বইমেলার উদ্বোধনী সুরটিও বেঁধে দিলেন তিনিই। ৩৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনে প্রথামতো আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল থিম কান্ট্রি পেরুর সাহিত্যব্যক্তিত্বদের। এসেছিলেন মাত্র এক জনই, ফ্রান্সেস্কা ডেনেগ্রি। কিন্তু সে তো কেবল প্রথা। বইমেলার সুর উদ্বোধনের দিনেই বাঁধা হয়ে গেল একটিই তারে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেটা যে হবে, বোঝা গিয়েছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একেবারে শুরুতেই। মঙ্গলবার মিলন মেলা প্রাঙ্গণে এসবিআই অডিটোরিয়ামে ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে চারটেয় অনুষ্ঠান শুরু হল। বলতে উঠলেন উদ্যোক্তা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশুকুমার দে। তাঁর বক্তৃতায়, স্বাভাবিক ভাবেই, সিংহভাগ জুড়ে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই। প্রশাসক মুখ্যমন্ত্রী, ‘উন্নয়নের কাণ্ডারী’ মুখ্যমন্ত্রী এবং লেখক মুখ্যমন্ত্রী। সুধাংশুবাবু বললেন, “তিনি এক দিকে দক্ষ প্রশাসক, উন্নয়নের জোয়ার এনেছেন বাংলায়। আর এক দিকে এত ব্যস্ততার মধ্যেও লিখে চলেছেন অক্লান্ত ভাবে।” উদ্বোধনের মঞ্চেই আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে মমতার তিনটি বই, দু’খণ্ডে ‘সেরা মমতা’, ‘কথায় কথায়’ আর ‘পথের সাথী’। মমতা নিজেই জানান, তিন দিনের মধ্যে বেরিয়ে যাবে আর একটি, ‘সোজা সাপটা’। |
কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সঙ্গে বিশিষ্টজনেরা। মঙ্গলবার, মিলন মেলা প্রাঙ্গণে। —নিজস্ব চিত্র। |
বস্তুত মমতার উপস্থিতি এ দিন ছাপিয়ে গিয়েছিল আর সব কিছু। পেরুর সংস্কৃতিমন্ত্রী প্যাট্রিসিয়া বালবুয়েনা প্যালাসিওসের আসার কথা থাকলেও সে দেশের কিছু সমস্যার কারণে তিনি এবং সাহিত্যিক রডলফো ইনস্ট্রোজা ক্লসেনও আসতে পারেননি। সে কথা ঘোষণাও করা হয়। আবার তা ‘ভুলে’ গিয়েই প্যাট্রিসিয়াকে আসার জন্য ধন্যবাদও জানানো হয় সভাপতির ভাষণে। আর দৃশ্যতই আবেগমথিত সেই অনুষ্ঠানে বলতে উঠে মমতা দুর্গাপুজো, ঈদের সঙ্গে তুলনা করেন এই বই-উৎসবের। তিনি বলেন, “আজকাল কম্পিউটার, ইন্টারনেটে বই পড়ার বেশ চল হয়েছে। কিন্তু আমি আমার কথা বলি, বই হাতে নিয়ে পড়ার আনন্দটাই আলাদা। যতই টেলিভিশনে সিনেমা দেখা যাক না কেন, হলে যে যাওয়ার সে কিন্তু যাবেই। তেমনি বই যে পড়ার সে পড়বেই। অনেকে হয়তো সব বই কিনতে পারেন না। অনেক দাম। কিন্তু বইমেলায় সে এসে বইগুলোয় চোখ এক বার বোলাবেই।” বইমেলার বিশ্বজনীনতা নিয়ে প্রারম্ভিক ভাষণে লেখক শংকর আগেই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’-এর কথা। বক্তৃতার পরে হাতুড়ির ঘায়ে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। এক ঘা নয়, গুনে গুনে ৩৮ ঘা।
৩৮তম বইমেলা যে! |