কড়া পাহারায় প্রায় নির্বিঘ্ন কলেজ নির্বাচন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কড়া পুলিশি পাহাড়ায় মোটামুটি নির্বিঘ্নেই শেষ হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কলেজ নির্বাচন। প্রত্যাশা মতোই জেলার প্রায় সব কলেজেই বজায় রইল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাপট। এই পরিস্থিতিতে মেদিনীপুর কমার্স কলেজ এবং সবং কলেজের ছাত্র সংসদ নিজেদের দখলে রাখাই চ্যালেঞ্জ ছিল ছাত্র পরিষদের কাছে। তাতে সসন্মানে উত্তীর্ণ হল সিপি।
এ বারও মেদিনীপুর কমার্স কলেজ এবং সবং কলেজের ছাত্র সংসদ একক ভাবে দখল করল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন। দুটি কলেজেই জোর ধাক্কা খেয়েছে টিএমসিপি। সবং কলেজের ৩১টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের প্রাপ্তি মাত্র একটি আসন। বাকি ৩০টিই সিপি’র দখলে। অন্য দিকে, মেদিনীপুর কমার্স কলেজের ৩০টি আসনের মধ্যে টিএমসিপি’র প্রাপ্তি ৯টি আসন। বাকি ২১টির মধ্যে ২০টি সিপি’র দখলে। একটিতে জিতেছে এসএফআই। |
|
মেদিনীপুর কমার্স কলেজের সামনে পুলিশি টহল।—নিজস্ব চিত্র। |
ভোটের ফল প্রকাশের পর স্বাভাবিক ভাবেই খুশি কংগ্রেস-শিবির। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “অনেক বাধা-প্রতিকূলতা ছিল। প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরির মতো প্রলোভনও ছিল। তাও ছাত্রছাত্রীরা আমাদের পাশে থেকেছেন। আমরা তৃপ্ত।” যদিও নির্বাচনের পরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মারধর, গালিগালাজের অভিযোগ তুলেছেন সবং ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রভাত মাইতি। তিনি বলেন, “গণনার পর থেকেই আমাদের পার্টি অফিসে এসে সিপির ছেলেরা গালিগালাজ করেছে। আমাদের দু’এক জনকে মারধরও করেছে।”
কেন এই দুই কলেজে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন দাগ কাটতে পারল না? প্রশ্নের সদুত্তর এড়িয়ে টিএমসিপি’র জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “সিপি সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছিল। তবে, আমাদের ফল খুব খারাপ হয়নি। আরও কিছু আসনে আমরা জিতব বলে আশা করেছিলাম। কেন প্রত্যাশিত ফল হল না, তা নিয়ে দলীয় ভাবে পর্যালোচনা হবে।” |
ভোটের নানা মুহূর্ত |
|
|
কমার্স কলেজে জেতার পর ছাত্র পরিষদের মিছিল। |
খড়্গপুর কলেজে ভোটের লাইন। |
|
তবে, সিপি’র দখলে থাকা এই দুই কলেজ বাদ দিলে সার্বিক ভাবে ছাত্রভোটে জয়জয়কার টিএমসিপি’রই। মেদিনীপুর কলেজ, হিজলি কলেজ, বেলদা কলেজ, মেদিনীপুর মহিলা কলেজ, খড়্গপুরের পিংলা ও দাঁতন ভট্টর কলেজে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখল টিএমসিপি। এ দিন ঝাড়গ্রাম মহকুমার বাকি ৫টি কলেজের ছাত্র সংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেছে টিএমসিপি। ফলাফল ঘোষণা হতেই ক্যাম্পাসে সবুজ আবিরের ছড়াছড়ি। হিজলি কলেজ আবার বিরোধী-শূন্য হয়েছে। ছাত্র সংসদের ২৩টি আসনের সবক’টি টিএমসিপি দখল করেছে।
মেদিনীপুর কলেজে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে কিছু আসনে লড়াই হয়েছিল। বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী পেয়েছে ৯টি আসন। অন্য দিকে, ডিএসও পেয়েছে ৪টি আসন। পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৪টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি কলেজে বিরোধী প্রার্থীই নেই। ফলে, সংসদের ক্ষমতায় টিএমসিপি’র আসা ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। বাকি যে ১১টি কলেজে বিরোধী-প্রার্থী রয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৫টি কলেজে টিএমসিপিকে লড়াইয়ের মধ্যে পড়তে হয়। বাকি ৬টি কলেজে নামমাত্র আসনে বিরোধী-প্রার্থী ছিল। |
