খনিগর্ভে কাজে নামা এক কর্মী কোথায় হারিয়ে যেতে পারেন, বুঝতে পারছেন অন্ডালের মুকুন্দপুর গ্রামের বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার সকালে কাজোড়া এরিয়ার খাস কাজোড়া ৬ নম্বর খনিতে কাজে নামার পর থেকে নিখোঁজ ওই গ্রামের বাসিন্দা পাঁচকড়ি নন্দী। যে চার সহকর্মীর সঙ্গে তিনি ভূগর্ভে নেমেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন পাঁচকড়িবাবুর পরিজনেরা। ইসিএলের উদ্ধারকারী দলের তরফে দফায়-দফায় তল্লাশি চালানো হলেও বুধবার রাত পর্যন্ত তাঁর কোনও হদিস মেলেনি। |
ওই খনি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই মুকুন্দপুর। এ দিন সকালে উদ্ধারকাজ শুরুর সময় থেকেই গ্রামের বহু মানুষজন খনির সামনে জড়ো হন। দিনভরই বারবার সেখানে যাতায়াত করেছেন বাসিন্দারা। গ্রামের পরিবেশ ছিল থমথমে। পাঁচকড়িবাবুর বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী। প্রতিবেশীরা জানান, তাঁদের ছেলে বেঙ্গালুরুতে চাকরি করেন। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবার নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে বুধবার গ্রামে ফিরেছেন পাঁচকড়িবাবুর ছেলে বাপন।
এ দিন পাঁচকড়িবাবুর বাড়ির আশপাশে ছিল প্রতিবেশীদের ভিড়। পরিবারের সদস্যদের যাতে বিরক্ত না করা হয় সে জন্য বহিরাগত লোকজন দেখলে ওই বাড়িতে ঢুকতে নিষেধ করছিলেন তাঁরা। প্রতিবেশীরা জানান, পাঁচকড়িবাবুর ছেলে বাপন দাবি করেছেন, যে কোনও ভাবে তাঁর বাবাকে খুঁজে বের করতে হবে খনি কর্তৃপক্ষকে। কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তার তদন্ত করার দাবিও তুলেছেন তিনি।
পাঁচকড়িবাবুর প্রতিবেশী যুবক কৌশিক পাল বলেন, “পুরো ঘটনাটাই ধোঁয়াশাজনক।” তাঁর দাবি, “মঙ্গলবার সকালে খনির হাজিরাখাতায় অন্য সকলের নাম লেখা রয়েছে নীল কালিতে। অথচ, পাঁচকড়িরবাবুর নাম রয়েছে কালো কালিতে। বিষয়টি অস্বাভাবিক না হলেও রহস্যজনক। যে মোটরবাইকে চড়ে তিনি কাজে গিয়েছিলেন, সেটিও ডিকি খোলা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে।” কৌশিকের আরও বক্তব্য, “দু’দিন কেটে গেলেও কোনও খোঁজ মিলল না কেন, তা আশ্চর্যজনক। তাঁর সঙ্গীদের কথা মতো, তিনি খানিকটা অসুস্থ বোধ করছিলেন। তাই বসে পড়েন। যদি অসুস্থই বোধ করেন তবে সেই অবস্থায় এমন কোথায় চলে যাবেন যে তাঁর হদিস মিলবে না! এটাই আমাদের কাছে বিস্ময়কর ঠেকছে।” |
এই মোটরবাইকে কাজে গিয়েছিলেন পাঁচকড়িবাবু। |
মঙ্গলবার পাঁচকড়িবাবুর সঙ্গে খনিতে নেমেছিলেন সার্ভেয়র শ্যামল কর্মকার। তিনিও বলেন, “এমন ঘটনা কী ভাবে ঘটতে পারে, মাথায় ঢুকছে না।” তাঁদের বিরুদ্ধে নিখোঁজের পরিবারের তরফে তোলা অভিযোগে তিনি বিস্মিত বলেও দাবি করেছেন শ্যামলবাবু। পাঁচকড়িবাবুর পরিবারের লোকজন অবশ্য এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
নিখোঁজের পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীদের আশঙ্কা, খনিগর্ভে কোনও ভাবে বালি বা কয়লা চাপা পড়ে গিয়ে থাকতে পারেন পাঁচকড়িবাবু। সে দিকটি মাথায় রেখেও ইসিএলের তল্লাশি চালানো উচিত বলে দাবি তাঁদের। তল্লাশির ব্যাপারে খনি কর্তৃপক্ষের আরও তৎপর হওয়া উচিত বলেও মনে করছেন তাঁরা। তৃণমূলের অন্ডাল ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ কাঞ্চন মিত্র বলেন, “শুধু খনি কর্তৃপক্ষ নয়, এখন সকলেরই উচিত তল্লাশিতে সব রকম ভাবে সহায়তা করা। ইসিএলের উদ্ধারকারী দলে আরও লোক বাড়ানো উচিত।”
এ দিন মুকুন্দপুর গ্রামে যায় পুলিশ। ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান, সব রকম ভাবে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। |