মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে টোল সংগ্রহের বুথগুলিতে সৈনিকদের তাণ্ডব চলিতেছে। এই সৈনিকরা অবশ্য আদি শিব সেনার সদস্য নন, প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরের ভাইপো রাজ ঠাকরের নবনির্মাণ সেনার সমর্থক। আদি সৈনিকদের জঙ্গিয়ানার খ্যাতি ছিল, কিন্তু নব সৈনিকরা জঙ্গিতর। তাঁহাদের যেহেতু সর্বদাই প্রমাণ করিতে হয় যে তাঁহারাই আসল শিব সেনা, তাই যে কোনও ‘আন্দোলন’কে তাঁহারা প্রথমাবধি মারমুখী করিয়া তোলেন। টোল আদায়কারীদের এই জঙ্গি সমর্থকদের আন্দোলনের শিকার হইতে হইয়াছে। তাঁহারা টোল-বুথে ব্যাপক ভাঙচুর চালাইতেছেন, এমনকী বুথের কর্মীদের শারীরিক ভাবে নিগ্রহ ও লাঞ্ছনা করিতেছেন। ভীত, সন্ত্রস্ত কর্মীরা বুথ ছাড়িয়া পলাতক। টোল আদায় বন্ধ। পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে রাস্তার ধর্নায় বসিয়া পড়ার অভিনব আন্দোলনে অবতীর্ণ হওয়া প্রসঙ্গে বলিয়াছিলেন তিনি নৈরাজ্যবাদী। নৈরাজ্য কাহাকে বলে এবং কেমন করিয়া কায়েম করিতে হয়, তাহা মহারাষ্ট্রের শিবসৈনিকদের কাছ হইতে কেজরিওয়াল শিখিতে পারেন। বস্তুত এই একটি ব্যাপারে তাঁহার আদমি পার্টি শিবসৈনিকদের তুলনায় নিতান্তই দুগ্ধপোষ্য শিশু। জঙ্গি হিন্দুত্বের অন্য সংগঠন বজরঙ দল কিংবা শ্রীরাম সেনা’র তরফেও অবশ্য অতীতে একই ধরনের তাণ্ডব চালানো হইয়াছে। মহারাষ্ট্রের পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ এই ঝটিকা বাহিনীকে রীতিমত সমীহ করিয়া চলে। বালাসাহেব ঠাকরের জীবত্কালেও তাহা বহু বার দেখা গিয়াছে। মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার রাজ ঠাকরে সেই ঐতিহ্যই বহাল রাখিয়াছেন। সরকার তথা প্রশাসনকে কী ভাবে অচল করিয়া রাজনৈতিক দলের অভিপ্রায়ের অধীন রাখিতে হয়, ক্ষমতায় না থাকিয়াও নবসৈনিকরা তাহা বারংবার করিয়া দেখাইয়াছেন। তাঁহারা যে এ-ভাবে নৈরাজ্যের সাধনা করিয়াও পার পাইয়া যান, তাহার কারণ রাষ্ট্র ও তাহার যাবতীয় যন্ত্র তাঁহাদের যথেচ্ছাচারের কাছে পণবন্দি থাকে। ইহা নিন্দনীয় এবং ন্যক্কারজনক। ইহাতে প্রমাণ হয়, মহারাষ্ট্রে আইনের শাসন কোনও নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের উপর নির্ভর করে না, সংবিধান-বহির্ভূত সংঘবদ্ধ বাহুবলীদের পেশিশক্তির উপর নির্ভর করে।
রাস্তায় কিছু দূর ছাড়া-ছাড়া টোল সংগ্রহের বন্দোবস্ত গাড়ি-চালক ও যাত্রীদের পক্ষে সমস্যার কারণ হইতেই পারে। টোল-এর পরিমাণও সর্বদা ন্যায্যতার সীমায় বাঁধা থাকে, এমনও নয়। যেমন, পশ্চিমবঙ্গে কোনও কোনও জাতীয় সড়কে যে বিপুল অঙ্কের টোল দিতে হয়, তাহার যৌক্তিকতা লইয়া প্রশ্ন উঠিতেই পারে। এই বাস্তব কিংবা কাল্পনিক অন্যায্যতার বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আন্দোলনে বিস্ফোরিত হইতেও পারে। কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ-আন্দোলন এক কথা, আর সেই আন্দোলনের নামে টোল-বুথে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুঠপাট চালানো কিংবা টোল-আদায়কারী কর্মচারীদের মারধর করা আর এক। মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার বাহুবলীরা স্পষ্টতই আইন নিজেদের হাতে তুলিয়া লওয়ার ঔদ্ধত্য ও অনাচার দেখাইয়াছেন। তাঁহাদের পত্রপাঠ গ্রেফতার করিয়া বিচারের সম্মুখীন করা উচিত। সেই সঙ্গে কেবল মহারাষ্ট্র নয়, দেশের সর্বত্রই জাতীয় বা প্রাদেশিক সড়কগুলি হইতে সংগৃহীত টোল-এর পরিমাণ পর্যালোচনা, পুনর্বিবেচনা ও প্রয়োজনে সংশোধন করা দরকার। |