হাসপাতাল চত্বর মুখ ঢেকেছে আবর্জনায়। কোথাও খসে পড়েছে চাঙড়ের আস্তরণ। হাসপাতালে নেই কোনও পাঁচিল। হাসপাতাল চত্বরে থাকা তিনটে পুকুরও সংস্কারের অভাবে বেহাল। বাইরে থেকে হাসপাতালটিকে দেখলে মনে হবে হানা বাড়ি। দীর্ঘ দিন ধরেই এই অবস্থা চলছে কাটোয়া পশু হাসপাতালে। মঙ্গলবার এই হাসপাতাল পরিদর্শন করতে এসে প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ দৃশ্যতই বিরক্ত হয়ে তাঁর দফতরের আধিকারিকদের প্রশ্ন করেন, “কাটোয়া শহরের শেষ প্রান্তে যে পশুদের জন্য একটি হাসপাতাল রয়েছে সেটি স্থানীয় মানুষ কি আদৌ জানেন?”
মঙ্গলবার দুপুরে স্বপনবাবু কাটোয়া পশু হাসপাতাল পরিদর্শন করতে যান। সেখানে গিয়ে হাসপাতালের দুরবস্থা দেখে তিনি প্রাণীবিকাশ দফতরের মুখ্য সচিব রাজীব কুমারকে হাসপাতাল থেকেই ফোন করে বলেন, “আপনারা এই পশু হাসপাতালের দিকে কেন নজর দেননি?” তবে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কী উত্তর এসেছে সেটা অবশ্য জানা যায়নি। |
শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাহেব বাগান এলাকায় ১০ একর জমির উপর এই পশু হাসপাতালটি অবস্থিত। আগে এই হাসপাতালটি চলত শহরের মাধবীতলা এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে। কয়েক বছর আগে সেখান থেকে সরিয়ে হাসপাতালটিকে শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রথম থেকেই এই পশু হাসপাতালটি রুগ্ণ অবস্থায় রয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে হাসপাতালের ভবন বা কর্মীদের আবাসন তৈরি হওয়ার ফলে তা প্রথম থেকেই বসবাসের অনুপযুক্ত। এই হাসপাতালে আগে গো-প্রজনন কেন্দ্র থাকলেও বর্তমানে সেই পদ্ধতি উঠে গিয়েছে। তার বদলে চালু হয়েছে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র।
হাসপাতালের কর্মীরা মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন, প্রতি দিনই হাসপাতালের জায়গা দখল করে নতুন বাড়ি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের ফাঁকা জায়গায় অনেকে প্রাতঃকৃত্য করতে আসেন। ফলে গোটা এলাকাতেই তৈরি হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। আবাসনের ভাঙা ঘর গুলোতে অসামাজিক কাজ হয় বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা। অভিযোগ মেনে নিয়ে স্বপনবাবু বলেন, পরিদর্শনের সময়ে তাঁর চোখেও অপ্রীতিকর দৃশ্য ধরা পড়েছে। এ দিন হাসপাতালে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এই হাসপাতালে কার্যত কোনও চিকিৎসা হয় না। বেশির ভাগ সময়েই পশুকে নিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়।
এই পশু হাসপাতালের চিকিৎসক গৌতম চট্টোপাধ্যায় এ দিন খাতা খুলে মন্ত্রীকে চিকিৎসা পরিষেবার বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলেও মন্ত্রী তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি বলেই সূত্রের খবর। পরিদর্শন শেষে স্বপনবাবু বলেন, “এখানে যে ঠিকঠাক চিকিৎসা হত না সেটা পরিদর্শন করেই বোঝা গিয়েছে। কাটোয়া পুরসভা অথবা বর্ধমান জেলা পরিষদের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার ও পুকুরের অবস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।” যত দ্রুত সম্ভব এই পশু হাসপাতালকে সবার সামনে তুলে ধরা হবে বলে দাবি করেছেন স্বপনবাবু। |