বছর খানেক আগে শহরের প্রাতর্ভ্রমণকারী মহিলাদের কাছে ত্রাস হয়ে উঠেছিল ছিনতাইকারীরা। মোটরবাইক নিয়ে হার, দুল ছিনিয়ে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়া প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে উঠেছিল শহরে। পরে ওই দুষ্কৃতীদের দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ধরা হয়েছে বলে দাবি করেছিল পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে ফের একই কায়দায় জেমস লং সরণি সংলগ্ন দাসপাড়া এলাকায় ছিনতাই করল দুই দুষ্কৃতী। তবে এ বার সাতসকালে নয়। ঘটনাটি ঘটেছে বেলা ১০টা নাগাদ।
পুলিশ জানায়, দাসপাড়ার বাসিন্দা শম্পা সমাদ্দার প্রতি দিনের মতো এ দিনও মেয়েকে কলেজ যাওয়ার জন্য বাসে তুলতে বেরোন। শম্পাদেবী বলেন, “পাড়ার গলির মুখে আসতেই একটি মোটরবাইক হঠাৎ আমার কাছে চলে আসে। বাইকে দু’জন ছিল। এক জন আচমকা আমার গলার হারে টান মারে।” শম্পাদেবী জানান, হারটি গলায় ছিঁড়ে যেতেই তিনি এক হাত দিয়ে সেটি চেপে ধরেন। হারের একটি অংশ তাঁর হাতে রয়ে যায়। বেশির ভাগটি নিয়ে যায় ছিনতাইকারী। ওই মহিলা বলেন, “আমরা চিৎকার করতেই ওই ছিনতাইকারী বন্দুক বার করে দু’টি গুলি চালিয়ে বাইক নিয়ে চলে যায়।”
শম্পাদেবীর দাবি, ছিনতাইকারীদের বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। এক জনের মুখ চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল। আর এক জনের গায়ে ছিল লালচে জ্যাকেট। কারও মাথায় হেলমেট ছিল না।
দিনের বেলা পাড়ার মধ্যে এক মহিলার আর্ত চিৎকার এবং গুলির আওয়াজে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। শম্পাদেবীর এক পড়শি সুপ্রিয়া মুখোটি বলেন, “পাড়ার মধ্যে এই রকম কোনও দিন ঘটেনি। আমরা খুব আতঙ্কিত।” পড়শিদের অভিযোগ, পাড়ার একটি ছেলে ছিনতাইকারীদের সামনে পড়ে যায়। ছিনতাইকারীরা বন্দুক দেখিয়ে তাঁকে সরে যেতে বলে। শম্পাদেবীর আর এক পড়শি সুহাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পাড়ার রাস্তায় গুলির খোল পড়েছিল। পুলিশ সেই খোল উদ্ধার করেছে।”
২০১২-র এপ্রিলে কসবায় ছিনতাইকারীদের গুলিতে জখম হয়েছিলেন এক মহিলা। ওই বছরেই সেপ্টেম্বরে যাদবপুর সেন্ট্রাল রোডে দুষ্কৃতীরা ছিনতাই করে গুলি চালায়। কিছু দিন পরে ঢাকুরিয়াতেও ছিনতাইকারীরা তিন রাউন্ড গুলি চালায়। পরপর প্রাতভ্রর্মণকারীদের গয়না ছিনতাইয়ের অভিযোগও ওঠে। পুলিশ তদন্তে নেমে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি ছিনতাইকারী দলকে গ্রেফতার করে। তারাই কি ফের এই কাণ্ড করেছে? পুলিশ জানায়, ওই দলটি এখনও জেলে রয়েছে।
শম্পাদেবীর অভিযোগের উপরে ভিত্তি করে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। তাঁর বর্ণনা শুনে ছিনতাইকারীদের স্কেচ আঁকিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার লালবাজারে পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “নতুন কোনও চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে কি না, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” |