দাবি উঠেছে বারবার। কিন্তু এখনও ফাইলবন্দি রয়ে গিয়েছে সালানপুর ব্লকে দমকল কেন্দ্র তৈরি করবার পরিকল্পনা। ফলে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আগুন লাগলে কী হবে সেই ভেবে এলাকার ব্যবসায়ী, উদ্যোগপতি থেকে সাধারণ বাসিন্দা সবাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী সালানপুর ব্লক আসানসোল শহর থেকে ২৭ কিমি দুরে অবস্থিত। জেলায় আর্থ-সামাজিক দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় রয়েছে একাধিক ভারী, মাঝারি ও ক্ষুদ্র উৎপাদন শিল্প। আছে বেশ কয়েকটি কয়লা খনি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২ হাজার হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট এই ব্লকের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় দুই লক্ষ। এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২৮টি বাজার ও ৫০ টির কাছাকাছি বহুতল আবাসন রয়েছে।
যথেষ্ট ঘিঞ্জি এই এলাকায় এর আগে বার কয়েক আগুন লাগার ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ব্লকের মধ্যে যদি কোথাও আগুন লাগে তা হলে দমকলের আসানসোল শাখাকে খবর পাঠাতে হয়। দূরত্ব বেশি হওয়ায় সেখান থেকে দমকলের ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হয়। ফলে সময়মতো আগুন নেভানোর কাজ শুরু না হওয়ায় অনেক সময় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দু’ বছর আগে রূপনারায়ণপুর বাজারের কাছে একটি আবর্জনার স্তুপে আগুন লেগেছিল। সেই সময়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পরে আসানসোল দমকল কেন্দ্র থেকে দমকল এসে পৌঁছায়। কিন্ত ততক্ষণে আগুন ভয়াবহ আকার নেয়। আগুন নেভাতে গিয়ে দমকল কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, খনি সংলগ্ন এলাকায় মাঝেমধ্যেই মাটি ফুঁড়ে আগুন বের হতে দেখা যায়। তখন আসানসোলের দমকলকেই খবর দিতে হয়। কিন্তু প্রতিবারই ঘটনাস্থলে দমকল দেরি করে পৌঁছয় বলে অভিযোগ। ফলে, যে কোনও সময়েই ঘটে যেতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা, আশঙ্কা বাসিন্দাদের।
রূপনারায়ণপুর বাজার সমিতির সম্পাদক মহম্মদ আরমানের অভিযোগ, “আমরা দমকল কেন্দ্র চেয়ে বহুবার প্রশাসনের কাছে দরবার করেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।” তাঁর আরও দাবি, বছর তিনেক আগে আসানসোলের মহকুমা শাসক দমকল কেন্দ্র তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন বলে জানালেও তার পরে আর কিছুই হয়নি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সালানপুরে দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জমি না পাওয়াতেই তৈরি হয়েছে সমস্যা। সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি শ্যামল মজুমদার জানান, রূপনারায়ণপুরের প্রান্তপল্লি এলাকায় দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য জমি পাওয়া গেলেও দমকল দফতর জানিয়েছে, সেই জমি দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য উপযুুক্ত নয়। ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জগদীশ মালাকারের দাবি, “এক সময় আমরাও এই দাবি তুলেছি। এখন ক্ষমতায় এসেছি। এ বার প্রশাসনিক পর্যায়ে উদ্যোগ শুরু করবো।” আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “আগে কী হয়েছে জানা নেই। বাসিন্দারা যদি আমার কাছে এলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ হবে।”
আপাতত এই আশ্বাসই ভরসা সালানপুরবাসীর। |