|
|
খড়্গপুর কলেজ দখলের পর
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের উল্লাস |
মেদিনীপুর কলেজের সামনে
টিএমসিপির উল্লাস। |
|
অন্য দিকে, ফল প্রকাশে কেন দেরি হচ্ছে এই দাবি তুলে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা তপন দত্তের নেতৃত্বে শতাধিক তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সমর্থক পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে চাঁইপাট কলেজের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিশাল পুলিশ বাহিনী তাঁদের নিয়ন্ত্রণে আনে। এ দিন রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চাঁইপাট কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়নি। সূত্রের খবর, চাঁইপাট কলেজে ছাত্র সংসদের ১৫টি আসনের মধ্যে ১০টিতে এসএফআই জয়ী হয়েছ। টিএমসিপি পেয়েছে ৫টি আসন।
মঙ্গলবারের ছাত্রভোটে সকলের নজর ছিল মূলত চারটি কলেজের উপর। সিপি’র দখলে থাকা মেদিনীপুর কমার্স কলেজ এবং সবং কলেজ। অন্য দিকে, মেদিনীপুর কলেজ এবং বেলদা কলেজ। এই দুই কলেজে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই হয়। তবে, বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি। বেলদা কলেজের নির্বাচন নিয়ে এ দিন সকাল থেকে উত্তেজনা থাকলেও নির্বিঘ্নেই মিটেছে ভোট। বেলদা কলেজের ৩৫টি আসনের ৩৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল তৃণমূলেরই সূর্য অট্ট ও মিহির চন্দ গোষ্ঠী। |
|
|
ফল ঘোষণার অপেক্ষায় চাঁইপাট
কলেজের
সামনে এসএফআই সমর্থকরা। |
কমার্স কলেজে জেতার পর
ছাত্র পরিষদের মিছিল। |
|
এ নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে ওই এলাকায়। ২৬টি আসনে প্রার্থী দেয় ডিএসও। ফল প্রকাশ হতে দেখা যায়, ৩৫টি আসনের ২৯টি পেয়েছে মিহির চন্দ গোষ্ঠী। বাকি ৬টি আসনের ৫টি সূর্য অট্ট গোষ্ঠী ও একটি পেয়েছে ডিএসও। সন্ধ্যাবেলা মিহির চন্দ গোষ্ঠীর বিজয় মিছিল বেলদার সুভাষপল্লি হয়ে বাসস্ট্যন্ডের দিকে এগোলে তৃণমূলেরই অন্য একটি পার্টি অফিস থেকে ওই মিছিল লক্ষ্য করে ইঁট ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় আহত হন দুই পুলিশ কর্মী। পুলিশ পাল্টা লাঠি চার্জ করলে জখম হন সূর্য অট্ট অনুগামী সঞ্জয় রজক ও দিলীপ ভক্তা।
এ দিনের ফল প্রকাশের পর ডিএসও’র জেলা সম্পাদক মণিশঙ্কর পট্টনায়েক বলেন, “যে কয়েকটি কলেজে অনুকূল পরিবেশ ছিল, প্রচার করার সুযোগ ছিল, সেখানে আমরা কিছু আসনে জিতেছি। এ বার ছাত্রভোটে তো অধিকাংশ কলেজে সুষ্ঠু পরিবেশই ছিল না। পেশিশক্তির দাপট ছিল।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডা বলেন, “এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আমাদের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
কলেজ নির্বাচন ঘিরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই ছিল কড়া পুলিশি প্রহরা। চাঁইপাট কলেজ, মেদিনীপুর কলেজ, মেদিনীপুর কমার্স কলেজের সামনে পদস্থ পুলিশ অফিসারেরা দায়িত্ব ছিলেন। ফলে, বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটলেও বড় অশান্তির ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। |
ছবিগুলি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল, রামপ্রসাদ সাউ। |
|