বাঘের ডেরায় শিল্প গড়ার ছাড়পত্র
রিবেশ ও আদিবাসী জনজাতির দৈনন্দিন জীবন ক্ষুণ্ণ করে শিল্প নয় আট বছর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নয়াদিল্লি।
কিন্তু, কেউ কথা রাখেনি।
লোকসভা নির্বাচনের দোরগোড়ায় এসে পরিবেশ ও বনমন্ত্রকের নামঞ্জুর করে দেওয়া ৭০টি শিল্পকে তড়িঘড়ি ছাড়পত্র দিল ‘ফরেস্ট অ্যাডভাইসারি কমিটি’ বা বন উপদেষ্টা পরিষদ। যে তালিকায় ওড়িশার জগৎসিংহপুরের বহু চর্চিত পস্কো স্টিল প্ল্যান্টও আছে ।
পস্কো নিয়ে জলঘোলাও কম হচ্ছে না। কিন্তু সেই হইচইয়ের আড়ালে দেশের অন্তত তিনটি পরিচিত ব্যাঘ্র ও হস্তী প্রকল্পের বুক ফুঁড়ে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) যে নকশা ছকা হয়েছে, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুলল ওই মন্ত্রকেরই অধীনে থাকা ‘ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি’ বা এনটিসিএ। বিনিয়োগের ছায়ায় মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং অরুণাচল প্রদেশের তিন-তিনটি অভয়ারণ্যের শিরে সংক্রান্তির আশঙ্কা করে এনটিসিএ-এর এক শীর্ষ কর্তার আক্ষেপ, “আট বছর আগে পরিবেশ বাঁচাতে ডাক দিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনের মুখে এখন ডিগবাজি খেয়ে বিদেশি বিনিয়োগই সরকারের লক্ষ্য। কেউ কথা রাখে না!” বিদেশি বিনিয়োগের প্রশ্নে, জল-জঙ্গল এবং আদিবাসী-আবাস উচ্ছেদের সম্ভাবনায় রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রস্তাবিত ওই শিল্পগুলিকে এত দিন ছাড়পত্র দেয়নি পরিবেশ মন্ত্রক। বিভিন্ন সময়ে কার্যত ‘না’ বলে দেওয়া সেই সব প্রকল্পই রাতারাতি ছাড়পত্র পাওয়ায় ক্ষুব্ধ পরিবেশবিদেরাও।
মেধা পটেকর যেমন এ ব্যাপারে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলেছেন, “ভোটের মুখে পরিবেশের তোয়াক্কা না করে তড়িঘড়ি ওই ছাড়পত্র দিয়ে সরকার এখন দেখাতে চাইছে তারা কতটা শিল্প-বান্ধব।” আর তারই খেসারত দিতে চলেছে মধ্যপ্রদেশের সঞ্জয়-ডুবরি ব্যাঘ্র প্রকল্প, ঝাড়খণ্ডের সিংভূম হস্তী প্রকল্প এবং অরুণাচলপ্রদেশের দাইয়ারিং অভয়ারণ্য।
মধ্যপ্রদেশের সিংরৌলি এলাকার ডোংরিতাল, পাটপাহাড়িয়া, মারকি-বারকা (পূর্ব ও পশ্চিম) ব্লক জুড়ে কয়লা উত্তোলনের ছাড়পত্র দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অথচ ২০০৫ সালে ওই এলাকায় প্রভূত খনিজ থাকা সত্ত্বেও ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় সেখানে শিল্প গড়ায় ‘না’ বলে দিয়েছিল বনমন্ত্রক। মন্ত্রী-আমলারা রায় দিয়েছিলেন--পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষুণ্ণ করে ওই এলাকায় শিল্প নয়।
স্তূপীকৃত লৌহ আকরিকের পাহাড়ের উপরেই ঝাড়খণ্ডের সারান্ডা বনাঞ্চল। যার অধিকাংশই সিংভূম হস্তী প্রকল্পের অধীনে। চার বছর আগে সেখানে লৌহ আকরিক খনন শুরু করতে চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। বন মন্ত্রকের প্রোজেক্ট এলিফ্যান্ট কর্তৃপক্ষ তিন সপ্তাহের মধ্যেই জানিয়ে দিয়েছিল, ‘হাতিদের বসতে শিল্প গড়া চলবে না।’
প্রোজেক্ট এলিফ্যান্টের পক্ষে এ এন প্রসাদের প্রশ্ন ছিল, হাতিদের ‘নিজস্ব রীতির’ জীবনযাপন নির্বিঘ্ন রাখতেই হস্তী প্রকল্প। তা কী করে ক্ষুণ্ণ হতে দেওয়া যায়?
বছর কয়েক আগে, অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং জেলায় সিয়ম নদীর উপরেই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে চেয়েছিল বিদ্যুৎমন্ত্রক। প্রতিশ্রুতি ছিল, গড়ে তোলা হবে ‘ট্যাটো-২’ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। উৎপাদন হবে অন্তত ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
পরিবেশ মন্ত্রক অবশ্য সমীক্ষা করে জানিয়েছিল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হলে বিঘ্নিত হবে সিয়ম নদীর মোহনা, ক্ষুণ্ণ হবে লাগোয়া দাইরিয়াং অভয়ারণ্যের বন্যপ্রাণ। পরিবেশ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রকের দীর্ঘ দড়ি টানাটানির পরে শেষ পর্যন্ত থমকেই গিয়েছিল সেই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।
পরিবেশ ক্ষুণ্ণ করে সেই সিংভূম, সিংরৌলি এবং সিয়ম নদীর বুকেই শিল্প কেন?
শিল্প মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের প্রশ্নে সরকার যে আগ্রহী তা বোঝাতেই এই প্রাথমিক ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।” যা দিয়েছে বন উপদেষ্টা পরিষদ। যে মন্ত্রকের দায়িত্বে বীরাপ্পান মইলি। কাকতালীয় ভাবে যিনি একই সঙ্গে শক্তিমন্ত্রকেরও পূর্ণ মন্ত্রী।
বীরাপ্পান মইলির আগে পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন জয়ন্তী নটরাজন। তাঁর আমলে নামঞ্জুর হয়ে যাওয়া ওই প্রকল্পগুলিকে দিনের আলো দেখাতেই কি জয়ন্তী-অপসারণ? জয়ন্তী বলেন, “পরিবেশ মন্ত্রককে এক তরফা ভাবে ছাড়পত্র দেওয়ার ‘অফিস-ঘর’ করে তোলা আমার লক্ষ্য ছিল না। বীরাপ্পান বিচক্ষণ মানুষ। নিশ্চয় ভেবচিন্তেই ছাড়পত্র দিয়েছেন।” আর, বীরাপ্পান মইলি প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “সরকার পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখেই শিল্প গড়তে চায়।”
সারান্ডা, সঞ্জয়-ডুবরি, দাইরিয়াং-এর বনাঞ্চল সে আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছে তো?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.