বেপরোয়া ভাবে পণ্যবাহী ছোট গাড়ি চালানোর প্রতিবাদ করায় এক যুবককে খুনের অভিযোগ উঠেছে। পণ্যবাহী ছোট একটি গাড়ির চালকই ওই যুবককে রাস্তায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে শেষপর্যন্ত ধাক্কা দিয়ে একটি কালভার্টের উপরে ফেলে দেয়। তাতেই গুরুতর জখম হন রূপম গুহরায় (২৬) নামে ওই যুবক। পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাতে এই ঘটনার পরে মঙ্গলবার ডুয়ার্সের মেটেলি বাজারে অঘোষিত বন্ধও পালন করেন এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশ চালককে গ্রেফতার করেছে। |
মেটেলি থানায় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ। মঙ্গলবার। ছবি: সব্যসাচী ঘোষ। |
পুলিশ জানায়, রূপমবাবু মেটেলি বিডিও অফিসের অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে গাড়ির চালক বিজয় লোহার আত্মসমর্পণ করলে তাকে জনতার হাতে তুলে দেবার দাবিতেও থানায় বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে মেটেলি চৌপথী লাগোয়া বিএসএনএলের দফতরের পাশে নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রূপমবাবু ও তাঁর বাবা বাবলু গুহরায়। বাবলুবাবু বাড়ির সামনেই সাইকেলের একটি ছোট দোকান চালান। সেই দোকানের সামনে দিয়েই সামসিং যাওয়ার সময় ওই চালক পণ্যবাহী ছোট গাড়িটি ঘোরাতে চেষ্টা করেন। তখনই দোকানের মধ্যে গাড়ির ধাক্কা লাগে বলে অভিযোগ। রূপমবাবু তার প্রতিবাদ করেন।
অভিযোগ, ওই চালক এরপরে গাড়ি থেকে হাত বার করে রূপমবাবুর জামার কলার ধরে ফেলেন। তারপরে রূপমবাবুকে সেই অবস্থায় ধরে রেখেই তিনি গাড়ি চালিয়ে দেন। চলন্ত গাড়ির সঙ্গে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন রূপমবাবুকে। ছেলের ওই অবস্থা দেখে বাবলুবাবু গাড়ির পিছনে দৌড়তে থাকেন। কিছু দূরে নিয়ে গিয়ে গাড়ির চালক রূপমবাবুকে কালভার্টের উপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে পালায়। গুরুতর জখম অবস্থায় রূপমবাবুকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। রূপমবাবুর মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পরে এ দিন সকাল থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনার প্রতিবাদ শুরু করেন। অঘোষিত বন্ধ, থানা ঘেরাও শুরু হয়ে যায়। বাবলুবাবু থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বাসিন্দাদের চাপে পুলিশ মেটেলি ব্লকের সব পণ্যবাহী ছোট ভ্যানগুলিকে চালক সমেত মেটেলি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে আসার জন্য নির্দেশ দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, এর পরেই অভিযুক্ত বিজয় লোহার গাড়ি নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এর পরেই বেশ কিছুক্ষণ দোষীর কড়া শাস্তির দাবিতে থানায় বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। মেটেলির বিডিও মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ও রূপমবাবুর বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানান। মহুয়াদেবী বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। রূপম খুব ভাল, শান্ত, নম্র স্বভাবের ছেলে ছিল। কিছু দিন আগেই আমার অফিসে কাজে যোগ দিয়েছিল।” মালবাজারের এসডিপিও অরিন্দম সরকার বলেন, “খুনের মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত চলছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ভ্যানগুলি যেমন পণ্য বহন করে, তেমনই যাত্রী নিয়েও যাতায়াত করে। পাহাড়ের বেশ কিছু এলাকায় মাথা পিছু চড়া দামে ভাড়া নিয়ে যাত্রীবহন করে তারা। তবে সেক্ষেত্রে ভাড়ার কোনও নির্দিষ্ট হার নেই। স্থানীয় বাসিন্দা রাজু পাল বলেন, “একে তো ঠাসাঠাসি করে লোক তোলা হয় ওই ভ্যানগুলিতে। তার উপরে যার কাছ থেকে যেমন পারে ভাড়া চায়।”
সেই সঙ্গেই স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এই ভ্যানগুলি খুব জোরে চলাচল করে। তাতে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটলেও চালকেরা তাতে পাত্তা দেন না বলে অভিযোগ। চলতি মাসেই এই ধরনের ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে মালবাজারে। সে কারণেই এই ভ্যানচালকদের উপরে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ভ্যানগুলিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। |