এখন থেকে স্কুলেই ক্যারাটে, জুডো, বক্সিং, কিকবক্সিং শিখতে পারবে ছাত্রীরা। বর্ধমান শহর ও লাগোয়া ২৫টি স্কুলে এ রকম প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানালেন জেলা শারীরশিক্ষা বিভাগের আধিকারিক গৌরাঙ্গ বিশ্বাস।
গৌরাঙ্গবাবু বলেন, “২০ জানুয়ারি বর্ধমান টাউন স্কুলে একটি প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছিল। সেখানে ঠিক হয়, ২৫টি স্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উৎসাহী ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ জন্য কল্যাণী থেকে এক জন প্রশিক্ষককে আনা হবে।” কবে থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হবে, তা অবশ্য এখনও ঠিক হয়নি।
শুধু ছাত্রীরা নয়, রাস্তায় বেরিয়ে আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার উপায় কী, নানা বয়সের মহিলাদের তা বোঝাতে রায়নার মাধবডিহি ব্লক অফিসে জেলা পুলিশের উদ্যোগে একটি সচেতনতা শিবির হল মঙ্গলবার। ছিলেন পঞ্চায়েতের মহিলা সদস্য, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য, আশা প্রকল্পের কর্মী, শিক্ষিকা-সহ গ্রামের মহিলারা। ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি রুখতে কী আইনি পদক্ষেপ প্রয়োজন, তা বোঝানো হয় তাঁদের। বিপদে পড়লে ৯৭৭৫২৭৪৩৮৮ নম্বরে ফোন করলে সুরাহা মিলবে বলে জানায় পুলিশ। শিবিরে উপস্থিত মহিলাদের আরও জানানো হয়, গ্রামে নারী নির্যাতন ঠেকাতে বা বাসে-ট্রেনে শ্লীলতাহানি রুখতে কী করা উচিত। তাঁদের হেল্পলাইন বা স্থানীয় থানায় ফোন করতে বলা হচ্ছে। কোথায় কোথায় পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে তার খোঁজ রাখার কথাও জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি রুখতে সরাসরি অফিসের আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে বিডিও বা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে। |
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “মহিলাদের বোঝানো হচ্ছে, তাঁরা আইনের কী কী সুবিধা পেতে পারেন। তাঁদের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের সাজার বহর কতটা, তা-ও জানানো হচ্ছে। আমাদের হেল্পলাইনের নম্বরে তো শুধু বর্ধমান নয়, বীরভূম, বাঁকুড়া, হুগলি থেকেও ফোন আসছে। আমরা তাঁদের কথা সংশ্লিষ্ট জেলায় জানিয়ে দিচ্ছি।”
গত বছর জেলার গ্রামীণ এলাকায় ৪৩টি ধর্ষণের অভিযোগ হয়েছে। দু’টি গনধর্ষণের অভিযোগ হয়েছে। এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পরে খুনের অভিযোগ রয়েছে। শ্লীলতাহানি ও ইভটিজিংয়ের অভিযোগ রয়েছে ৯টি। নানা বয়সের ৬২ জন মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। গত বছর জেলা পুলিশের বিভিন্ন থানায় বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে প্রায় সাড়ে ছ’শোটি। বধূহত্যার মামলা হয়েছে ৩৭টি। পণের জন্য খুনের অভিযোগ উঠেছে ২৩টি ক্ষেত্রে। বর্ধমানের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ বলেন, “এই শিবিরে যে মহিলারা ছিলেন, তাঁরা এই আলোচনার বিষয়ে অন্যদের জানালে সমস্যা মিটবে অনেকটাই।” রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিম বলেন, “বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর এলাকায় মাঝেমধ্যেই শ্লীলতাহানি বা মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের খবর আসছে। সে সব রুখতে মহিলাদের আগাম সচেতন হওয়া দরকার। তাই আমরা পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে এই শিবিরের আয়োজন করেছি।”
তবে শুধু আলোচনার মাধ্যমে ধর্ষণ বা ইভটিজিং রোখা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন এসডিপিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। তাঁদের মতে, এই ধরনের হামলা ঠেকাতে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকাঠামো তাঁদের হাতে নেই। তাই আপাতত সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। |