|
|
|
|
শিলাবতীর বিপজ্জনক সেতু ভেঙে মৃত্যু |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চন্দ্রকোনা |
কাঠ আর বাঁশ দিয়ে তৈরি সেতুটি বেশ কিছু দিন ধরেই বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল। ‘ভারী গাড়ি পারাপার নিষিদ্ধ’ বলে বোর্ডও ঝোলানো হয়েছিল। সোমবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ছোট মালবাহী গাড়িতে বীজতলা নিয়ে যাওয়ার সময় চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের মনোহরপুর-২ পঞ্চায়েতের হলাঘাঠে শীলাবতীর ওই সেতুটি ভেঙে পড়ে। নদীতে পড়ে মৃত্যু হয় একজনের। আহত হন চারজন। তাঁদের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম হলধর ভুঁইয়া (৫৫)। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আনন্দপুর থানার বড় তেঘরিয়া সংলগ্ন বিনজুড়িয়া গ্রামে। হলধরবাবুর স্ত্রী লক্ষ্মীদেবীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। ‘ভারী গাড়ি পারাপার নিষিদ্ধ’ লেখা থাকা সত্ত্বেও ওই সেতুতে মালবাহী গাড়ি নিয়ে ওঠার অভিযোগে চালকের বিরুদ্ধে চন্দ্রকোনা থানার পুলিশ মামলা শুরু করেছে। |
|
এই ভাবেই ভেঙেছে সেতু। |
কম সময়ে ঘাটাল থেকে মেদিনীপুর শহর যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হলাঘাটের সেতু। শিলাবতী নদীর উপর ওই সেতু পেরোলেই কেশপুর হয়ে খুব কম সময়ে ঘাটাল পৌঁছনো যায়। কাঠের সেতুটি দিয়ে চন্দ্রকোনা, কেশপুর ও ঘাটাল এই তিনটি ব্লকের কয়েক হাজার মানুষ রোজ যাতায়াত করেন। মোটর বাইক, মারুতি, ট্রেকারও যাতায়াত করত। তবে মাল বা লোক নামিয়ে। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গত বন্যায় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জল কমার পরে মাস খানেক আগে আকাশমণি কাঠ দিয়ে সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হয়। এখনও কাজ বাকি রয়েছে। রাখা আছে বাঁশ ও আর কাঠ। লম্বায় ২৪০ ফুট এবং ৬ ফুট চওড়া সেতুটি বন্যার পরে নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় শুধু হেঁটে সেতু পারাপার হচ্ছিল। প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পরে গত সপ্তাহ থেকে ছোট গাড়ি ও অ্যাম্বুল্যান্স চলাচল শুরু করে। কিন্তু অটো বা ট্রেকার চলাচল বন্ধই রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে পাঁচ জন যাত্রী এবং বীজতলা নিয়ে মালবাহী গাড়িটি সেতুতে ওঠায় তা ভেঙে পড়ে। যাত্রীরা নীচে নদীতে পড়ে যান। সোমবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ দুর্ঘটনার পর স্থানীয় কুলদহ, ডিঙাল, যাদবপুর, হলাঘাটের মতো সংলগ্ন গ্রামের মানুষজন এসে নদী থেকে আহতদের উদ্ধার করে। |
|
মেদিনীপুর মেডিক্যালে এক আহত। |
কেশপুর ও চন্দ্রকোনা থানা সূত্রের খবর, মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পথে হলধরবাবু মারা যান। বাকিদের ভর্তি করানো হয় মেডিক্যাল কলেজে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, আনন্দপুরের বিনজুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা হলধরবাবু ও তাঁর স্ত্রী মজুর খাটতে খাঘরাগেড়িয়া গ্রামের শেখ ফটিক ওরফে আইনাল ইসলামের বাড়িতে এসেছিলেন। সোমবার রাতে আইনাল ওই দম্পতিকে নিয়ে ওই গাড়িতে চন্দ্রকোনা থানার ডিঙালে বীজতলা কিনতে এসেছিলেন। ওঁরা তিন জন ছাড়া গাড়িতে ছিলেন চালক ও তাঁর এক সঙ্গী। রাতে সেতুটি বাঁশ দিয়ে ঘেরা ছিল। বাঁশ খুলে পারাপারের সময়ই বিপত্তি ঘটে। চালক ও তাঁর সঙ্গীর পরিচয় এখনও জানতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সেতুটি ব্লকের মনোহরপুর-২ পঞ্চায়েতের অধীনে থাকলেও প্রায় আট বছর ধরে স্থানীয় বাসিন্দা গোবিন্দ খাঁড়া তা দেখভাল করেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর পঞ্চায়েতকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে গোবিন্দবাবু ওই দায়িত্ব পেয়েছেন। দুর্ঘটনার পরে পাকা সেতুর পুরনো দাবি ফের উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান মহাদেব মল্লিক বলেন, “আমরা ক্ষমতায় আসার পরই পাকা সেতুর জন্য সংশ্লিষ্ট সব মহলে আর্জি জানিয়েছি।” যাদবপুরের কার্তিকচন্দ্র করণ, রাসবিহারী পাল, কুলদহের মানস দোলই, সঞ্জয় অধিকারী বলেন, “পাকা সেতু চেয়ে আমরা পাশাপাশি গোটা তিরিশেক গ্রামের হাজার খানেক বাসিন্দা সই করে একটি আবেদন জমা দিয়েছিলাম। তারপর মাটি পরীক্ষাও হয়। কিন্তু আর কাজ এগোয়নি।” চন্দ্রকোনা ১-র বিডিও সুরজিৎ ভড় বলেন, “সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাকা সেতুর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” একই বক্তব্য ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্ভু নায়েকের। |
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|