১২৩ বছরে পড়ল দুর্গাপুরের মেজেডিহি গ্রামের রটন্তি কালী পুজো। নিতান্ত পারিবারিক পুজো হিসেবে শুরু হলেও ক্রমেই ওই পুজো বদলে গিয়েছে মিলন মেলায়। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি গ্রামবাসীরাও মেতে ওঠেন উৎসবে।
মেজেডিহি গ্রামের জগদীশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ওই পুজো শুরু হয়। তাঁর পরিবারের বর্তমান সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়, পানাগড়ের কাছে ভরতপুরে থাকতেন জগদীশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামহ তারাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মেজেডিহি গ্রামের তৎকালীন জমিদার ছিলেন অক্ষয়রাম ঘটক। ধর্মপরায়ণ জমিদার তারাচরণবাবুকে নিজের জমিদারি এলাকায় নিয়ে এসে বাড়ি তৈরি করে দেন ও কিছু জমি দান করেন। |
ধার্মিক তারাচরণবাবুর নাতি জগদীশ্বরবাবু শৈশবেই মাতৃহারা হন। প্রথম জীবন কাটে প্রবল আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যে। পরে একমাত্র পুত্রের অকালমৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন। সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে তীর্থযাত্রার সিদ্ধান্ত নেন জগদীশ্বরবাবু। নানা জায়গা ঘুরে পায়ে হেঁটে হরিদ্বারের পথে রওনাও দেন। কথিত আছে, রাস্তায় জঙ্গলে তিনি এক সন্ন্যাসীর সাক্ষাৎ পান। সেই সন্ন্যসীই তাঁকে বাড়ি ফিরে সংসারে মন দিতে বলেন। সঙ্গে জানান, মায়ের উপর বিশ্বাস না হারাতে, সময় হলে মা তাঁর দীক্ষার ব্যবস্থা করবেন।
সেই মতো বাড়ি ফিরে নতুন করে সংসারে মন দেন জদগীশ্বরবাবু। প্রায় দেড় দশক পরে তাঁর কর্মস্থল জামতাড়ার কাছে কসবা স্টেশনে ফের ওই সন্ন্যাসীর সাক্ষাৎ পান তিনি। সন্ন্যাসী তাঁকে নির্দেশ দেন, রটন্তী কালীমায়ের পুজো শুরু করতে হবে। বাংলা ১২৯৭ সনের ১৫ মাঘ প্রথম রটন্তী কালীপুজো শুরু হয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে। ওই পরিবারের শম্ভুনাথবাবু, রবিলোচনবাবু, রাখহরিবাবুরা জানান, দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা গড়ার পরে মেজেডিহি গ্রাম অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে পুজোও চলে আসে গোপালমাঠের জগুরবাঁধ প্লটে।
ডাকের সাজের প্রতিমার ওই পুজোয় আগে ছাগবলির প্রচলন থাকলেও তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহুদিন আগেই। বুধবার পুজোর রাতে পরিবারের আর এক সদস্য অশোকতরুবাবু জানান, কর্মসূত্রে পরিবারের অনেকে এখন দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পুজোয় সবাই বাড়ি আসায় পুজো যেন পারিবারিক মিলন মেলায় পরিণত হয়। |