৫ সালের আগে ছাপা, সেগুলিই পাল্টানো হবে। এখন প্রশ্ন, কবে কোথায়, কী ভাবে? কী ভাবেই বা চেনা যাবে কোন নোট ২০০৫ সালের আগে ইস্যু করা? পুরো ব্যাপারটাই দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।

চেনার উপায়
যে সব নোট ২০০৫ সাল বা তার পরে ছাপা হয়েছে, তাদের প্রতিটির পিছন দিকে একদম নীচে, মাঝখানে ছাপা আছে ইস্যুর বছর (যেমন দেখানো আছে সঙ্গের ছবিতে)। আপনি নিজেই আপনার নোটগুলি পরীক্ষা করে দেখুন। কোনও নোটে ইস্যুর বছর ছাপা না- থাকলে, বুঝতে হবে সেটি ২০০৫-এর আগের। সেগুলিই বদলাতে হবে।
পাল্টানোর সময়
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী—
আগামী ৩১ মার্চের পর ২০০৫ সালের আগে ইস্যু করা সব কাগুজে নোটের প্রচলন (সার্কুলেশন) সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাহার করা হবে।
১ এপ্রিল থেকে নাগরিকদের ব্যাঙ্কে যেতে হবে নোট পাল্টাতে।
যে-কোনও ব্যক্তি যে-কোনও ব্যাঙ্কে নোট পাল্টাতে পারবেন। এমনকী সেই ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্ট না-থাকলেও।
তবে ১ জুলাইয়ের পর ব্যাঙ্কের গ্রাহক নন, এমন কোনও ব্যক্তি ৫০০ ও ১০০০ টাকার ১০টির বেশি নোট পাল্টাতে চাইলে, তাঁকে পরিচয়পত্র ও ঠিকানার প্রমাণ দাখিল করতে হবে।
অবশ্য ১ জুলাইয়ের পর পুরনো নোট বাতিল হবে না। স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, পুরনো নোট কিন্তু গ্রহণযোগ্য (লিগ্যাল টেন্ডার) থাকবে। ব্যাঙ্কে জমা করলেই তার মূল্য পাওয়া যাবে।

যত নোট তত প্রশ্ন
এর পরেও নোট পাল্টানো নিয়ে আরও অসংখ্য প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। যেমন—
পুরনো নোটের বদলে কি কড়কড়ে নতুন নোট দেওয়া হবে?
সব ব্যাঙ্কে কি যথেষ্ট পরিমাণ নোট মজুত থাকবে? না-থাকলে কী হবে?
সব ব্যাঙ্ক কি এই পরিষেবা দিতে পরিকাঠামোগত দিক থেকে প্রস্তুত?
যে-সব অঞ্চলে ব্যাঙ্ক নেই সেখানকার মানুষের কী হবে?
কালো টাকা খোলা বাজারে ডিসকাউন্টে বিকোবে না তো?

কী হতে পারে
নোট প্রত্যাহারের প্রভাবে এই মুহূর্তে যা যা ঘটতে পারে—
এখন থেকেই কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান পুরনো নোট নিতে অস্বীকার করতে পারে।
পুরনো নোট দিয়ে সোনা কিনে রাখার কথা ভাবতে পারেন অনেকে। ফলে, বাড়তে পারে সোনার দাম।
নোট পাল্টানোর প্রক্রিয়া চলাকালীন বাজারে টাকার জোগান সাময়িক কিছুটা কমতে পারে। ফলে, অল্প হলেও কমতে পারে পণ্যের দাম।

বাস্তব অবস্থা
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নোট বদল নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না-হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তাদের মতে, পুরনো নোট পাল্টাতে তেমন অসুবিধা হবে না। ব্যাঙ্কগুলির কাছে এ ব্যাপারে তাদের নির্দেশিকা এলে পুরো ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে।

(লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.