|
|
|
|
ফের নিশানায় রাহুল, উল্লসিত বিজেপি
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২৮ জানুয়ারি |
দশ বছরে প্রথম সাক্ষাৎকারে যেখানে ব্যাট উঁচিয়ে ছক্কা মারার সুযোগ ছিল, সেখানেও রাহুল গাঁধী খেললেন রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে। তা নিয়ে হতাশ কংগ্রেসকে আজ ক্ষত মেরামতে নামতে হল। তেমনই উল্টো দিকে পোয়াবারো নরেন্দ্র মোদীর।
প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা না করুন, লোকসভা ভোটের আগে দলের প্রচারের নেতৃত্ব রাহুলের হাতেই সঁপে দিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। তার পরে প্রথম সাক্ষাৎকারে তাঁকে ফুলটস বল দেওয়া হলেও যেভাবে ঠুকে খেলেছেন রাহুল, তা নিয়ে গত কাল রাত থেকেই কংগ্রেস শিবিরে ক্ষোভ বাড়তে শুরু করে। বিশেষ করে মোদী ও শিখ-বিরোধী দাঙ্গা নিয়ে প্রশ্নের জবাব যথেষ্টই নড়বড়ে বলে মনে হয়েছে অনেক কংগ্রেস নেতার। নেতাদের মতে, প্রথম সাক্ষাৎকারের জন্য ইংরেজি চ্যানেলকে বেছে নেওয়া হয়েছিল মূলত আধুনিক মনস্ক মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত সমাজের কাছে বার্তা দিতে। সেখানে অনায়াসেই আক্রমণ করা যেত মোদীকে। রাহুল তা করেননি।
আজ প্রাণপণে সেই খামতি ঢাকার চেষ্টা করেছে কংগ্রেস। দলীয় মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বোঝানোর চেষ্টা করেন ওই সাক্ষাৎকারে রাহুলকে ঠিক প্রশ্ন করা হয়নি। শিখ দাঙ্গা নিয়ে রাহুল ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত কি না জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তা নিয়ে সনিয়া গাঁধী ও মনমোহন সিংহ বার বার ক্ষমা চেয়েছেন। তা-ই আর ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।
কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতার মতে, ক্ষমা চাওয়া ছাড়াও শিখদের জন্য আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ইউপিএ সরকার। তাঁদের প্রশ্ন, সেটা রাহুল বললেন না কেন? গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গা নিয়ে এখনও মোদী বা কোনও বিজেপি নেতা ক্ষমা চাননি। সেটাই বা রাহুল বললেন না কেন? ওই কংগ্রেস নেতাদের মতে, আরও অনেক আক্রমণাত্মক হওয়া উচিত ছিল রাহুলের। এখনও দেশে-বিদেশে কেউ রাজীব গাঁধীর বিরুদ্ধে শিখ-বিরোধী দাঙ্গা নিয়ে তর্জনী তোলেনি। অথচ মোদীকে এখনও ভিসা দিতে চায় না বিশ্বের বহু দেশ। সে কথাও রাহুল উল্লেখ করেননি।
খোদ কংগ্রেসই যখন তাদের দলের মুখ রাহুলকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, তখন বিজেপিকে নতুন করে আর কী কসরত করতে হবে? ঘরোয়া স্তরে অরুণ জেটলির মতো নেতারা তাই কিছুটা রসিকতার ছলেই বলতে শুরু করেছেন, “এ যেন নতুন গ্রিক ট্র্যাজেডিকরুণা ও সন্ত্রাস, দুটোরই উদ্রেক করেছেন রাহুল। করুণা তাঁর সমালোচকদের চোখে। আর সন্ত্রাস নিজেরই অনুগামীদের কাছে।” গোড়া থেকেই লোকসভা নির্বাচনটি মোদী বনাম রাহুলে পরিণত করতে চাইছিল বিজেপি। মাঝে আম আদমি পার্টির (আপ) উত্থানে সেই লক্ষ্যচ্যুত হতে বসেছিল। কিন্তু বিজেপি উচ্ছ্বসিত, কারণ আপ এখন দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। আর কেন্দ্রে শাসক দলের নতুন মুখ রাহুলকে ফের সরাসরি আক্রমণ করে মোদীর উচ্চতা তুলে ধরার সুযোগ ফিরে আসছে।
রাহুল বা কংগ্রেস ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি চায় না। তলে তলে সঙ্ঘ যা-ই করুক, প্রকাশ্যে উন্নয়নের রাজনীতি ছেড়ে সরতে চান না মোদীও। তা-ই রাহুলের জবাবে আরও খুশি বিজেপি। বরং তাদের মতে, শিখ-বিরোধী দাঙ্গাকে গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার মতোই প্রাসঙ্গিক করে দিয়েছেন রাহুল। এমনকী, কিছু কংগ্রেস নেতার জড়িত থাকার সম্ভাবনাও মেনে নিয়েছেন। আজই এনডিএ-র শরিক অকালি দলের নেতারা শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় রাজীব গাঁধীর মদতের অভিযোগ তুলে রে-রে করে ময়দানে নেমে পড়েছেন।
রাহুলের ব্যবস্থা পরিবর্তনের আদর্শ নিয়েও তাঁকে বিঁধতে চাইছে বিজেপি। গত কাল বার বার সমাজ ব্যবস্থার খোলনলচে বদলের কথা বলেছেন রাহুল। বিজেপি-র মতে, স্বাধীনতা থেকে সিংহভাগ সময় রাজত্ব করেছে কংগ্রেস। গত ১০ বছর ধরে সক্রিয় রয়েছেন রাহুল নিজে। বিজেপি নেতাদের প্রশ্ন, এখন সমাজ পরিবর্তনের জিগির তুললেও ইউপিএ জমানায় দুর্নীতি-মূল্যবৃদ্ধি রুখতে কী করেছিলেন রাহুল? দলীয় মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “যে রাহুল গ্যাসের সিলিন্ডারের কোটা বাড়ানোর কথা বললে গোটা সরকার নড়েচড়ে বসে, তাঁকে কে দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে কে নিষেধ করেছিল?” তাঁর কথায়, “সমাজ ব্যবস্থা বদলের কথা বললেও সিএজি, পিএসি, জেপিসির মতো সংস্থাকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে তো এই কংগ্রেসই।”
প্রথম সাক্ষাৎকারে হতাশ কংগ্রেস নেতৃত্ব এখন চাইছেন, রাহুল এ বারে ধারাবাহিক ভাবে জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিন।
চেষ্টা করুন গত কালের ভুলভ্রান্তি শুধরে নেওয়ার।
|
পুরনো খবর: মোদী প্রসঙ্গ এড়ালেন রাহুল, প্রশ্ন কংগ্রেসেই |
|
|
|
|
|