এটা আমার!
ভিড়ের মধ্যে সেঁধিয়ে থাকা যে চেহারাটা লালমোহন গাঙ্গুলির ঢঙে এগিয়ে এল, তার এক মুখ দাড়ি-গোঁফ। পরনে গেরুয়া ধুতি-পাঞ্জাবি। মাথায় একই রঙের হনুমান টুপি। কাঁধে গেরুয়া রঙেরই ব্যাগ। পায়ে বুট। এক হাতে লাঠি, অন্য হাতে কমণ্ডলু, তাতে শ্রীরামকৃষ্ণের একটি ছবি রাখা।
তাঁরই ‘সামান্য ব্যাগ’ তত ক্ষণে পুলিশ-প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার সকালের গুজব ছড়াতে ছড়াতে চারা থেকে পরিণত হয়েছে মহীরূহে! কেউ বলছে বোমা, কেউ বলছে আরডিএক্স, আবার কেউ বা গম্ভীর মুখে বিশেষজ্ঞের রায় দিচ্ছে, ওটায় নিশ্চয় বিস্ফোরক আছে। তারই মধ্যে খবর গিয়েছে পুলিশে। নবান্ন থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশের বম্ব স্কোয়াড। এক্কেবারে হুলুস্থূল কাণ্ড!
ঘটনাস্থল বেলুড়। বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষের অনুষ্ঠান চলছিল বেলুড় মঠে। তার মধ্যেই পরিত্যক্ত ওই ব্যাগকে ঘিরে বোমাতঙ্ক ছড়াল মঠের কাছেই বিবেকানন্দ রোডে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এ দিন সকাল থেকেই রাস্তার পাশের এক গাছতলায় পড়ে ছিল একটি ব্যাগ। দাবিদারহীন সেই ব্যাগ ঘিরেই ছড়ায় বোমাতঙ্ক। পুলিশে খবর দেওয়ায় তারা এবং বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসে। মেটাল ডিটেক্টর ব্যাগ স্পর্শ করতেই টি-টি করে বাজতে থাকলো।
আতঙ্কে ভিড়টা তত ক্ষণে সরে গিয়েছে নিরাপদ দূরত্বে। ব্যাগটিকে তখন ঘিরে রয়েছেন পুলিশ আর বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা। দু’পাশে আংটা লাগিয়ে সবে যন্ত্রের সাহায্যে ব্যাগটি টেনে খোলা হবে, আচমকা ঘটনাস্থলে সাধুর নাটকীয় প্রবেশ। ভিড় ঠেলে ‘ব্যাগটা আমার’ বলে এগিয়ে এলেন তিনি। রোজকার মতোই গাছতলায় ব্যাগ রেখে যিনি বেরিয়েছিলেন নিশ্চিন্তে। হতচকিত বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা সাধুকে জিগ্যেস করলেন, ব্যাগের চাবি কোথায়? পাঞ্জাবির পকেট হাতড়ে তিনি বললেন, “এই তো!” সেই চাবি দিয়ে ব্যাগ খুলতেই বেরোল একটি কড়াই, থালা আর জামাকাপড়!
পুলিশ জানাচ্ছে, বছর পঁয়ষট্টির ওই সাধুর নাম তারকনাথ গিরি। বাড়ি হিমাচল প্রদেশের শিমলায়। বেলুড় মঠে উৎসব উপলক্ষে তিনি গত কয়েক দিন আগেই এখানে এসেছেন। |