দাবি আদায়ে ধর্মঘট বা অবরোধের পক্ষপাতী নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় নেতা-কর্মীদের এই মর্মেই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তা সত্ত্বেও তাঁর দলের সাংসদ সৌগত রায়ের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় চটকল মজদুর সঙ্ঘ (আরসিএমএস) ১২ ফেব্রুয়ারি চটকলে এক দিনের প্রতীক ধর্মঘটে যোগ দিচ্ছে। একই ভাবে দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ উপেক্ষা করে চটকল খোলার দাবিতে সোমবার টিটাগড়ে রেল অবরোধে সামিল হন আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি তথা তৃণমূলের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীরা।
এতে অবশ্য দোষের কিছু দেখছেন না ওই দুই তৃণমূল নেতা। সৌগতবাবু বলেন, “আমরা লাগাতার ধর্মঘটের বিরুদ্ধে। তাই এক দিনের প্রতীক ধর্মঘটে যোগ দিচ্ছি।” আর শোভনদেববাবু বলেন, “টিটাগড়ের চটকল-মালিক বহু দিন ধরে শ্রমিকদের পাওনাগণ্ডা মেটাচ্ছেন না। অনেক অনুনয়-বিনয় করেও সুরাহা না-মেলায় শ্রমিকেরা অবরোধে যোগ দেন।” মুখে এ কথা বললেও ওই চটকলে অচলাবস্থা সৃষ্টির জন্য দলেরই নেত্রী দোলা সেনের দিকে আঙুল তুলেছেন ওই বিধায়ক। তাঁর কথায়, “আমি আইএনটিটিইউসি-র জুট ফেডারেশনের সভাপতি। সুব্রত মুখোপাধ্যায় চেয়ারম্যান। আমাদের না-জানিয়ে দোলা সেন (তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী) কী করে সিটু এবং আইএনটিইউসি-কে সঙ্গে নিয়ে চটকল-মালিকের সঙ্গে চুক্তি করলেন? সেখানে আরও ১১টা শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। তারাও ওই চুক্তির ব্যাপারে কিছু জানে না।”
জবাবে দোলাদেবী বলেন, “শোভনদেববাবু ও সৌগতবাবু দলের সম্মাননীয় সদস্য। তাঁদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে হলে দলেই জানাব।” তবে তিনি যে ধর্মঘট-অবরোধের বিপক্ষে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন দোলাদেবী। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু আবার সোমবারের অবরোধের পিছনে বাম ও মাওবাদীদের একটি অংশের হাত দেখছেন। সরকারের বদনাম করার জন্যই এটা করা হয়েছে বলে এ দিন হলদিয়ায় এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেন তিনি।
ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (আইজেএমএ)-এর হিসেব, চটশিল্পে বছরে ৮৪৮০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এক দিনের ধর্মঘটে ক্ষতি প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। চটকল-মালিকদের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক সম্প্রতি চটের বস্তা বাদ দিয়ে কৃত্রিম তন্তুর বস্তাকে প্রাধান্য দেওয়ায় এই শিল্পের হাল এমনিতেই খারাপ। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী ধর্মঘট-অবরোধের পথ ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তাঁরই দলের নেতারা ধর্মঘটে যোগ দিচ্ছেন। এতে তাঁরা হতাশ। |